আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৩ জানুয়ারী ২০১৫, মঙ্গলবার |

kidarkar

সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকার ৫ প্রকল্প অনুমোদন

imagesশেয়ারবাজার রিপোর্ট : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকার পাঁচ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া  হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে চারটি নতুন এবং একটি সংশোধিত।
মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থ তহবিলের (জিওবি) ১৪ হাজার ২১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ও প্রকল্প সাহায্য থেকে ৪ হাজার ১৯১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়।

সংশোধিত প্রকল্প:
অনুমোদিত সংশোধিত প্রকল্পের অনুপ্রকল্পের নাম তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি – ৩)। অমনোপযোগী শিক্ষার্থীরা যেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পাঁচবছর মেয়াদী শিক্ষা শেষ করতে পারে সেজন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ২০১১ সালের আগস্টে প্রাথমিক অনুমোদনের সময় এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২২ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। সংশোধিত প্রকল্প হিসেবে অনুমোদনের পর ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৪ হাজার ৪২ কোটি টাকা ব্যয় কমানো হয়।
একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ব্যয় কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, মূল অনুমোদিত প্রকল্পে উপবৃত্তি কর্মসূচি এবং শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচিতে যথাক্রমে ৩ হাজার ৩৫১ কোটি ও ১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু এ দুটো কর্মসূচির জন্য আলাদা আলাদা প্রকল্প নেওয়ায় সংশোধিত প্রকল্প থেকে কর্মসূচি দুটো বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রকল্প ব্যয় কমে এসেছে।
প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল মূল অনুমোদিত প্রকল্পে জুন, ২০১৬ থাকলেও সভায় প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানানো হয়।
সময় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ২০১১ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা অনুমোদিত হয় ২০১১ সালের আগস্ট মাসে। এজন্য ওই অর্থ বছরে প্রকল্পটির বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। ফলে কাজের অগ্রগতি কিছুটা পিছিয়ে যায়। যা এখন শেষ করতে অতিরিক্ত দেড় বছর প্রয়োজন।
প্রকল্প সংশোধনের অন্যান্য কারণ সম্পর্কে আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, বর্তমান সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেছে। এসব বিদ্যালয়ের জন্য অতিরিক্ত একজন করে প্রি-প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ প্রকল্প থেকে করায় এতে কিছুটা সংশোধনী আনা হয়। এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাস্তবায়নে শ্রেণিকক্ষ পর্যায়ে ল্যাপটপ, সাউন্ড সিস্টেম ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এ প্রকল্পের আওতায় সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্যও প্রকল্প সংশোধিত হয়।

প্রকল্প ব্যয়:
মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থ তহবিলের (জিওবি) ১৪ হাজার ২১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ও প্রকল্প সাহায্য থেকে ৪ হাজার ১৯১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
মূল অনুমোদিত প্রকল্পে সাহায্য ছিল ৩ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। এবার প্রকল্প সাহায্য প্রায় ২৪ ভাগ বেড়ে ৪ হাজার ১৯২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রকল্প সাহায্যের এ বৃদ্ধিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে বলেন, প্রকল্প সাহায্য বাড়ায় সরকারি অর্থায়ন কমে যাচ্ছে। সংশোধিত এ প্রকল্পে সাহায্য ৮৪ কোটি টাকা বেড়েছে আবার জিওবি ৪ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা কমেছে। এভাবে প্রকল্পে বৈদেশিক সাহায্য বৃদ্ধি পেলে আমাদের টাকা অর্থনীতির অন্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবো। যা অর্থনীতির জন্য তা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
মন্ত্রী আরো জানান, মোট প্রকল্প সাহায্যের মধ্যে ২ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা ঋণ এবং বাকি ১ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা অনুদান।
এই ঋণ ও অনুদান দেবে দশটির উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। সংস্থাগুলো হলো- এডিবি, আইডিএ, অস্ট্রেলিয়ান এইড, কানাডিয়ান সিডা, ডিএফআইডি, ইইউ, জাইকা, সুইডিস সিডা, জিপিই ও ইউনিসেফ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বলেও মন্ত্রী জানান।
সংশোধিত প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরো বলেন, মূল প্রকল্পে মোট ৪৮ হাজার ৮৪ জন জনবলের উল্লেখ ছিল। সংশোধিত প্রকল্পে অতিরিক্ত ৩৩ হাজার ৪৪৮ জন বাড়িয়ে সর্বমোট ৮১ হাজার ৫৩২ জন জনবল নেওয়া হবে। এসব জনবল থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে ৫৫০টি পদ রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তর করা হবে।

নতুন ৩টি প্রকল্প:
একনেক সভায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত নতুন ৩টি প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয়। রংপুরে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্রী হল নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার । এজন্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প নামক ৭৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় সভায়।
সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় জানুয়ারি ২০১৫ থেকে জুন ২০১৮ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ৬০০ আসনের ছাত্রী হল, ড.ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিরিয়ারিং বিভাগ এবং ইলেক্ট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে গবেষণা ল্যাবেটরিও এ প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত হবে।
সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভোলায় একটি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বস্ত্র পরিদপ্তর। এর বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে জুলাই, ২০১৪ থেকে জুন, ২০১৭ পর্যন্ত। সভায় জানানো হয়, ভোলায় এ টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটটি স্থাপিত হলে প্রতি বছর ৮০ জন বস্ত্র প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ তৈরি হবে।
রাজশাহী ও চট্টগ্রামে আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধাদিসহ দুটি ক্রীড়া স্কুল প্রতিষ্ঠা করবে সরকার। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৭৯ কোটি টাকায় বিকেএসপি এটি বাস্তবায়ন করবে। এর বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে জুলাই, ২০১৪ থেকে জুন, ২০১৭ পর্যন্ত।
চুয়াডাঙ্গায় একটি শিল্পনগরী স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। একনেক সভায় এ সম্পর্কিত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদিত প্রকল্পটির নাম বিসিক শিল্পনগরী, চুয়াডাঙ্গা। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৩২ কোটি টাকায় জুলাই, ২০১৪ থেকে জুন, ২০১৭ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে। সভায় জানানো হয় এ প্রকল্পের আওতায় ১৬৯টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ইউনিট স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ৬ হাজার বর্গফুটের এ টাইপ প্লট থাকবে ৬২টি। ৪ হাজার ৫০০ বর্গফুটের বি টাইপ প্লট ৪৩টি। ৩ হাজার বর্গফুটের সি টাইপ প্লট রয়েছে ৪৬টি। বাকি ১৮টি বিভিন্ন সাইজের এস টাইপ প্লট স্থাপিত হবে।
একনেক সভায় মন্ত্রী পরিষদের বিভিন্ন সদস্যসহ উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উপস্থিত সাংবাদিকদের সভার কার্যক্রম সম্পর্কে জানান।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.