আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৫ মে ২০১৫, সোমবার |

kidarkar

সহসাই পুঁজিবাজারে আসছে না সরকারি কোম্পানি

Govt_Secশেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে আটকে আছে পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানির তালিকাভুক্তি। শুধু তাই নয় সরকারি মালিকানাধিন কোম্পানিগুলোর শেয়ার অফলোডের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা এবং সদিচ্ছারও যথেষ্ট অভাব আছে বলে মনে করে এই সংস্থাটি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার এইরকম মন্তব্যের পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরাও। তাদের মতে, সরকারি কোম্পানির ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে অর্থমন্ত্রী ২৬ সরকারী কোম্পানি শেয়ার অফলোড করবে এমন ঘোষণা করেছিলেন দীর্ঘদিন আগে। এমনকি এ বিষয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিয়েছিলেন। এইসব ঘোষণার প্রেক্ষিতে শুধু বৈঠকই অনুষ্ঠিত হয়েছে তাই নয় দিন তারিখ ঘোষণা দিয়ে অফলোডের প্রক্রিয়ায় গেছে সরকারি কোম্পানী এমন খবরও বিনিয়োগকারীদের শোনানো হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন ঘোষণাই কার্যকর হয়নি।

সম্প্রতি, সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনস্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার অফলোড করে কিংবা বন্ডের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য পুনরায় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এর জন্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

বৈঠকে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাদের মতে, সরকার মাঝে মাঝে শুধু ঘোষণাই দিয়ে এসেছে। আর এই ঘোষণা অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যদিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। কিন্তু এইসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। অপরদিকে সরকারি কাজের দীর্ঘসূত্রতা, অদক্ষতা এবং সমন্বয়হীনতার স্থায়ী সমাধানে জোর পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন ওই বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা।

এর আগে, ২০০৮ সালে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেয়ারবাজার বিকশিত হওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে শেয়ার বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়। পরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার এসেও একাধিকবার এ নির্দেশ দেয়। গত ছয় বছরে বহুবার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে ছাড়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রতিবারই এ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।

গত ছয় বছরে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি ছাড়া সরকারি কোনো কোম্পানিই শেয়ারবাজারে আসেনি। আর পুনঃগণপ্রস্তাবের (আরপিও) মাধ্যমে বাজারে আরো শেয়ার ছাড়ে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেঘনা পেট্রোলিয়াম, তিতাস গ্যাস, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্ট ও যমুনা অয়েল বাজারে বাড়তি শেয়ার বিক্রি করে। তবে ডেসকো ও পাওয়ার গ্রিডের আরো শেয়ার ছাড়ার নির্দেশনা চার বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি।

এছাড়া শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে সরাসরি তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েও নিয়ম অনুযায়ী আবেদন না করায় বাজারে আসতে ব্যর্থ হয় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড। অন্যদিকে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকিং কোম্পানি জনতা ব্যাংক লিমিটেড অস্বাভাবিক প্রিমিয়াম দাবি করে শেয়ার ছাড়ার আবেদন জানিয়েও পরে পিছিয়ে যায় একই পথে হেঁটেছে সোনালী ব্যাংকও।

এদিকে বিএসইসি’র একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে বলেন, সরকারী কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদে আমলা ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের বসানোর কারণে তারা ক্ষমতা বিকেন্দ্রিকরণ করতে চান না। কারণ আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে নিয়মিত এজিএম, কর্পোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন পরিপালনসহ পরিচালন পর্ষদকে বিভিন্ন বিধি-নিষেধের মধ্যে আসতে হয়। তাই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সাথে সাথেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং বাজার তদারকি সংস্থা উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের নজরদারিতে থাকতে হবে। তাছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হলে যেসব বিধি এবং আইন পরিপালন নিশ্চিত করতে হয় সেইসব বিষয়ে সরকারি পরিচালনা পর্ষদের দক্ষতার অভাব রয়েছে।

আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএসইসি’র অভিমত, বিএসইসি বরাবরই পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানির তালিকাভুক্তির বিষয়ে আগ্রহী। কিন্তু গত এক দশকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে মন্ত্রীপর্যায়ে এ পর্যন্ত ৯টি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং ৭বার আলটিমেটাম দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। আর এর পেছনে সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছার অভাব, অদক্ষতা এবং দায়িত্বহীনতাই দায়ী। এইসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই চলতি মাসে বিদ্যুৎ বিভাগের কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এই উদ্যোগে বিদ্যুৎ বিভাগ কতোটা সফলতা দেখাতে পারবে তাই এখন দেখার বিষয়।

এই বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, পুঁজিবাজার এখন অনেক বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে। যেভাবে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে সে হারে ভালো শেয়ারের জোগান বাড়েনি। কিন্তু বিএসইসি-তে থাকার সময়ে আমি কিছু সরকারি কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়েছি। কিন্তু বর্তমানে নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে আনতে এত দেরি হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনিও এর জন্য সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা এবং দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করেন।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/ও/তু/সা/শা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.