আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

৩১ অক্টোবর ২০২০, শনিবার |

kidarkar

বাংলাদেশের বন্ড ও অন্যান্য ঋণ মার্কেট বিকাশে আইএফসিকে আরো সহযোগীতার আহ্বান অর্থমন্ত্রীর

শেয়ারবাজার রিপোর্ট: বাংলাদেশের বন্ড ও অন্যান্য ঋণ মার্কেট বিকাশে আইএফসির কাছে আরো সহযোগীতার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মু্স্তফা কামাল।

অর্থমন্ত্রী জানান, গত বছর লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে বিশ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বন্ড জারি করতে আইএফসির সহায়তা এবং সহযোগিতায় বিশ্বে প্রথমবারের মতো প্রাথমিক ভিত্তিতে ৮০৭ মিলিয়ন টাকা (৯.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সমপরিমান বাংলাদেশি ‘টাকা বন্ড’ চালু করা হয়েছিল, যা আগামী এক বছরে প্রায় ৮৫ বিলিয়ন টাকা (১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যমানের বন্ডে উন্নীত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিল আইএফসি। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত ছিল কারণ এটি আন্তর্জাতিক বাজারে জারি করা প্রথম বাংলাদেশী টাকা বন্ড। পরবর্তীতে করোনার কারনে এটি কিছুটা স্তিমিত হয়ে গেলেও আশা করা যায় এখন আবার আইএফসি এ খাতটি সমৃদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এজন্য আইএফসি-কে বাংলাদেশকে সহযোগীতা বাড়ানোর জন্য বিশেষত মহামারী দ্বারা আক্রান্ত হওয়া বেসরকারী খাতকে প্রণোদিত করার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি আইএফসিকে সুদের হার হ্রাস করার অনুরোধ করছি যাতে বেসরকারী খাত স্বল্প সময়ের মধ্যেই প্রত্যাবর্তন করতে পারে। বাংলাদেশের ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ বিশেষ করে বন্ড মার্কেট উন্নয়নের জন্য তিনি আইএফসির সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনও আশ্বস্ত করেন যে বাংলাদেশের বিষয়গুলো অবশ্যই ইতিবাচকভাবে দেখা হবে।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিশ্ব ব্যাংক–আইএমএফ এর বার্ষিক সভা-২০২০ এর অংশ হিসাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মু্স্তফা কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ও আইএফসি এর চিফ অপারেটিং অফিসার মিসেস স্টিফানি ফন ফ্রিডবার্গের নেতৃত্বে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) প্রতিনিধি দলের মধ্যে একটি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসাবে অর্থমন্ত্রী, বিশ্ব ব্যাংকে বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শফিউল আলম; আব্দুর রউফ তালুকদার, সিনিয়র সচিব, অর্থবিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন।

অন্যদিকে, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের পক্ষে মিসেস স্টিফানি ফন ফ্রিডবার্গ ও এশিয়া প্যাসিফিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মি: আলফোনসো গার্সিয়া মোরা এবং বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি ওয়ার্নার আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের বেসরকারী খাতে অব্যাহত সহযোগীতার মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আইএফসির অবদানের প্রশংসা করেন। এছাড়া কোভিড -১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সদস্য দেশগুলিকে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার সাম্প্রতিক উদ্যোগের জন্যও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী কোভিড-১৯ এর টিকা আবিস্কারের সাথে সাথে বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ অত্যন্ত আগ্রহী এবং বদ্ধপরিকর, তাই এ বিষয়েও আইএফির করনীয় নিশ্চিতে তিনি আহ্বান জানান।

অর্থমন্ত্রী বলেন, কোভিড -১৯ নির্বিচারে বিশ্ব অর্থনীতি ও মানবজীবন হুমকীর সম্মুখীন করেছে, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ আয়ের দেশ অর্জনের প্রত্যাশায় আত্মবিশ্বাসী। বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে কোভিড ১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে অর্থনীতিকে আবার পুনরুদ্ধার করতে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকৃতি জানাই। উদ্যোগগুলির মধ্যে জিডিপির ৪.৩% সমতুল্যের ১৪.১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রনোদনা প্যাকেজ অন্যতম।

সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার অর্থবিভাগ সভাকে অবহিত করেন যে, আর্থিক খাত পুনর্গঠন ও সুদের হার ক্যাপিং এ আমারা কাজ করে চলেছি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সলভেনসি এ্যাক্ট, ব্যাংক কোম্পানী এ্যাক্ট, এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এ্যাক্টসহ বেশ কিছু এ্যাক্ট প্রনয়নের কাজে করছে, যা আমাদের আর্থিক খাত পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমাদের সরকার কোভিড-১৯ টিকা ক্রয়ের বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী এবং বদ্ধপরিকর।

অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে দেশের সকল মানুষকে টিকা আবিস্কারের সাথে সাথে টিকা বিতরন নিশ্চিত করনের আশা ব্যক্ত করেছেন। তাই এ খাতে আমাদের বড় অংকের অর্থের সংস্থানের বিষয়টিও জড়িত। আমাদের দেশীয় তিনটি ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে তাদের প্রতিষ্ঠানকে টিকা তৈরী করার উপযোগী করতে শুরু করেছে, আশা করা যায় টিকা আবিস্কারের ছয় মাসের মধ্যেই এ প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে টিকা প্রস্তুত করতে সক্ষম হবে। যেহেতু আমাদের বিশাল জনসংখ্যার জন্য সব টিকাই আমদানী করা সম্ভব নয়, তাই আমাদের দেশীয় টিকার উপরও আমরা গুরুত্ব দিব। এসকল প্রতিষ্ঠানেরও টিকা প্রস্তুত করতে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, আইএফসির এ খাতে সহযোগীতা করার সুযোগ রয়েছে।

২০২৪ সালে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হবে, এসডিজির সাফল্য সহ উন্নয়নের পরবর্তী পর্যায়ের জন্য বেসরকারী মূলধনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) -তে আইএফসির উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০১৭-২০২১ অর্থবছরের মধ্যে বাংলাদেশে আইএফসির ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের (এলটিএফ) দেওয়া প্রতিশ্রুতি এবং ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত তার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল কর্তৃক এ বিষয়গুলোও আলোচনায় প্রাধান্য পায়।

 

শেয়ারবাজার নিউজ/এন

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.