অনিয়ম ঠেকাতে সরকারি ব্যাংকের প্রতি আসছে কঠোর নির্দেশ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট : এখন থেকে সরকারি ব্যাংকের যাবতীয় অনিয়মের দায়ভার নিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এমডি ও চেয়ারম্যান উভয়কেই। এত দিন পর্যন্ত অনিয়মের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমডিকে দায়ী করা হতো। আগামীতে এ জন্য ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে সমভাবে দায়ী করা হবে। শুধু তা-ই নয়, অনেক সময় অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংকের বোর্ড সভায় বড় অঙ্কের ঋণ অনুমোদন করে নেয়া হয়। পরে অনিয়ম ধরা পরলে এর দায় কেউ নিতে চায় না। এটি ঠেকাতে আগামীতে পরিচালনা পর্ষদ সভার পুরোটা ভিডিও করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি সরকারি ছয় ব্যাংকের জন্য এক বছরমেয়াদি টার্গেট ঠিক করে দেয়া হচ্ছে। যা ওই নির্দিষ্ট বছরের মধ্যে পরিপালন করতে হবে। যারা তা করতে ব্যর্থ হবেন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ অপসারণও করা হবে।
কাল বৃহস্পতিবার সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সাথে ব্যাংকিং সচিবের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে। বৈঠকের জন্য সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল এমডিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বৈঠকে ছয় ব্যাংকের জন্য এক বছরভিত্তিক টার্গেট নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এই টার্গেটের মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের হার নির্ধারণ। খেলাপি ঋণ আদায়ের হার। এক বছরে কী পরিমাণ ঋণ দেয়া হবে। ২০১৬ সালের মধ্যে ব্যাংকগুলো অটোমেশন। এই টার্গেটের পাশাপাশি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভা ভিডিও করার বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা এবং এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে যেয়ে ব্যাংকিং বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, দেখা গেছে রাজনৈতিক কারণে সরকারি ব্যাংকের এমডি ও চেয়ারম্যান অনেক সময় জবাবদিহিতার বাইরে চলে যান। এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওপর। সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা লক্ষ করা গেছে। তাই আমরা চাচ্ছি সরকারি ব্যাংকের এমডি ও চেয়ারম্যানদের জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা বাড়াতে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ছয়টি ব্যাংকের জন্য এক বছরমেয়াদি বেশ কয়েকটি টার্গেট নির্ধারণ করে দেয়া হবে, যা তাদের কষ্ট করে অর্জন করতে হবে। ‘টার্গেট অর্জনে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট এমডি ও চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, প্রথমে তাদের কারণ দর্শানো হবে। পরে তাদের অপসারণ করা হবে।
বোর্ড সভা ভিডিও করার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে যেয়ে ব্যাংকিং বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, হলমার্কের মতো ঘটনা বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি। সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে সম্পূর্ণ ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে এই ঘটনায় লোপাট করা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। এই কেলেঙ্কারির সাথে সোনালী ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা ও পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদস্যরা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। হলমার্কের ঘটনায় দেখা গেছে পরিচালনা পর্ষদের সভায় ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরিচালকেরা। কিন্তু এখন কেউ এই কেলেঙ্কারির দায়দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। অনেক পরিচালক বলতে চেষ্টা করেছেন বোর্ড সভায় অনেক ঋণ প্রস্তাব উত্থাপন না করেই গোপনে তা অনুমোদন করে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবেদন ও সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন নথিতে প্রমাণ রয়েছে অনেক পরিচালক হলমার্কের পক্ষে বোর্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
এসব অনিময় ও দুর্নীতি ঠেকাতে এখন সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের যাবতীয় বিষয় নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য বোর্ড সভা ভিডিও করার বিষয়টি চিন্তা করা হয়েছে। এতে বোর্ড সভায় কোন প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করা হলো এবং কারা এর পক্ষে বা বিপক্ষে বক্তব্য রাখছেন তা সহজে নির্ণয় করা সম্ভব হবে। ভিডিও করা থাকলে অনিময় সংঘটিত হলে বোর্ডের সদস্যরা পরে তা অস্বীকার করতে পারবেন না।