আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পক্ষে মামলার রায়: অগ্রনী ব্যাংককে দিতে হবে ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান আলহাজ্ব টেক্সটাইল ও অগ্রনী ব্যাংকের এফডিআর সংক্রান্ত মামলার রায় এসেছে। আজ ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ মামুনুন রহমান ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের দ্বৈত বেঞ্চে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্রখাতের আলহাজ্ব টেক্সটাইল লিমিটেডের পক্ষে মামলার রায় দেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অগ্রনী ব্যাংক লিমিটেড আলহাজ্ব টেক্সটাইলকে এফডিআরের ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া পাওনা টাকা পরিশোধ করে ৭ দিনের মধ্যে আদালতকে অবহিত করার জন্য অগ্রনী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে অগ্রনী ব্যাংকের আইনজীবী এ.কে.এম বদরুদ্দোজা জানান, বিষয়টি অগ্রনী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। হয়তো মামলার রায়ের বিষয়ে আপীল করা যেতে পারে।
অন্যদিকে আলহাজ্ব টেক্সটাইল লিমিটেডের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে জানান, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের যেকোন সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপীল করা যেতে পারে। কিন্তু আজকের রায়ের বিরুদ্ধে অগ্রনী ব্যাংকের আপীল করার সুযোগ নেই। কারণ অগ্রনী ব্যাংক ও আলহাজ্ব টেক্সটাইলের যৌথ সম্মতিতে পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানিজকে অডিটর হিসেবে নিয়োগ দেয়। অডিটরের কাজই ছিল, স্বাধীনভাবে অগ্রনী ব্যাংকের সুদের হার অনুযায়ী অগ্রনী ব্যাংকের নিকট আলহাজ্ব টেক্সটােইলের পাওনা টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা। পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানিজ অগ্রনী ব্যাংক কর্তৃক সুদের হার সংক্রান্ত সার্কুলার পর্যালোচনা করে নির্ধারণ করে যে, আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড অগ্রনী ব্যাংকের নিকট ২৪/১০/২০১৮ তারিখ পর্যন্ত পাওনা টাকার পরিমাণ ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৮ টাকা। অগ্রনী ব্যাংক লিমিটেড অডিট সংক্রান্ত খরচাদি আলহাজ্ব টেক্সটাইল লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে পরিশোধ করেছে। পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানিজের অডিট রিপোর্টটি অগ্রনী ব্যাংকের নিজস্ব রিপোর্ট হিসেবে আইনত পরিগনিত হয়েছে। ফলে অগ্রনী ব্যাংক তার নিজের অর্থায়নেকৃত অডিট রিপোর্টটির ওপর ভিত্তি করে মহামান্য হােইকোর্টের দেয়া আদেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রীম কোর্টে আপীল করার কোনো সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, আলহাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ১৯৬১ সালে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে নিবন্ধিত (আরজেএসসি) হয় আর ১৯৬৭ সালে এটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়। ১৯৭২ সালে সরকার কোম্পানিটিকে জাতীয়করণ করে এবং এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) কাছে ন্যস্ত করা হয়। পরে ১৯৮২ সালে আলহাজ টেক্সটাইলকে বেসরকারীকরণ করা হয় এবং এর দায়িত্ব আগের মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ব্যবস্থাপনা হস্তান্তরের সময় ২ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার ৮০৫ টাকার দায় উদ্ভূত হয়। কিন্তু এ ঋণ উদ্ভূত হয়েছিল বিটিএমসির সময়ে। তাই এ অর্থ পরিশোধের জন্য সরকার, বিটিএমসি, বিটিএমএ ও ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কোম্পানি, বিটিএমসি ও ব্যাংকের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে ঋণ পরিশোধের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়। এ তহবিলের ক্যাশ ক্রেডিট কোম্পানির পক্ষ থেকে এবং সুদ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরিশোধ করার কথা ছিল। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এ তহবিলে ২ কোটি ৯ লাখ টাকা জমা হয়। পরে চুক্তি অনুসারে বিশেষ তহবিলটিকে স্থায়ী আমানতে (এফডিআর) রূপান্তর করা হয় এবং লিয়েন মার্ক করে অগ্রণী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রাখা হয়। ২০০৮ সালে ঋণ পরিশোধের পর অ্যাকাউন্টে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ ৪২ হাজার ১৭৮ টাকা অবশিষ্ট থেকে যায়। এফডিআরের অবশিষ্ট অর্থ থেকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোম্পানিকে ৫ কোটি ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭৯১ টাকা পরিশোধে সম্মত হয়। এ কারণে কোম্পানি এফডিআরে টাকা জমা দেয়া বন্ধ করে দেয় এবং অগ্রণী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে রিট দায়ের করে। ২০১১ সালে সুদসহ এফডিআরের অর্থ কোম্পানির অনুকূলে পরিশোধের জন্য অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দেন আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে আপিল করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আপিলেও ব্যাংককে এক মাসের মধ্যে কোম্পানিকে এফডিআরের টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও টাকা না পেয়ে কোম্পানি সাপ্লিমেন্টারি রুলের জন্য আবেদন করে। এতে বলা হয়, ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এফডিআরে অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যাংক মাত্র ৮ কোটি ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। পরে ২০১৮ সালে আদালতের নির্দেশে আলহাজ টেক্সটাইল ও অগ্রণী ব্যাংকের যৌথ সম্মতির মাধ্যমে পাওনা টাকার পরিমাণ নির্ধারণে পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানিকে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। আর এ নিরীক্ষকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই অগ্রণী ব্যাংককে আলহাজ টেক্সটাইলের অনুকূলে ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে বিষয়টির নিষ্পত্তি করেন হাইকোর্ট।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা