আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২১ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

গরমে ভাইরাস জ্বর মোকাবেলায় যা করবেন!

শেয়ারবাজার ডেস্ক: প্রকৃতি এখনও রূক্ষ। খানিক বিরতি দিয়ে বৃষ্টি হলেও গরম কমেনি। বেশ কিছুদিন ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে তাপমাত্রা বেড়েছে। গ্রীষ্মের দাবদাহে অন্যান্য রোগের সঙ্গে শিশুরা ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত, ঋতু পরিবর্তনের সময় এ জ্বর হয়ে থাকে। আর্দ্র আবহাওয়ায় এর প্রকোপ বাড়ে।

সাধারণভাবে ভাইরাস জ্বর বলতে ফ্লুকেই বোঝায়। এর সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাইরাস জ্বর, হিটস্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগ। এ জন্য প্রধানত দায়ী ইনফ্লুয়েঞ্জা ‘টাইপ বি’ এবং ‘টাইপ এ’-এর দুটো ভাইরাস। রোজ হাজার-হাজার মানুষ গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভিড় করছেন। আক্রান্তদের কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।

ভাইরাস জ্বর:

ভাইরাস জ্বর একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। ডেঙ্গু, জন্ডিসসহ নানা কারণে ভাইরাস জ্বর হতে পারে। ভাইরাসজড়িত কারণে মানুষ ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত। আবহাওয়া পরিবর্তন ও প্রচন্ড গরমে এর প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ:

ভাইরাস আক্রমণের দুই থেকে সাত দিন পর জ্বর হয়। শীত শীত ভাব, মাথাব্যথা, শরীর ও গিরায় ব্যথা, অরুচি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, চুলকানি, কাশি, অস্থিরতা ও ঘুম কম হতে পারে। অনেকের পেটের সমস্যা, বমি ও ডায়রিয়া হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ভাইরাসের সংক্রমণে পেটব্যথাও হতে পারে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস অনবরত চরিত্র বদলায়, তাই উল্লিখিত লক্ষণগুলোর প্রতিটি সব রোগীর মধ্যে না-ও থাকতে পারে। আবার একেক রোগীর ক্ষেত্রে ভাইরাসটির তীব্রতাও একেক রকম হতে পারে। কারও হয়তো তিন দিনেই জ্বর ভালো হয়ে গেল, কারও আবার ৭ থেকে ১৪ দিনও লাগতে পারে। ভাইরাস জ্বর বাতাসের মাধ্যমে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি থেকে ছড়ায়। অনেকের ক্ষেত্রে ঠান্ডা লেগে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর হয়। তাই এ সময় সতর্ক থাকাই উচিত।

ভাইরাস জ্বর প্রতিকারে করণীয়:

ভাইরাস জ্বর সাধারণত তেমন কোনো ভয়াবহ রোগ নয়। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেরও প্রয়োজন হয় না। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খেলেই হয়। তবে প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং সেই সঙ্গে নিতে হবে বিশ্রাম। ভাইরাস জ্বর হলে খাবারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

অনেকে মনে করেন, ভাইরাস জ্বর হলে গোসল করা যাবে না। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। গোসল করতে বাধা নেই। খুব ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে শরীর মুছে দেওয়া ভালো। দরজা, জানালা ও ফ্যান বন্ধ করে ঘরকে গুমোট করে রাখবেন না। জানালা খুলে হালকা গতিতে ফ্যান ছেড়ে দেওয়া ভালো। সাধারণত কয়েক দিনেই ভাইরাস জ্বর ভালো হয়ে গেলেও এর ফলে শরীরে যে ক্লান্তি ও অবসাদ আসে, তা দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

খাবারের মধ্যে ভিটামিন সি ও জিঙ্কযুক্ত খাবার প্রাধান্য দিতে হবে। সাবধানে চলাফেলা করতে হবে। গরম এড়িয়ে চলতে হবে। পরিশ্রমের কারণে শরীরে ঘাম দেখা দিলে অবশ্যই পরিস্কার করতে হবে। যারা কর্মসংস্থানের কারণে অধিকাংশ সময় অফিসের বাহিরে থাকতে হয় তারা অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করবে।

পোষাক হতে হবে অবশ্যই আরামদায়ক ও ঢিলেঢলা। যাতে খুব সহজে শরীরের ঘাম বের হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা শ্রমিক, বাচ্চা এবং বয়স্কদের বাড়তি সর্তক থাকতে হবে। এছাড়া রাস্তার খোলা খাবার পরিত্যাগ করে হবে সঙ্গে সঙ্গে সম্ভব হলে বাড়িতে তৈরি খাবার গ্রহণ করতে হবে। তবে যারা ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হবে তাদের অবশ্যই কিছুক্ষণ পর পর শরীর পাতলা গামছা বা কাপড় দিয়ে স্পঞ্জ করতে হবে ও মাথায় পানি দিতে হবে। শরীর গরম হলেই থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মেপে ওষুধ খেতে হবে। জ্বর আক্রান্ত স্থায়িত্বকাল ৪-৫ দিন। তবে জ্বরের তীব্রতা বাড়লে অবশ্যই ডাক্তারের পরার্মশ নিতে হবে।

এছাড়া ভাইরাস জ্বর হলে রোগীকে তরল জাতীয় খাবার যেমন, স্যুপ, ফলের শরবত, স্যালাইন, লেবুর শরবত, ডাবের পানি খেতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর পানি পান করতে হবে। খাবারের তালিকায় মৌসুমী ফলও খুবই উপকারী। যেমন- আনরস, আম কলা, খোসাযুক্ত ফলা খাদ্য তালিকায় রাখা ভাল। রোগীকে সব সময় মশারির নিচে রাখতে হবে। গলা ব্যথা থাকলে কুসুম গরম পানি খেতে হবে।

লেখক: ডা. আবু সাঈদ, শিশু বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

শেয়ারবাজারনিউজ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.