আর মাত্র এক মাস বাকি: জোরপূর্বক শেয়ার বিক্রির ক্ষমতা পাচ্ছে হাউজগুলো
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ এর রুলস ৩(৫) এর কার্যকারিতা দীর্ঘদিন স্থগিত থাকায় বিনিয়োগকারীরা এতোদিন ফোর্সসেলের মুখে পড়েননি। এছাড়া ডেবিট ব্যালেন্সের ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসা পোর্টফলিওগুলো লেনদেনের সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু সে সুযোগ রয়েছে জুন’১৫ পর্যন্ত। এরপর পুনরায় সময় না বাড়ানো হলে আইন অনুযায়ী মার্জিন অ্যাকাউন্টের শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি করার ক্ষমতা পাবে সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। এতে অনেক বিনিয়োগকারীর নেগেটিভ ইক্যুইটি থাকায় আবারও ফোর্সসেলের মুখে পড়তে হবে বলে জানা গেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৪ মার্চ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে মাইনাসে থাকা পোর্টফলিও পুনর্বিন্যাস এবং ১৯৯৯ সালের মার্জিন রুলসের ৩(৫) ধারা স্থগিত করার দাবি জানানো হয়। তাই ওই বছরের ৯ এপ্রিল বিএসইসির ৪৭৫তম সভায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ, পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আবেদনের প্রেক্ষিতে মার্জিন রুলস,১৯৯৯ এর রুলস ৩(৫) এর কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। অর্থাৎ যেসব বিনিয়োগকারীর পোর্টফলিওর ইক্যুইটিতে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত মাইনাস রয়েছে বা মার্জিন লোন তার ইক্যুইটির ডেবিট ব্যালেন্সের ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে তাদের ঋণ পরিশোধের চাপ স্থগিত করে লেনদেনের সুযোগ করে দেয়া হয়। সর্বপ্রথমে এ সুবিধা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখ পর্যন্ত রাখা হয়।
পরবর্তীতে এ সময় শেষ হলে পুঁজিবাজারের অবস্থা মন্দা থাকায় এ সুবিধার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখ থেকে ৩১ মার্চ ২০১৪ তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। পরবর্তীতে গত ৩১ মার্চ পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এর মেয়াদ আরও ৬ মাস পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত এই আইন স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। পরবর্তীতে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর এ আইন স্থগিতের সময় আরও ৬ মাস বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি মার্জিন ঋণের ঐ আইন আরও ৬ মাস অর্থাৎ ৩০ জুন ২০১৫ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। এদিকে ৩০ জুন ২০১৫ পর্যন্ত অর্থাৎ আর মাত্র এক মাস এ আইনটির স্থগিতের সময় শেষ হচ্ছে। যার ফলে আগামী মাস থেকে ঋণ পরিশোধের চাপের মুখে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি ১৫০ শতাংশের ডেবিট ব্যালেন্সের বিনিয়োগকারীরা লেনদেনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ হাউজের বেঁধে দেয়া সময় মতো বিনিয়োগকারীরা ঋণ পরিশোধ বা সমন্বয় না করে তাহলে তাদের পোর্টফলিওতে থাকা শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি (ফোর্সসেল) করে তাদের পাওনা বুঝে নেবেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ এর রুলস ৩ (৫) ধারায় বলা হয়েছে, যখনই ইক্যুইটি ক্লায়েন্টের মার্জিন অ্যাকাউন্ট ডেবিট ব্যালেন্সের ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসে তখন হাউজগুলো ঋণ সমন্বয়ের জন্য ক্লায়েন্টকে অবহিত করবে। যাতে কোনোভাবেই ইক্যুইটি মার্জিন ঋণের ১৫০ শতাংশের কম না হয়। হাউজ কর্তৃপক্ষের ক্লায়েন্টের প্রতি এ সংক্রান্ত চিঠির ৩ দিনের মধ্যে নগদ অর্থ কিংবা মার্জিনেবল সিকিউরিটিজ দিয়ে অতিরিক্ত ঋণ সমন্বয় করবে। যে পর্যন্ত ইক্যুইটি সন্তোষজনক অবস্থায় না আসে সে পর্যন্ত ক্লায়েন্টের লেনদেন বন্ধ থাকবে। এদিকে দীর্ঘদিনের বাজার মন্দায় বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর ঋণের পরিমাণ তার ডিপোজিটের বেশি অতিক্রম করেছে।
ধরা যাক, কোনো বিনিয়োগকারীর ১ লাখ টাকা ডিপোজিটের বিপরীতে আরও ১ লাখ টাকা মার্জিন লোন সুবিধাসহ মোট ২ লাখ টাকার শেয়ারে কিনেছে। বাজার মন্দার কারণে তার বর্তমান শেয়ারের মূল্য ৫০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে তার ইক্যুইটির ডেবিট ব্যালেন্স মার্জিন লোন থেকে ১৫০ শতাংশ কমে গেছে। মার্জিন রুলসের উল্লেখিত ধারা অনুযায়ী হাউজ কর্তৃপক্ষ তাকে চিঠির মাধ্যমে অতিরিক্ত ঋণ পরিশোধের চাপ প্রয়োগ করার পাশাপাশি লেনদেন বন্ধ করে দেবে।
দীর্ঘদিনের বাজার মন্দা ও এ ধরণের আইন থাকায় এতোদিন অনেক বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কিন্তু গত দুই বছর এ আইন স্থগিত থাকার ফলে বিনিয়োগকারীরা ঋণ পরিশোধের চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি লেনদেন করতে পারতেন। কিন্তু এ সময় রয়েছে আর মাত্র এক মাস। এই এক মাসের মধ্যে সময় পুনরায় না বাড়ানো হলে নেগেটিভ ইক্যুটির পোর্টফলিওগুলো ফোর্সসেলের মুখে পড়বে।
শেয়ারবাজারনিউজ/সা