আজ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১১ জানুয়ারী ২০২১, সোমবার |

kidarkar

ঘটনার সত্যতা যাচাই না করে আমার ছেলেকে খুনি বা ধর্ষক বলতে পারবেননা: দিহানের মা

শেয়ারবাজার ডেস্ক: ধর্ষণের উদ্দেশ্যে নয়, একান্তে সময় কাটাতে বাসায় আনুশকাকে ডেকেছিল বলে গণমাধ্যম বরাবর পাঠানো খোলা চিঠিতে অভিযুক্ত দিহানের মা দাবি করেছেন। তিনি এ ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন জানিয়ে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে জানা গেছে, রাজধানীর ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনের সঙ্গে ফারদিন ইফতেখার দিহানের আরও দুই মাস আগে থেকে সম্পর্ক ছিল। তবে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। হাসপাতালের দেওয়া বয়সের ওপর ভিত্তি করে নিহতের বয়স প্রাথমিকভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা গতকাল এ হত্যা মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। আবেদনে বলা হয়, ‘এ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ঘটনাস্থল থেকে নিহত স্কুলছাত্রীর ওড়না, সালোয়ার, কামিজ, বিছানার চাদর, বালিশের কাপড় জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা এ আলামতে ডিএনএর উপাদান বিদ্যমান আছে কিনা তা পরীক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন।’ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কলাবাগানের একটি বাসায় আনুশকার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মো. আল আমিন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা করেন। দিহানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

দিহানের মায়ের খোলা চিঠি :
গত ৭ জানুয়ারি আমার বাসায় আমার ছেলে দিহান ও ওর বান্ধবী অরনা আমিনের ঘটনায় আমি হতবাক। একজন মা ও নারী হিসেবে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। গত দুদিন আমি কোনো সংবাদমাধ্যমে কথা বলিনি। কারণ, আমি পুরো ঘটনা বোঝার চেষ্টা করেছি। দিহানের বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমার ছেলের ধর্ষণ এবং হত্যার উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা মা হিসেবে জানার চেষ্টা করেছি। একজন নারী হিসেবে কোনো কিশোরীর অসম্মান হোক বা ধর্ষিত হোক- কখনো চাই না।

৭ জানুয়ারি সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে আমি আমার অসুস্থ পিতাকে দেখতে যাওয়ার জন্য দিহানকে বাসায় একা রেখে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা হই। আমার অন্য ছেলে নিজের কর্মস্থলে ছিল। যমুনা সেতু পার হওয়ার পর দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে প্রাথমিকভাবে জানতে পারি মডার্ন হাসপাতালে দিহানের বান্ধবী মারা গেছে। দিহানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দ্রুত ঢাকায় এসে দেখি পুলিশ আমার বাসায়। জানলাম মেয়েটি আমার বাসায় দিহানের সঙ্গে দেখা করতে এসে ধর্ষিত হয়েছে এবং মারা গেছে। মা হিসেবে আরও আগে থেকেই একটু আন্দাজ করতে পেরেছি, আমার ছেলে কোনো একটি সম্পর্কে জড়িয়েছে। কিন্তু কোন মেয়ের সঙ্গে, তা জানা ছিল না। তবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে মেয়েটির ‘Aurna Amin’ নামের ফেসবুক আইডিতে দিহানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবি, দিহানকে নিয়ে কবিতা লিখা ইত্যাদি দেখে মনে হলো এই মেয়েটির সঙ্গেই দিহান সম্পর্কে জড়িয়েছে। আমি ধারণা করছি, আমি বাসা থেকে বের হওয়ার পর দিহান মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করলে মেয়েটি আমার বাসায় আসে। দিহানের সঙ্গে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক ছিল বিধায় মেয়েটি আমার বাসায় এসেছিল। আমি মনে করি, ধর্ষণ বা হত্যার উদ্দেশ্যে দিহান মেয়েটিকে বাসায় ডাকেনি। একজন আরেকজনকে ভালোবাসে। সেই হিসেবে একান্তভাবে সময় কাটানোর জন্যই হয়তো ডেকেছিল। উভয়ের বয়স কম। একজন নাবালিকা এবং আমার ছেলেরও বয়স ১৮ বছর ৭ মাস অর্থাৎ কিশোর। আবেগের বশে উভয়েই শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিল এবং অপরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে। পরবর্তীতে যা হয়েছে তা নিতান্তই দুর্ঘটনা মনে হচ্ছে। আমার ছেলে ধর্ষক বা হত্যাকারী হলে সে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করত কিন্তু সে তা করেনি। সে নিজে গাড়ি করে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। মেয়েটির মাকে ফোন করেছে, পুলিশের কাছে ঘটনা স্বীকার করেছে। আমার ছেলে যদি মেয়েটির সঙ্গে অন্যায় করে তাহলে একজন নারী হিসেবে আমিও আমার ছেলের যথাযথ বিচার হোক সেটা চাই।
কিন্তু মেয়েটির ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল কিনা এবং একমাত্র শারীরিক সম্পর্কের কারণেই রক্তক্ষরণ ও মৃত্যু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ প্রশাসনের ওপর আমি বিশ্বাস রাখতে চাই এবং বিচার বিভাগের ওপর আস্থা রাখতে চাই। বিচারের আগে আমার ছেলেকে ধর্ষক বা হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত না করার জন্য সমাজের সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ :
আদালত প্রতিবেদক জানান, আনুশকা নূর আমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা এ নির্দেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান আদালতে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, এ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ঘটনাস্থল থেকে নিহত স্কুলছাত্রীর ওড়না, সালোয়ার, কামিজ, বিছানার চাদর, বালিশের কাপড় জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা এ আলামতে ডিএনএর উপাদান বিদ্যমান আছে কিনা তা পরীক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়া নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে জব্দ করা মালামাল চিফ ডিএনএ এনালিস্ট ফরেনসিক, ডিএনএ ল্যাবরেটরি অব বাংলাদেশ পুলিশ ও সিআইডির পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মামলার একমাত্র হাজতি আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহানেরও নমুনা সংগ্রহ করা প্রয়োজন। শুনানি শেষে বিচারক তদন্ত কর্মকর্তাকে ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দেন।

শেয়ারবাজার নিউজ/মি

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.