ওটিসির ২১ কোম্পানির পর্ষদকে তলব বিএসইসির
আতাউর রহমান: দেশের উভয় শেয়ারবাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওভার-দ্য কাউন্টার (ওটিসি প্ল্যাটফর্ম ) মার্কেটে তালিকাভুক্ত ২১টি কোম্পানিকে তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে উপযুক্ত ‘কর্ম পরিকল্পনা’ দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সাথে আর্থিক অবস্থার তথ্য অনুসন্ধানের লক্ষ্যে আরো ১১টি বিষয়ে তথ্য চেয়েছে। এবং কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও কোম্পানি সচিবকে শুনানির জন্য তলব করেছে কমিশন।
আজ রোববার ওটিসির ২১টি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদসহ ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
কোম্পানিগুলো হচ্ছে- বিডি মনোস্পুল পেপার, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, তমিজ উদ্দিন টেক্সটাইল মিলস, মুন্নু ফেব্রিক্স, আজাদী প্রিন্টার্স, বাংলাদেশ হোটেলস, রহমান কেমিক্যালস, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজ, অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস, ইউসুফ ফ্লাওয়ার মিলস, গাছিহাটা অ্যাকুয়াকালচার ফার্ম, হিমাদ্রি, যশোর সিমেন্ট কোম্পানি, ম্যাক এন্টারপ্রাইজ, ম্যাক পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ, মোনা ফুড প্রোডাক্টস, পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার, ফিনিক্স লেদার কমপ্লেক্স, দ্যা ইঞ্জিনিয়ার্স, বেঙ্গল বিস্কুট ও হিল প্ল্যান্টেশন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে কোম্পানিগুলো উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ওটিসি প্ল্যাটর্ফমে তাকিাভুক্ত রয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত থাকা সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো সিকিউরিটিজ আইন যথাযথভাবে পরিপালন করছে না এবং প্রতিনিয়তই আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে না পারার জন্য ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।
এছাড়া ওটিসির কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করে দীর্ঘদিন ধরে কোনো মুনাফা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। কখনও কখনও এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা সর্বস্ব খুইয়েছেন। ফলে এ পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বার্থহানিকর ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসির কাছে অগ্রহণযোগ্য।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৬৯ এর ধারা ১১(২) অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে পরিচালনা পর্ষদ, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও কোম্পানি সচিবকে বিভিন্ন দিনে শুনানির জন্য বিএসইসিতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া কোম্পানিগুলোর কাছে যে ১১টি বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন ও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন; বর্তমান আর্থিক অবস্থার প্রতিবেদন; সকল সম্পত্তির বর্তমান অবস্থা; উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বর্তমান শেয়ার ধারণের অবস্থা; প্রসপেক্টাস, প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), পুন:প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আরপিও) ও রাইট ইস্যুর তথ্যের (আরওডি) কপি; কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা; আইপিওর মাধ্যমে সংগ্রহীত অর্থের ব্যবহার ও অব্যবহৃত অর্থের তথ্য; ব্যাংকের কাছে বর্তমান দায়বদ্ধতা ও ঋণের তথ্য; ইনভেন্টরির তথ্য; ট্যাক্স ও ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের তথ্য এবং কোম্পানি সংক্রান্ত আরো প্রয়োজনীয় তথ্য।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, ওটিসি মার্কেটকে পুনর্গঠন করা জরুরি। তবে ওটিসি থেকে যেসব কোম্পানি বাদ দেওয়া হবে, তাদের বাদ দেওয়ার আগে অবসায়নের ব্যবস্থা করা উচিত। এটা করা হলে শেয়ারহোল্ডাররা কিছুটাও হলেও উপকৃত হবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, ওটিসির কোম্পানিগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পর্যাক্রমে তাদেরকে বিএসইসিতে শুনানির জন্য তলব করা হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) কাছে ওটিসি মার্কেটে তালিকাভুক্ত ২১ কোম্পানির ওপর বিশেষ নিরীক্ষা করার নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে ওটিসির আরও ৪৩ কোম্পানির বিষয়ে সার্বিক প্রতিবেদন তৈরিরও নির্দেশ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ডিএসইর ওটিসি মার্কেটে রয়েছে ৬৪টি ও সিএসইর ওটিসি মার্কেটে ৪৯টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে।