আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৬ ডিসেম্বর ২০২০, শনিবার |

kidarkar

চালের বাজার নিয়ন্রনহীন হবার পিছনে রয়েছে সিন্ডিকেটদের কারসাজি

শেয়ারবাজার ডেস্ক: এখন আমনের ভরা মৌসুম। প্রতি বছর মৌসুমের শুরুতে ধান-চালের দাম কম থাকে। কিন্তু এবার উলটো ঘটনা ঘটেছে। দাম বেশি। ধানের দাম গত মৌসুমের তুলনায় মণপ্রতি দুই শ থেকে আড়াই শ টাকা বেশি। বেশি চালের দামও। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেটের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, মোটা চাল ইরি/স্বর্ণার ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ, আর মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতার দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি আমন মৌসুমে পরপর চার দফা বন্যায় আমনের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১৫ লাখ টন চাল কম উত্পাদন হতে পারে কিন্তু যে পরিমাণ চাল উত্পাদন হবে তা দিয়ে আগামী জুন পর্যন্ত চাহিদা মিটিয়েও কমপক্ষে ২৮ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে।

এই গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর আমন মৌসুমে ১ কোটি ৫৫ লাখ টনের কিছু বেশি চাল উত্পাদন হয়েছিল। তবে চলতি আমন মৌসুমে বন্যায় ৩৫টি জেলার আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমন চালের উত্পাদন প্রায় ১০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ কমে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৮০ হাজার টনে নামতে পারে। কিন্তু তাতে দেশে খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, আমনের উত্পাদন কম ও সরকারের গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসায় একটি সিন্ডিকেট চাল নিয়ে কারসাজি শুরু করেছে। তারা সরকারের মজুত খাদ্যের পরিমাণ কমে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছে। খাদ্য অধিদপ্তরের প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বর্তমানে সরকারের গুদামে ৭ দশমিক ৮৮ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে চাল ৫ দশমিক ৫৬ লাখ টন ও গম ২ দশমিক ৩৩ লাখ টন। অথচ মাত্র এক মাস আগে গত ৫ নভেম্বর খাদ্যশস্যের মজুত ছিল ১০ লাখ ৩ হাজার ২০ টন। আর গত বছর এই সময়ে সরকারের গুদামে খাদ্যশস্যের মোট মজুত ছিল ১৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৪০ টন। এর মধ্যে চাল ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৭৩০ টন এবং গম ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১১০ টন। এই হিসাবে গত প্রায় এক বছরের ব্যবধানে সরকারের গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত কমেছে ৮ লাখ ৮ হাজার ৮৪০ টন।

সূত্র জানিয়েছে, করোনা মহামারি ও চলতি বছর দেশে চার দফা বন্যার কারণে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার এ বছর কর্মহীন, অসহায় মানুষদের প্রচুর পরিমাণে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে। ফলে সরকারের মজুত খাদ্যের পরিমাণ দ্রুত কমেছে। আর সরকারের মজুত খাদ্যের পরিমাণ কমায় এর সুযোগ নিচ্ছে এই সিন্ডিকেট। খাদ্য মন্ত্রণালয় কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও এই চক্রকে চালের দাম বাড়ানো থেকে নিবৃত রাখা যায়নি। এখন আমনের ভরা মৌসুমেও তারা চালের দাম বাড়াচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৪৬ থেকে ৫০ টাকা, মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ৫৩ থেকে ৫৮ টাকা ও সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু এক মাস আগে ইরি/স্বর্ণা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, পাইজাম/লতা ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা ও নাজিরশাইল/মিনিকেট ৫২ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। এ হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে নাজিরশাইল/মিনিকেটের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, ইরি/স্বর্ণার ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ আর পাইজাম/লতার দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির এই হার যথাক্রমে ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও ৪৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বলে টিসিবি তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে।

এদিকে চালের পাশাপাশি বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৩ টাকা বেড়ে ১০৪ থেকে ১০৭ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাম অয়েল প্রতি লিটারে ৩ টাকা বেড়ে ৯৩ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বাজারে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৫৩০ থেকে ৫৮০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৫১০ থেকে ৫৬০ টাকা।

শেয়ারবাজার নিউজ/মি

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.