আজ: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০২ জুন ২০১৫, মঙ্গলবার |

kidarkar

শাহজীবাজারের শেয়ার নিয়ে কারসাজি: জরিমানায় রেকর্ড করলো বিএসইসি

Shajibajar_Power copyশেয়ারবাজার রিপোর্ট : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (এসপিসিএল) এর শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায়  জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান,ব্যক্তি ও কোম্পানির পরিচালকবৃন্দ,ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) কে বিভিন্ন অঙ্কে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এক্ষেত্রে ৯ প্রতিষ্ঠানসহ এর সঙ্গে জড়িত শীর্ষ  কর্মকর্তা এবং তাদের বিভিন্ন ক্লায়েন্টকে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া কারসাজির সঙ্গে জড়িত ৩ ব্যক্তি এবং ১ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একটি কোম্পানিকে ঘিরে কারসাজি করায় বিএসইসির এই সিদ্ধান্ত এযাবৎকালের রেকর্ডে পরিণত হয়েছে।

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বিএসইসির্ ৫৪৬তম কমিশন সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বিএসইসি’র প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, সর্বোচ্চ পরিমান জরিমানা করা হয়েছে প্রাইম ইসলামি সিকিউটিজিকে। মিথ্যা ও অসত্য তথ্য প্রদান, মার্জিন রুলসের বিভিন্ন আইন ভঙ্গ, ডিলার হিসেবে শেয়ার ক্রয়, ডিলার হিসেবে শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহক হিসাবের টাকা ব্যবহার এবং বাজারে এসপিসিএলের শেয়ারের কৃত্রিম সংকট তৈরীর জন্য শেয়ার ক্রয় করে সিকিউরিটিজ আইনের বিভিন্ন ধারা ভঙ্গ করে। আর একারণে এ ব্রোকারেজ হাউজকে রেকর্ড পরিমান আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এর পাশাপাশি যেসকল আইনের পরিপালনে প্রতিষ্ঠানটি ব্যর্থ হয়েছে তা তিন মাসের মধ্যে পরিপালনের জন্য নির্দেশ প্রদান করে পুঁজিবাজারের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বিএসইসি।

এর পাশাপাশি পিএফআই সিকিউরিটিজকে জরিমানা করা হয় দেড় কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি ডিলার হিসেব থেকে এসপিসিএলের শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে সম্মিলিত গ্রাহক হিসেবের টাকা ব্যবহার করেছে। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে এসপিসিএলের  শেয়ার ক্রয়ের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে। এতে করে বাজারে এসপিসিএলের শেয়ারের ঘাটতি দেখা যায়। এমনকি পিএফআই সিকিউরিটিজ ক্লায়েন্ট হিসেবে অনুমোদিত ঋণ অনুপাতের অধিক হারে মার্জিন ঋণ প্রদান করে মার্জিন রুলসেরও বরখেলাপ করে।

এসপিসিএলের শেয়ার নিয়ে কারসাজির কারণে জরিমানার মুখে পড়া আরেক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট। প্রাইম ইসলামি সিকিউরিটিজের এ সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজের সাথে থেকে একই ধরনের কারসাজি করে শেয়ারের দর বাড়ানোর পেছনে কাজ করে। একদিকে প্রতিষ্ঠানটি যেমন বিপুল পরিমান এসপিসিএলের শেয়ার কিনে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে অন্যদিকে মার্জিন ঋণের অনুমোদিত সীমার বাইরে গিয়ে মার্জিন ঋণ প্রদান করে ক্লায়েন্ট অ্যাকাউন্টে। আর এসব অনিয়মের কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে।

এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস লিমিটেডের জরিমানা হয়েছে এক লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদিত হিসাবের বাইরে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ প্রদাণ করে।

ব্রোকারেজ হাউজ শার্প ‍সিকিউরিটিজকে জরিমানা করা হয়েছে দুই লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে যে, তারা বিনিয়োগকারীদের ক্যাশ হিসাব এবং মার্জিন হিসাবে অ্যাভারেজ নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স ১০০ শতাংশের বেশি এসপিসিএলের শেয়ার ক্রয় করা হয় এর পাশাপাশি ক্লায়েন্ট হিসাবে অনুমোদিত ঋণ সীমার বাইরে গিয়ে গ্রাহককে মার্জিন ঋণ প্রদান করেছে।

বিএলআই ক্যাপিটাল লিমিটেডকে এসপিসিএলের শেয়ার লেনদেনে অনুমোদিত ঋণ সীমার বাইরে গিয়ে গ্রাহককে মার্জিন ঋণ প্রদান করায় এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি গেটকো  টেলিকমিউনিকেশন এবং লিবরা ট্রেডিং কর্পোরেশন নামক দুটি প্রতিষ্ঠান বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরীর জন্য উল্লেখযোগ্য এসপিসিএলের শেয়ার ক্রয় ও মজুদ করে। যার প্রমান বিএসইসি পেয়েছে। এ অপরাধের জন্য গেটকো টেলিকমিউনিকেশনকে পাঁচ লাখ টাকা এবং লিবরা ট্রেডিং কর্পোরেশনকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠান দুটি প্রাইম ইসলামি সিকিউরিটিজ থাকা অ্যাকাউন্টের মাধ্যেমে এ কারসাজি করে।

এদিকে ব্যাক্তি পর্যায়ে জরিমানা করা হয় গোলাম মহিউদ্দিনকে এবং আমজাদ হোসেন ফকির নামক ব্যাক্তিকে কমিশনের পক্ষ থেকে সতর্কতা দেয়া হয়। গোলাম মহিউদ্দিন ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্ট, শার্প সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এ সবকটি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক। কমিশন প্রমান পায় যে, এসপিসিএলের উল্লেখযোগ্য পরিমান শেয়ার ক্রয় ও মজুদের মাধ্যেমে গোলাম মহিউদ্দিন বাজারে এসপিসিএলের শেয়ারের কৃত্রিম সংকট তৈরীতে অবদান রাখে। এর ফলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডন্যান্স-১৯৬৯ এর ১৭(ই)(পাঁচ) ধারা ভঙ্গ হয়। এ কারণে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অন্যদিকে শাহজীবাজার পাওয়ার পেট্রোমেক্স রিফাইনারি লিমিটেডের ৯৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেছে। এই পেট্রোমেক্স রিফাইনারি কমিশনে পুঁজি উত্তোলনের (ক্যাপিটাল রাইজিং) আবেদনে নগদে পুঁজি উত্তোলনের প্রস্তাব করলেও পরবর্তীতে নগদ ও এবং ঋণ সমন্বয়ের মাধ্যমে পুঁজি উত্তোলন করে। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স,১৯৬৯ এর সেকশন ১৮ ভঙ্গ করা।

এছাড়া কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত সময়ের মধ্যে পুঁজি উত্তোলন না করে পেট্রোমেক্স পরবর্তীতে কমিশনের অনুমোদন ছাড়া পুঁজি উত্তোলন করেছে। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ইস্যু অব ক্যাপিটাল) রুলস,২০০১ এর রুল ৩ এবং রুল ৪ ভঙ্গ।

পেট্রোমেক্স রিফাইনারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণের সুদ যথাযথভাবে আর্থিক হিসাব বিবরণীতে গণণা না করে মুনাফা অতিরিক্ত দেখিয়েছে (প্রফিট ওভারস্টেটেড),যা শাহজীবাজার এর সমন্বিত আর্থিক হিসাব বিবরণীতেও প্রতিফলিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে এসপিসিএল এর শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ওভারস্টেটেড হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হয়েছেন। পেট্রোমেক্স তথা শাহজীবাজার এর বর্ণিত কার্যক্রম সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস,১৯৮৭ এর রুল ১২(২) পরিপন্থী।

এ কারণে উল্লেখিত সিকিউরিটিজ আইনসমূহ ভঙ্গের জন্য কমিশন পেট্রোমেক্সের প্রত্যেক পরিচালককে (যদি স্বতন্ত্র পরিচালক থাকেন তিনি ব্যাতিত) ১০ লাখ টাকা করে এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে শাহজীবাজারের শেয়ারে কারসাজি করার জন্য স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে মামলার মুখে পড়ছে আবুল কালাম ইয়াজদানি (সিইও,পিআইএসএল),গোলাম মোস্তফা (এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস লি: এর ক্লায়েন্ট),নাসিমা আক্তার লতা (ভিশন ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ক্লায়েন্ট) এবং পিআইএসএল এর কর্পোরেট ক্লায়েন্ট স্টার শেয়ারবাজার লিমিটেড।

আবুল কালাম ইয়াজদানী কর্তৃক বিও হিসাব পরিচালন সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনকে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছে। যা সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স,১৯৬৯ এর সেকশন ১৮ ভঙ্গ।

আবুল কালাম ইয়াজদানী,গোলাম মোস্তফা,নাসিমা আক্তার লতা এবং স্টার শেয়ারবাজার লিমিটেড কর্তৃক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে লেনদেনযোগ্য এসপিসিএল এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার ক্রয় এবং তা সংরক্ষণের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে শেয়ার মূল্য বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। আবুল কালাম ইয়াজদানী,গোলাম মোস্তফা,নাসিমা আক্তার লতা এবং স্টার শেয়ারবাজার লিমিটেডের বর্ণিত কার্যক্রম সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স,১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(ভি) পরিপন্থি।

এ কারণে উল্লেখিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কমিশন,‘স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল’ এ মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

সর্বশেষ শাহজীবাজার এর প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (সিএফও) তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক বিবরণীতে (৩১ মার্চ,২০১৪ সময়ের) ডেফার্ড রেভিনিউ এক্সপেনডিচার গণণায় বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড বিএএস-৮(প্যারাগ্রাফ ৪১-৪৯),১৬,২৩ এবং ৩৮ পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছেন। উল্লেখিত ব্যর্থতার জন্য কমিশন শাহজীবাজারের সিএফওকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য,ইতোপূর্বে ৫৩০তম কমিশন সভায় ২০১৪ সালের ৩১শে মার্চ সময়ের তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতে অসত্য তথ্য সরবরাহের জন্য শাহজীবাজারের প্রত্যেক পরিচালককে ১০ লাখ টাকা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/সা/অ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.