আজ: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ইং, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২১ মে ২০১৫, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

কোম্পানির বাড়া ভাতে ছাঁই

IPO essue_SharebazarNewsশেয়ারবাজার রিপোর্ট: প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপও) আবেদন প্রক্রিয়ায় ব্যাংক পদ্ধতি বাতিল করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।এর ফলে আইপিও অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা কোম্পানিরগুলোর বাড়া ভাতে ছাঁই পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কারণ এতোদিন আইপিওর জন্য কোম্পানিগুলোকে যে খরচ বহন করতে হতো তা অতিরিক্ত সাবস্ক্রিপশনের টাকা দিয়েই সম্পন্ন করা যেতো। কিন্তু আইপিওর নতুন পদ্ধতিতে কোম্পানিগুলোর সেই সুযোগ থাকছে না। যার ফলে কোম্পানির নিজস্ব ফান্ড থেকেই আইপিওর বাড়তি খরচ বহন করতে হবে।
আগে আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও হাউজ উভয় পদ্ধতি চালু ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ব্যাংক পদ্ধতি বাতিল করে বিএসইসি। এখন শুধু হাউজের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা। আর এতেই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন পাইপলাইনে থাকা কোম্পানিগুলো।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেশীরভাগ কোম্পানির আইপিওতে ৩০ থেকে ৫০ গুণেরও বেশি আবেদন জমা পড়ে। আবেদন গ্রহণের মাস খানেক পর লটারির ড্র সম্পন্ন করা হয়। এরপর শুরু হতো অ্যালটমেন্ট ও রিফান্ড বিতরণ। আর এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় দেড় মাস সময় পার হতো। ব্যাংকের মাধ্যমে আইপিও আবেদনে বিনিয়োগকারীদের জমাকৃত টাকা এই মাসখানেক সময় কোম্পানির নিজস্ব অ্যাকাউন্টে জমা হয়। আর এখান থেকেই জমানো টাকার ওপর ব্যাংকের দেয়া লভ্যাংশের অনুপাতে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করতো কোম্পানিগুলো। কোম্পানি ও ব্যাংকের সুসম্পর্কের কারণে কোনো কোনো ব্যাংক এক্ষেত্রে ৬-৭ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে। তবে নূন্যতম ৫ শতাংশ সুদ দেয়া হয়ে থাকে। এই বাড়তি সুদ দিয়েই কোম্পানি আইপিওর প্রয়োজনীয় খরচ মিটিয়ে থাকে। তবে এই আয় উপরি হওয়ার কারণেই বিএসইসির নেয়া এমন সিদ্ধান্তে (ব্যাংক পদ্ধতি বাতিল) নিরব ভূমিকা পালন করছে তারা।
উদাহরণ স্বরুপ, একটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে ৩ কোটি শেয়ার ছেড়ে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এই উত্তোলিত ৩০ কোটি টাকা থেকে ব্যাংক লোন বাবদ ২৭ কোটি ও আইপিও খরচ বাবদ ৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এই হিসাব কোম্পানির প্রসপেক্টাসে দেখানো হলেও কার্যত ব্যয় করা হয় না। আইপিওর খরচ বাবদ ৩ কোটি টাকা সেটা অতিরিক্ত সাবস্ক্রিপশনের টাকা থেকেই ব্যয় করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আইপিওর খরচ কোম্পানির কোষাগারেই থেকে যায়। এই সুবিধা অলিম্পিক এক্সসরিজ পেলেও এর পরে পাইপলাইনে থাকা অন্যান্য সকল কোম্পানিই এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যার ফলে আইপিওর জন্য কোম্পানিগুলোকে সকল খরচ নিজেস্ব ফান্ড থেকেই বহন করতে হবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অলিম্পিক এক্সসরিজের আইপিওতে ব্যাংকের মাধ্যমে সর্বমোট ৯৬৬ কোটি ৫৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা এবং ২৩ এপ্রিল ২০১৫ পর্যন্ত প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে ২ কোটি ৮৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকার আবেদন জমা পড়েছে।সে হিসাবে সর্বমোট ৯৬৯ কোটি ৩৯ লাখ ৭১ হাজার টাকার আবেদন জমা পড়েছে। আইপিও অবেদনে জমাকৃত টাকা ব্যাপক সময় যাবৎ (আবেদন গ্রহণ থেকে অ্যালটমেন্ট ও রিফান্ড বিতরণ পর্যন্ত) কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে আমানত থাকবে। সে হিসাবে এক মাসে ব্যাংক থেকে নূন্যতম ৫ শতাংশ হারে সুদ ৪ কোটি  ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা পাওয়ার কথা।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: সাইফুর রহমান শেয়ারবাজার নিউজ ডটকমকে জানান, বিনিয়োগকারী তথা পুঁজিবাজারের স্বার্থে বিএসইসি সবসময় তৎপর রয়েছে। রিফান্ড জটিলতা ও ভোগান্তি লাঘবে হাউজের মাধ্যমে আইপিও আবেদন পদ্ধতি চালু করা বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। অবশেষ সে দাবি পূরণ হয়েছে। যদিও এতোদিন প্রাইমারি মার্কেটের (আইপিও) কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত সাবস্ক্রিপশনের টাকা দিয়ে ভালো সুবিধা ভোগ করতো। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো আইন না থাকায় বিএসইসি কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। বিএসইসি আইন করে বিনিয়োগকারীদের জন্য; কোনো ইস্যুয়ার কোম্পানির সুবিধার জন্য নয়।

শেয়ারবাজারনিউজ/অ/মু/সা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.