আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৫ মে ২০১৫, সোমবার |

kidarkar

কোটি টাকা খরচে সফটওয়্যার চালু করে কি পেল ডিএসই

 

DSEশেয়ারবাজার রিপোর্ট : ১০০ কোটি টাকা খরচ ধরে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ফ্লেক্সট্রেড সিস্টেমস নামে নতুন সফটওয়্যার চালু করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। উন্নত সেবা পাওয়ার আশায় নতুন অটোমোশন ট্রেডিং প্লাটফর্মে লেনদেন চালু করা হলেও শুরু থেকেই এর গোড়ায় গলদ দেখা যায়।এই সফটওয়্যার চালু করার আগে প্রতিটি সিকিউরিটিজ হাউজকেই তাদের কম্পিউটারের নানা আপডেটসহ নতুন মেশিন প্রতিস্থাপন করতে হয়েছে। মন্দাবাজার পরিস্থিতিতে ঐ সময়ে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোকে বাড়তি টাকা খরচ করে উন্নত সেবা পাওয়ার লোভ দেখানো হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে।

প্রায় প্রতিটি সিকিউরিটিজ হাউজের অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ট্রেডার)সফটওয়্যারটি চালু করার পর একে জটিল ও যুগপোযোগী নয় বলে মন্তব্য করেছেন।

এদিকে বর্তমানে এই সফটওয়্যারের যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: সিকিউরিটিজ হাউজগুলো দেড় লাখ হাওলা লেনদেন হওয়ার পরপরই সফটওয়্যারটি স্লো হয়ে যায়। এছাড়া বাজারের মোট লেনদেন ৫০০ কোটির উপরে উঠলেই সফটওয়্যারে সমস্যা দেখা দেয়। লেনদেন নিষ্পত্তিতে ধীরগতি,যথাসময়ে অর্ডার এক্সিকিউট না হওয়াসহ সফটওয়্যারটিতে আরো বেশকিছু সমস্যা দেখা দেয়। তবে নতুন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের প্রথম এই সমস্যা বড় আকার ধারণ করে। গত ১০ কার্যদিবস ধরে কোনো না কোনো সিকিউরিটিজ হাউজে এ সমস্যা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে গতকাল ও আজ সোমবার লেনদেন চালু করতে অনেক বিলম্বিত হয়। যদিও ডিএসইর পক্ষ থেকে কারিগরি ত্রুটির সঙ্গে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর তথ্য প্রদানের বিলম্বের অজুহাত দেখানো হয়েছে। কিন্তু ১০০ কোটি টাকা দামি সফটওয়্যার স্থাপনের মাত্র ৬ মাসের মাথায় সমস্যা তৈরির বিষয়টি আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ডিএসইর সফটওয়্যারটি স্থাপনের জন্য প্রায় ৩ বছর কাজ করতে হতো। কিন্তু এটি অত্যধিক চাপের মধ্যে থেকে মাত্র ৯ মাসের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। অটোমটেডে ট্রেডিং সিস্টেমে রিনিউয়াল প্রজেক্টে নামে ডিএসইর প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকার উপরে। আর্ন্তজাতিকভাবে পরিচিত প্রতিষ্ঠান নাসডাক এবং ফ্লাক্স ট্রেডের মাধ্যমে এ সফটওয়্যার আনা হয়। ডিএসইর ফ্লেক্সটিপি সফটওয়্যারের ৫টি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো : নেটওয়ার্ক কনফিগার,টার্মিনাল কনফিগার,ব্রোকার কনফিগার,ব্রোকার এডমিন অপারেশন,ক্রেডিট কন্ট্রোল অপারেশন এবং ডিএসই-ফ্লেক্সপিটি ডিলার অপারেশন (ভিউ অনলি)। প্রাথমিকভাবে ৩২ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে সার্ভার নেটওয়ার্কের ১৩ কোটি ৩৭ লাখ, নেটওয়ার্ক ইক্যুইপমেন্ট ৫ কোটি ৪২ লাখ, এএমসি নেটওয়ার্ক ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ডাটা সেন্টার ইক্যুইপমেন্ট ১ কোটি ৬৮ লাখ, টেষ্ট অ্যান্ড সাপোর্ট ৭৬ লাখ ৬০ হাজার, প্রশিক্ষণ ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, রিক্যুরিং ইস্যু ৯ লাখ ৯৮ হাজার, লিগ্যাল ইস্যু ১৫ লাখ এবং অন্যান্য ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়।

এদিকে রাত-দিন পরিশ্রম করে মাত্র ৯ মাসে সফটওয়্যার স্থাপন করার জন্য উৎসাহ ভাতা বাবদ এ বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের প্রায় ৭৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। যদিও এই পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎয়ের মাধ্যমে ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এটি ডিএসইর বোর্ডে পাশ করা উৎসাহ ভাতা বলে জানা গেছে।

এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সফটওয়্যার ত্রুটির কারণে প্রায় প্রতিদিনই সিকিউরিটিজ হাউজে লেনদেনে সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে ৫০০ কোটি টাকা অতিক্রম করার পর থেকেই এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এছাড়া হাউজগুলোতে যখন দেড় লাখ হাওলা অতিক্রম করে তখন সফটওয়্যার ধীর গতিতে কাজ করে। এই ট্রেড হ্যাম্পারের কারণে ট্রেকেহোল্ডাররা অনেক বেশি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

গত দুই কার্যদিবসে এই সফটওয়্যার সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। যদিও মঙ্গলবার থেকে যথাসময়ে লেনদেন চলবে বলে আজ আশার বাণী শোনানো হয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিধ ও বাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ারবাজার নিউজ ডটকমকে জানান, শেয়ারবাজারে ডিএসই নতুন ট্রেডিং প্লাটফর্মের সফটওয়্যার চালু করেছে যা ইতিবাচক। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ বিদেশি শেয়ারবাজারের আদলে সংযোজন করা হয়েছে। কিন্তু এটা আমাদের দেশের শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য মানানসই নয়।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আগে বিনিয়োগকারীরা স্ক্রিণে স্ক্রুল দেখে সহজেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। সফটওয়্যারটিতে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মোট লেনদেন ও টাকার পরিমাণ একসঙ্গে দেখতে পাওয়া যেতো। কিন্তু বর্তমানে সফটওয়্যারটিতে এ সুযোগ নেই। আর সফটওয়্যারটি লেনদেনের চাপ নিতে পারছে না। যার ফলে বার বার হ্যাম্পার হচ্ছে। এ বিষয়টি অনতিবিলম্বে সমাধান না হলে পুরো শেয়ারবাজারের জন্য তার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন তিনি।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/সা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.