আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৬ জুন ২০১৮, শনিবার |

kidarkar

৭০ বছর হাওয়া খেয়ে বেঁচে আছেন তিনি!

শেয়ারবাজার ডেস্ক: কপালে লাল টিপ। পরনেও লাল কাপড়। মুখ ভর্তি বড় বড় দাড়িগোঁফ। নাকে, কানে, গলায় জাঙ্ক জুয়েলারিও পরেন তিনি। দেশ-বিদেশের তার অসংখ্য ভক্ত রয়েছে। যে কোনো সমস্যায় পড়লে নাকি এই পাওহারি বাবা তার সমাধান করে দেন। পাওহারির অর্থ পবন-আহারি, অর্থাৎ যিনি হাওয়া খেয়েই বেঁচে থাকেন।

ভারতের গুজরাটের মেহসানায় চারোদ বা চারাদা গ্রামের বাসিন্দা এই যোগীর আসল নাম প্রহ্লাদ জানী।

পাওহারি বাবার দাবি, তিনি ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কিছু না খেয়েই বেঁচে রয়েছেন। ১৮ বছর বয়সেই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন, জীবনটা অন্য রকমভাবে কাটাবেন। তখনই শুরু হয় যোগাসন ও বায়ুসাধনা।

আগেও হইচই হয়েছে এই বাবাকে ঘিরে। এপিজে আবদুল কালাম রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালীন ২০১০ সালে দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা (ডিআরডিও) ও কেন্দ্রীয় সরকারি গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা টানা ১৫ দিন ধরে নজরদারি চালিয়েছিলেন প্রহ্লাদের ওপর।

এমআরআই, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, এক্স-রে অনেক কিছু করা হয়েছে। সূর্যের আলোয় টানা বসিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে তার শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন। তার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে মাপা হয়েছে লেপটিনের পরিমাণ। কারণ এই মাস্টার হরমোন লেপটিনই নিয়ন্ত্রণ করে দেহের ওজন। দেখার চেষ্টা হয়েছিল, এই লেপটিনের কোনো রকম পরিবতর্ন হচ্ছে কিনা প্রহ্লাদের শরীরে। যাকে বলে ‘এক্সট্রিম অ্যাডপটেশন’। কিন্তু সব মিলিয়ে রহস্যভেদ হয়নি।

কিন্তু এটা কি আদৌ সম্ভব? শুধু হাওয়া খেয়ে বেঁচে থাকা! চিকিৎসা বা জীববিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত একটা বড় অংশই কিন্তু একবাক্যে উড়িয়ে দিচ্ছেন হাওয়া খেয়ে বেঁচে থাকার দাবি।

যুক্তরাষ্ট্রের হেনরিফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পারিজাত সেন বলেন, এটা একেবারে ভাঁওতাবাজি। বাঁচতে গেলে সামান্য কিছু হলেও খেতে হবে। শরীরের সিস্টেম কিছুদিন পরই আর সাপোর্ট করবে না। এই পাওহারি বাবা স্রেফ গল্প।

অন্যদিকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের শারীরতত্ত্ব (অ্যানাটমি) বিভাগের স্পেশালিস্ট মেডিকেল অফিসার চিরঞ্জিৎ সামন্তর কথায়, এই ধরনের ঘটনার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে ফরেনসিক মেডিসিনে সাসপেনডেড অ্যানিমেশন বলে একটা শব্দ রয়েছে। কোনো মানুষের মৌল বিপাক ক্রিয়া অর্থাৎ বিএমআরএর হার খুব কমিয়ে রেখে একেবারে আলোবাতাসহীন কোনো জায়গায় থাকলে তিনি বেঁচে থাকতে পারেন কি না এ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু ৭০ বছর ধরে না খেয়ে বেঁচে থাকা? অসম্ভব!

প্রহ্লাদ জানীর প্রসঙ্গে শ্রীরামপুরের ওয়ালশ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিয়াস সামন্ত বলেন, যোগী বাবা একেবারেই কিছু খান না হতেই পারে না। এসব একেবারে ভুল। বেঁচে থাকতে গেলে তো এনার্জি সোর্স চাই।

তার কথায়, সাসপেনডেড অ্যানিমেশনেও অসম্ভব এটি। দীর্ঘ দিন না খেয়ে থাকলে ত্বক, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয় সর্বত্র প্রভাব পড়বে। ডিহাইড্রেশন হবে। দেহের বিভিন্ন অংশে জল জমে ফুলেও উঠতে পারে। চলাফেরার ক্ষমতা তো থাকবেই না।’

তবে, যতই বিতর্ক থাক এহেন বাবার আশ্রমে কিন্তু বিশিষ্টজনেরা প্রায়ই আসেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও পাওহারির বাবার আশ্রমে গিয়েছেন আশীর্বাদ নিতে। গিয়েছেন বা যাতায়াত করেন আরো অনেক রাজনীতিবিদ বা প্রভাবশালী ব্যক্তি।

রামকৃষ্ণ মিশনের এক চিকিৎসক-মহারাজকে পাওহারি বাবার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সাধারণ জ্ঞানে মনে হয় এটা অসম্ভব। একজন খাবার না খেয়ে কী করে বেঁচে থাকবেন? বিজ্ঞানেও সে কথা কখনো পড়িনি।

তবে গাজিয়াবাদে ‘পবন-আহারি’ বাবা নামে একজনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন স্বামীজি (স্বামী বিবেকানন্দ), তিনি নাকি বেশ কিছু দিন কিছু না খেয়ে শুধু যোগাসন করেই কাটিয়ে দিতে পারতেন।

এত কিছু বিতর্কের পরেও প্রহ্লাদ জানীর ভক্তের সংখ্যা কিন্তু বাড়ছে। ইনি ‘মাতাজি’ নামেও পরিচিত। এমন এক ভক্ত সংবাদসংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘মাতাজি’ বাবার সম্পর্কে বহুদিন শোনার পরই উত্তরপ্রদেশের চিত্রকূট থেকে সোজা গুজরাতের মেহসানায় এসেছেন।

সমস্যা সমাধানের জন্য বাবা কোনো টাকাপয়সা নেন না। ৮৮ বছর বয়সে সারা বিশ্বের যুক্তিবাদী মানুষকে তুর্কি নাচন নাচাচ্ছেন মাতাজি প্রহ্লাদ জানী। বলছেন, ভালবাসা আর মা অম্বার কাছে প্রার্থনা; বেঁচে থাকতে গেলে নাকি মানুষের আর কিছুরই প্রয়োজন নেই!

শেয়ারবাজারনিউজ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.