আড়াই কোটি ডলারে লাদেনের তথ্য কিনেছিল আমেরিকা
শেয়ারবাজার ডেস্ক: সাবেক আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন-লাদেনকে হত্যার অভিযানের বিষয়ে ‘নির্জলা মিথ্যা’ বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। জঙ্গিবাদ নির্মুলে নিজের প্রশাসনের ভূমিকাকে বড় দেখাতে এবং বিন লাদেনবিরোধী অভিযানের কৃতিত্ব নেয়ার জন্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ভূমিকার কথা চেপে গিয়েছিলেন তিনি। আড়াই কোটি ডলারে ওসামা বিন লাদেনের অবস্থানের খবর জেনেছিলেন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটবাদে গোপন মার্কিন অভিযানে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন। পরবর্তীতে পাক প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে এ অভিযান চালিয়েছে আমেরিকা।
পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক সেইমোর হার্শ এক নিবন্ধে এ দাবি করেছেন। লন্ডন বুক রিভিউতে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিন লাদেনের লাশ সাগরে ফেলে দেয়া হয়নি বরং তাকে আফগানিস্তানে কবর দেয়া হয়েছে। আমেরিকা ও পাকিস্তানের সাবেক গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে এ সব তথ্য দিয়েছেন হার্শ।
হার্শ লিখেছেন, অ্যাবোটাবাদের বাড়িতে বহু বছর ধরেই বিন লাদেনকে আটকে রেখেছিল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। ২০১০ সালে পাকিস্তানের একজন পদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রথম বিন লাদেনের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ওসামার মাথার দাম ওয়াশিংটন আড়াই কোটি ডলার ঘোষণা করেছিল। এ অর্থের লোভেই ওসামার অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য ফাঁস করে দেন ওই কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করছেন এবং সিআইএ’র উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন বলে জানান হার্শ।
হার্শ বলেন, বিল লাদেনকে খুঁজে বের করা করার জন্য কথিত টিকাদান কর্মসূচিও চালানো হয়নি। বিন লাদেনবিরোধী অভিযানের পর টিকাদানের গল্প সাজানো হয়েছে। কথিত বার্তাবাহককে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করে লাদেনের অবস্থান শনাক্ত করা গেছে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা যে দাবি করেছেন তাকেও মিথ্যা ও বানোয়াট বলেছেন হার্শ।
কথিত অভিযান চালিয়ে বিন লাদেনকে হত্যার বিষয়ে পাক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন শীর্ষস্থানীয় মার্কিন কর্মকর্তারা। এই অভিযান সম্পর্কে তৎকালীন পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানি এবং আইএসআই প্রধান জেনারেল আহমেদ শুজা পাশাকে অবহিত করা হয়নি বলে যে কথা বলা হয়েছে তাকে সরাসরি ‘ডাহা মিথ্যা’ বলেছেন হার্শ।
এ ছাড়া, অভিযানের বহু আগে থেকে বিন লাদেনের সঙ্গে আল-কায়েদা চক্রের কোনো যোগাযোগই ছিল না। দীর্ঘদিন ধরেই এ যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল বলেও জানান হার্শ। অভিযানের দিন বিন লাদেনের বাসভবনের আশপাশের পুরো এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় আইএসআই। পাকিস্তানের ভূখণ্ডে মার্কিন হেলিকপ্টারকে প্রবেশ করতে যেন পাক বাহিনী বাধা না দেয় তাও নিশ্চিত করে আইএসআই।
এ ছাড়া, মার্কিন বিশেষ নৌ কমান্ডো ‘সিল’এর সদস্যদের সঙ্গে বিন লাদেন বিরোধী অভিযান চালানোর সময় কোনো গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেনি বলেও হার্শ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, কেবলমাত্র ‘অসহায়, দুর্বল এবং নিরস্ত্র’ বিন-লাদেনকে হত্যার জন্যেই একতরফা গুলি চালানো হয়েছে। বিন-লাদেনের বাসভবন থেকে কোনো গোপন তথ্যেই উদ্ধার করা যায় নি।
বিন-লাদেনের লাশ সাগরে ফেলে দেয়া হয় নি বরং তাকে আফগানিস্তান কবর দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন হার্শ। তিনি বলেন, আমেরিকার কথিত সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে মিথ্যা তথ্য দেয়া একটা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
বিন লাদেন হত্যার অভিযান চালানোর পর মার্কিন প্রশাসন দাবি করেছিল তারা অ্যাবোটাবাদের ওই বাড়ি থেকে গুরুত্বর্পূর্ণ দলিলপত্র ও তথ্য উদ্ধার করেছে। হার্শ তার সূত্রের বরাত দিয়ে বলেন, এগুলো স্রেফ বিন লাদেনবিরোধী অভিযানের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য করা হয়েছিল। তাকে হত্যার পর একটি কাভার স্টোরি বানানো হলো- বিন লাদেনের কাছে নিয়মিত বার্তাবাহকরা আসা-যাওয়া করতো এবং মেমরি কার্ডে করে নির্দেশনা নিয়ে যেত। সবার কাছে জীবিত বিন লাদেনের গুরুত্বটা আরো বাড়ানোর জন্যই এ কাজ করা হয়েছে।
শেয়ারবাজারনিউজ/অ