ওষুধ প্রশাসনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১২ দফা সুপারিশ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট : যুগোপযোগী নীতি কাঠামো তৈরী সমন্বিত আইন প্রণয়ন, আইনের কার্যকর প্রয়োগ, জনবল ও দক্ষতা বৃদ্ধি, দুর্নীতির অভিযোগে যথাযথ প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১২ দফা সুপারিশ উত্থাপন করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সুপারিশগুলো হলো : মেডিকেল ডিভাইস, ফুড সাপ্লিমেন্ট ও কসমেটিকস সামগ্রী অন্তর্ভুক্ত করে, ওষুধ সংক্রান্ত কমিটিগুলোর গঠন ও কর্ম প্রক্রিয়া আইনে অন্তর্ভুক্ত ও সুনির্দিষ্ট করে, ওষুধের মূল্য নির্ধারণে গেজেট প্রকাশের সময়কাল সুনির্দিষ্ট করে এবং ওষুধ আইনে অপরাধের জরিমানা ও শাস্তির অসামঞ্জস্যতা দূর করে কঠোর দণ্ডের ব্যবস্থা রেখে একটি সমন্বিত একক আইন প্রণয়ন এবং এর কার্যকর প্রয়োগে পদক্ষেপ নেওয়া।
এছাড়া ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে ড্রাগ লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে পাঁচশত থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ম বহির্ভূত অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।
রাজধানী ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে টিআইবি। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন রিসার্চ এ্যান্ড পলিসি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শাহনূর রহমান ও এ্যাসিস্টেন্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকার ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ভেজাল ও নকল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে সাম্প্রতিকালে মাঠ পর্যায়ে জনবল বৃদ্ধি, ওষুধ পরীক্ষাগার পুনঃস্থাপন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি, ভেজাল ও নকল ওষুধ প্রতিরোধে বিভিন্ন সময়ে অভিযান জোরদারকরণ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণসহ বেশকিছু ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তা সত্ত্বেও এ খাতটিতে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি বিদ্যমান রয়েছে।
এ ছাড়া অধিদফতরের কার্যক্রম পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি, অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী দায়িত্ব বণ্টন না করা, কর্মবণ্টনে স্বচ্ছতার ঘাটতি ও কর্মকর্তাদের পরিবীক্ষণ ও জবাবদিহিতায় ঘাটতি ও ওষুধ প্রশাসনের সেবা কার্যক্রমের প্রতিটি পর্যায়ে যোগসাজশের মাধ্যমে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে এ অধিদফতরে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের আওতাধীন পাঁচ শ্রেণীর ওষুধ কোম্পানির মধ্যে (এ্যালোপ্যাথি, ইউনানি, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি ও হারবাল) এ্যালোপ্যাথি ওষুধের বাজার তদারকি ও নিয়ন্ত্রণে সমস্যা, অনিয়ম ও দুর্নীতি গবেষণায় আওতাভুক্ত করা হয় এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সুশাসন আলোচনার ক্ষেত্রে সুশাসনের বিভিন্ন নির্দেশকের (আইনের শাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, অংশগ্রহণ, সংবেদনশীলতা, সেবার ঘাটতি ও দুর্নীতি) উপর ভিত্তি করে তথ্য সংগৃহীত ও বিশ্লেষিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘প্রতিটি ব্যবসায়ে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা অর্জনে অসদুপায় অবলম্বন করেন। এতে করে ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোও তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিদেশে রফতানি করার জন্য উৎপাদিত ওষুধের মান ঠিক থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেশে উৎপাদিত ওষুধের মান ঠিক থাকে না।’
এ ছাড়া কাজের পরিধি ও ভৌগলিক আওতা বিবেচনায় প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি ওষুধ পরিদর্শকের পদ সৃষ্টি ও অতিসত্ত্বর অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী সকল পর্যায়ে জনবল নিয়োগ সম্পন্ন করা; অর্গানোগ্রাম ও কর্ম-বিবরণ অনুযায়ী দায়িত্ব বণ্টন করা এবং ওষুধ কারখানা পরিবীক্ষণের দায়িত্ব বণ্টনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা; ওয়েবসাইটে সকল প্রকার রেজিস্ট্রেশনের তথ্যসহ অন্যান্য তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা; ওষুধ প্রশাসনের কার্যক্রমে জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা- এ লক্ষ্যে টোল ফ্রি নম্বর বা হটলাইন চালু করা; ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রণোদনার ব্যবস্থা ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য নৈতিক আচরণবিধি তৈরী ও বাস্তবায়ন।
অন্যদিকে, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোতে বিশেষত: ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটি, মূল্য নির্ধারণ কমিটি, ব্লক লিস্ট অনুমোদন কমিটি এবং প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিতে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তি বন্ধ করা; যে সকল ওষুধ কোম্পানি নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুত করে তাদেরকে চিহ্নিত করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানায় টিআইবি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের ও রিসার্চি এ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।