আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

৩১ মে ২০১৫, রবিবার |

kidarkar

ক্যাশ ডিভিডেন্ডের উভয় সংকট!

Divedentশেয়ারবাজার রিপোর্ট : তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ক্যাশ ডিভিডেন্ড এখন থেকে মার্জিন অ্যাকাউন্ট ক্লায়েন্টদের ব্যাংক হিসাবের বদলে নিজস্ব পোর্টফলিওতে জমা হবে। যদি ক্যাশ ডিভিডেন্ড ক্লায়েন্টদের পোর্টফলিওতে জমা হয় তাহলে নেগেটিভ ইক্যুইটি সমন্বয় হয়ে এক পর্যায়ে পজেটিভ হবে। যা বাজার স্থিতিশীলতায় বড় ভূমিকা রাখবে। হাউজগুলোর পক্ষ্ থেকে এমনটা মনে করা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত মার্জিন ঋণের বিনিয়োগকারীরা রয়েছেন বিপক্ষ অবস্থানে। তারা বলছেন, দীর্ঘদিনের পুঁজিবাজার অস্থিরতায় বিনিয়োগকারীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বেশিরভাগ মার্জিন ঋণ বিনিয়োগকারীদের পোর্টফলিও লেনদেনের অবস্থায় নেই। অর্থাৎ পোর্টফলিও’র চিত্র খুবই ভয়াবহ। কোম্পানিগুলোর ক্যাশ ডিভিডেন্ড ব্যাংক হিসাবে জমা হলেও কিছুটা নগদ টাকা হাতে পাওয়া যায়। যা দিয়ে সামান্য ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু এখন থেকে যদি হাউজের মাধ্যমে পোর্টফলিওতে ক্যাশ ডিভিডেন্ড জমা হয় তাহলে তা নেগেটিভের সঙ্গে সমন্বয় হয়ে যাবে। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্যাশ ডিভিডেন্ড থেকে বরাবরই বঞ্চিত থাকবে।

এদিকে বিএসইসির এই সিদ্ধান্ত উভয় সংকটের মধ্যে পড়েছে ক্যাশ ডিভিডেন্ড। ইতিমধ্যে কেয়া কসমেটিক্সের ঘোষিত ক্যাশ ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের দাবির মুখে স্টকে রূপান্তর করা হয়েছে। যা অনৈতিক ছিল বলে মন্তব্য করেছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতি অধ্যাপক ড.আবু আহমেদ। অন্যদিকে বিএসইসির এই সিদ্ধান্তটি বাতিলের জন্য বিনিয়োগকারীদের মহল থেকে দাবি উঠে আসছে।

জানা যায়, গত ১২মে  নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৫৪৩তম সাধারণ সভায় এ সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইস্যুয়ার কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড লভ্যাংশ অথবা ভগ্নাংশ বোনাসের বিক্রয়লব্ধ অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে মার্জিন শ্রেণীভুক্ত গ্রাহকদের বিও হিসাবসমূহের লভ্যাংশের অর্থ একত্রে উক্ত বিও হিসাবসমূহের তালিকাসহ একটি চেক বা ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্টের মাধ্যমে তাদের সংশ্লিষ্ট ডিপিকে প্রেরণ করবে। উক্ত ডিপি পরবর্তীতে তালিকা অনুযায়ী তা সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের হিসাবে বন্টন করবে।

এছাড়া মার্জিন গ্রাহক স্টক ব্রোকারের অনুমতি ছাড়া রাইট শেয়ার রিনানসিয়েট করতে পারবে না বলে কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ কোনো মার্জিন গ্রাহক কোন কোম্পানির রাইট শেয়ার নিতে না চাইলে সেক্ষেত্রে স্টক ব্রোকারের অনুমতি নিতে হবে। এ ব্যাপারে স্টক ব্রোকার সংশ্লিষ্ট ইস্যুয়ার কোম্পানিকে তাদের মার্জিন গ্রাহকের তালিকা প্রদান করবে।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ২০ (A) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে স্টক ব্রোকারে রক্ষিত গ্রাহক হিসাব পরিচালনার ক্ষেত্রে ইস্যুয়ার কোম্পানি অথবা মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য এ নির্দেশ জারি করে কমিশন।

বিএসইসির এই সিদ্ধান্তের ফলে  এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্যাশ ডিভিডেন্ড সিকিউরিটিজ হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে মার্জিন অ্যাকাউন্টের বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে জমা হবে। এছাড়া বিনিয়োগকারীরা রাইট অফার নিতে অপারগ হলে হাউজ কর্তৃপক্ষ সে সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এতে করে বাজারে সেল প্রেসার হবে না। এছাড়া হাউজগুলোর নেগেটিভ ইক্যুইটি কমবে:নেগেটিভ ইক্যুটিতে যে ভালো শেয়ার থাকবে এগুলো বিক্রি হবে না। এতে নেগেটিভ ইক্যুইটি এক সময়ে পজেটিভ হবে। যেসব কোম্পানি ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেবে সেগুলোতে ক্রয়ের প্রবণতা বাড়বে। সর্বপরি বাজারে ফোর্সসেলের মাত্রা অনেকটা কমে যাবে। এতে করে আগের মতো করে পুঁজিবাজার তথা হাউজ মালিক ও বিনিয়োগকারীরা প্রাণ ফিরে পাবে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

জানা যায়, মার্জিন অ্যাকাউন্ট বা লোন অ্যাকাউন্টে যখন শেয়ার কেনা হয় এবং শেয়ারের দাম বাড়া বা কমা যাই হোক না কেন তা স্বয়ক্রিয়ভাবে প্রত্যেকে মাসে বা প্রান্তিকে হিসাবভুক্ত হয়। যখন সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের দর কমে যায় তখন ইক্যুইটি মাইনাসে চলে আসে। এক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী বিনিয়োগকারীদের নগদ টাকা দিয়ে লোন সমন্বয় করতে হয়।

কিন্তু মার্কেটের টেনডেন্সি অনুযায়ী নগদ টাকা দিয়ে ঋণ সমন্বয় করার প্রাকটিস বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর নেই। এতে করে একসময় ঐ ক্লায়েন্টের পোর্টফলিও ফোর্সসেল স্ট্যাটাসে চলে আসে। তখন হাউজ কর্তৃপক্ষকে বাধ্য হয়েই ফোর্সসেল করতে হয়।

এদিকে নেগেটিভ পোর্টফলিওর যেসব ক্লায়েন্টদের কাছে হাউজ কর্তৃপক্ষের টাকা পাওনা রয়েছে যদি ঐ ক্লায়েন্টের অ্যাকাউন্টে শেয়ার থাকে তাহলে তা বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।

দেখা গেছে, ক্লায়েন্টের অ্যাকাউন্টে থাকা ভালো কোম্পানির শেয়ার যখন ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিচ্ছে তখন রেকর্ড ডেটের আগে সেসব কোম্পানির শেয়ার হাউজ বিক্রি করে দিচ্ছে। বিক্রি করে হয় অন্য শেয়ার কিনে দিচ্ছে না হয় কিনছে না। এক্ষেত্রে ভালো কোম্পানির শেয়ারও সেল প্রেসার থেকে বাদ পড়ছে না।

কারণ কোম্পানি ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিলে তার টাকাটা ক্লায়েন্টদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। এটা হাউজ বা ক্লায়েন্টের বিও হিসাবে যোগ হচ্ছে না। অন্যদিকে ক্লায়েন্টও ক্যাশ ডিভিডেন্ডের টাকা দিয়ে লোন সমন্বয় করছে না। এতে ক্লায়েন্টের ইক্যুইটি আরো নেগেটিভ হয়ে যাচ্ছে। কারণ সে হাউজে টাকা দিচ্ছে না। ঘুরেফিরে বিনিয়োগকারী ও হাউজ কর্তৃপক্ষ উভয়ই লুজার হচ্ছে।

এদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বা মিউচ্যুয়াল ফান্ড যারা ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেবে তারা এখন থেকে শুধু লোন কোডের বিপরীতে  মার্চেন্ট ব্যাংক বা সিকিউরিটিজ হাউজে ডিভিডেন্ড পাঠাবে। হাউজগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে এই ডিভিডেন্ডের টাকাটা ক্লায়েন্টের অ্যাকাউন্টে পৌছে দেয়া।

আগে যে লোন কোডগুলোতে বা মার্জিন লোন কোডে যারা ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতো তাদের পোর্টফলিও’র শেয়ার মার্চেন্ট ব্যাংক বা সিকিউরিটিজ হাউজগুলো নেগেটিভ বা অতিরিক্ত লোনের কোডে সেল করে দিতো। এখন থেকে মার্চেন্ট ব্যাংক বা সিকিউরিটিজ হাউজগুলো ঐ লোন কোডগুলোতে শেয়ার সেল করবে না। এক্ষেত্রে ফোর্সসেল কমে আসবে।

তবে নিজেদের প্রাপ্য ক্যাশ ডিভিডেন্ড ভোগ করতে না পারার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না মার্জিন অ্যাকাউন্টের বিনিয়োগকারীরা। যার ফলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ক্যাশ ডিভিডেন্ড এখন উভয় সংকটের মধ্যে পড়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/সা

 

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.