একের পর এক হারিয়েছে যে মুখগুলো
শেয়ারবাজার ডেস্ক: ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়ের নাম গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতায় থেকে যাবে যা পুরু মানব জাতিকে কোনঠাসা করেছে। ২০২০ বছরটি একটি অদৃশ্য ভাইরাসের কাছে হারিয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বটাকে।জানা -অজানা,চেনা-অচেনা অনেক মুখ প্রিথিবী থেকে চোখের পলকে হারিয়ে গেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন মৃত্যু আসবে যা কেও কল্পনা করেনি। ছেলের লাশ বাবা ছুতে পারেনি। মায়ের লাশ সন্তান ছুতে পারেনি। আর প্রবাশে যারা প্রাণ হারিয়েছে করোনা মহামাড়িতে তাদের মুখটাও দেখার সুযোগ হয়নি প্রিয়জনদের।পৃথিবী আবার আশার আলো দেখছে টিকা আবিস্কারের ভিতর দিয়ে।
টিকা আবিষ্কার হলেও কতটা কার্যকর হবে, তারও অপেক্ষায় থাকতে হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে লাখ লাখ লোক, যাদের মধ্যে রয়েছেন পৃথিবীকে আলোকিত করা এবং মানব সমাজের জন্য কল্যাণকর কাজ করা অনেক মনীষী। সারা পৃথিবীর মতোই এ বছর আমরাও হারিয়েছি আমাদের জাতির নানা ক্ষেত্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সন্তানকে।
অদৃশ্য ভাইরাস করোনার ছোবল থেকে যেন কেউই রেহাই পাচ্ছে না। খ্যাতনামা ব্যক্তি, শিল্পপতি, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, চিকিত্সক, পুলিশ-র্যাব-বিজিবির সদস্য, সেনাসদস্য, ব্যবসায়ী, আমলা, ব্যাংক কর্মকর্তা, দুদক কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্ব—কেউ-ই বাদ যাচ্ছেন না এই ভাইরাস থেকে। ২০২০ সালেই রেকর্ড পরিমাণ গুণী মানুষ হারিয়েছি আমরা, যাদের অধিকাংশই মারা গেছেন প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। হারিয়ে গেছেন অনেক প্রিয় ও আলোচিত মুখ।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিশিষ্টজনদের মধ্যে করোনার চিকিত্সক সিলেটে গরিবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত ডা. মো. মঈন উদ্দিন মারা যান এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। এরপর একে একে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিত্সারত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন। শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি কর্মজীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক পান।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, ’৭৫-এ জেলখানায় হত্যাকাণ্ডের শিকার জাতীয় চার নেতার একজন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে।
মারা গেছেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, বাংলাদেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগের নেতা এবং সাবেক এমপি হাজি মকবুল হোসেন, বাংলাদেশি শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী লতিফুর রহমান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর স্ত্রী সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল নিলুফার মঞ্জুর, দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলম।
শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস (প্রা.) লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইমামুল কবীর শান্ত, খ্যাতিমান প্রকৌশলী জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, সাবেক অর্থ ও বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আনোয়ারুল কবির তালুকদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব বজলুল করিম চৌধুরী, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিফ হেমোটোলজিস্ট অধ্যাপক কর্নেল (অব.) মো. মনিরুজ্জামান, দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি, দারুল উলুম হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী, হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী, প্রথিতযশা আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বিশিষ্ট শিল্পপতি এম এ হাসেম, সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী, সি আর দত্ত, বিশিষ্ট রাজনীতিক শওকত আলী, শিল্পী মুর্তজা বশীর, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান; বাংলাদেশ, পাকিস্তান, জর্ডান ও ইরাকের বিমানবাহিনীর বৈমানিক সাইফুল আজম, ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা আবদুল মোনেম, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নূরুল ইসলাম মঞ্জুর, সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা, শিল্পনির্দেশক ও অভিনেতা মহিউদ্দীন ফারুক, শিক্ষাবিদ সুফিয়া আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের নবম চেয়ারম্যান সা’দত হুসাইন, শিক্ষাবিদ বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, সাবেক সাংসদ কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন প্রমুখ।
২০২০ সালেই রেকর্ড পরিমাণ তারকা ও গুণী মানুষকে হারিয়েছে বাংলা শোবিজ, যাদের অধিকাংশই মারা গেছেন প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন—সুরের জাদুকর আলাউদ্দীন আলী, মঞ্চ ও নাট্যজগতের কিংবদন্তি আলী যাকের, প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর, ‘বদি ভাই’ খ্যাত অভিনেতা আবদুল কাদের, সাদেক বাচ্চু, কে এস ফিরোজ, অভিনেতা মহিউদ্দিন বাহার, চলচ্চিত্র প্রযোজক মতিউর রহমান পানু, একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক রানা হামিদ, সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান, অভিনেত্রী মিনু মমতাজ, সুরকার সেলিম আশরাফ, নৃত্য পরিচালক হাসান ইমাম, পরিচালক নাসির উদ্দিন দিলু, সংগীতার স্বত্বাধিকারী সেলিম খান, চিত্র সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মিন্টু, চিত্রনায়িকা জবা, অভিনেত্রী, নির্দেশক ও আবৃত্তিশিল্পী ইশরাত নিশাত, চলচ্চিত্র প্রযোজক মোজাম্মেল হক সরকার, সহস্রাধিক সিনেমার নৃত্য পরিচালক এস আলম, নাট্যশিল্পী স্বপন সিদ্দিকী, চিত্র পরিচালক আফতাব খান টুলু, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফউদ্দীন খান দীপু, আনন্দমেলা চলচ্চিত্রের আব্বাস উল্লাহ, মুভি মোঘল খ্যাত প্রযোজক কে এম জাহাঙ্গীর খান, টিভি ব্যক্তিত্ব প্রযোজক, নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা মোস্তফা কামাল সৈয়দ, টেলিভিশন নৃত্যশিল্পী সংস্থার সাবেক সভাপতি নৃত্যশিল্পী হাসান ইমাম, নওগাঁ-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ, দৈনিক সময়ের আলোর নগর সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খোকন, সাংবাদিক নেতা ও এনটিভির যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুস শহীদ, ভোরের কাগজের ক্রাইম রিপোর্টার গীতিকার আসলাম রহমান, দৈনিক সময়ের আলোর মাহমুদুল হাকিম অপু, বাংলাদেশ আনসার কারাতে দলের কোচ হুমায়ুন কবীর জুয়েল, ফুটবলার বাদল রায়, নওশেরুজ্জামান, গোলাম রাব্বানী হেলাল, নুরুল হক মানিক প্রমুখ।
শেয়ারবাজার নিউজ/মি