বীমা কোম্পানিকে পূর্বের আইন বাস্তবায়নের নির্দেশ আইডিআরএ’র: শেয়ারবাজারে বিভ্রান্ত বিনিয়োগকারীরা!
আতাউর রহমান: দেশের বীমা কোম্পানিগুলোকে পূর্বের আইন বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দিয়েছে খাতটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে পরিশোধিত মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ বীমা কোম্পানিগুলোকে এক মাস সময় দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইডিআরএ গত ১২ জানুয়ারি ১২টি জীবনবীমা ও ১৭ জানুয়ারি ৩০টি সাধারণ বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) এ বিষয়ে দুটি চিঠি দিয়েছে।
এবং গত সোমবার (১৮ জানুয়ারি) আইনটি পরিপালনের নির্দেশনা জারি করেছে আইডিআরএ।
এদিকে এ নির্দেশনার সংবাদে গত মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের ৪৯টির কোম্পানির মধ্যে ৪৬টির বা ৯৪ শতাংশের শেয়ার দর বেড়েছে। সেই সাথে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) টপটেন গেইনার তালিকায় শতভাগ দখলে ছিল বীমা খাতের। তবে পরে এ বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয় সকল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। বিভিন্ন প্রশ্ন তৈরি হয় সকলের মাঝে। যার মধ্যে বেশি যে আলোচনা হয়েছে যে, নির্দেশনা অনুযায়ী কি সকল বীমা কোম্পানিকে (তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত) এ আইন পরিপালন করতে হবে কিনা। নাকি শুধু তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে।
এছাড়া এ আইন কি পুরানো ও নতুন উভয় কোম্পানিকে পরিচালনা করতে হবে নাকি শুধু নতুন কোম্পানিকে পরিপালন করতে হবে। এবং নতুন যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে শুধু তাদের পরিপালন করতে হবে। এরকম নানা প্রশ্ন ও বিভ্রান্তের মধ্যে থাকেন বিনিয়োগকারীরা।
যার ফলে বীমা খাতের বড় উত্থানের ঠিক পরের দিন গতকাল বুধবার (২০ জানুয়ারি) খাতটির বেশিরভাগ শেয়ার দর কমেছে।
এদিকে নির্দেশনা লক্ষ্য করলে দেখা যায় সেখানে বলা হয়েছে যে, লাইফ ও নন-লাইফ—উভয় ধরনের কোম্পানিকেই বিমা আইন, ২০১০-এর ২১(৩) ধারা পরিপালন করতে বলা হয়েছে। বিমা আইনের ওই ধারার তফসিল-১-এ বলা হয়েছে, দেশে নিবন্ধিত লাইফ বিমা কোম্পানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হবে ৩০ কোটি টাকা, যার ৬০ শতাংশ আসবে উদ্যোক্তাদের কাছ থাকে। আর বাকি ৪০ শতাংশ নেওয়া হবে জনসাধারণের কাছ থেকে। আর দেশে নিবন্ধিত নন-লাইফ বিমা কোম্পানির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, পরিশোধিত মূলধন হবে ৪০ কোটি টাকা, যার ৬০ শতাংশ উদ্যোক্তারা দেবেন আর ৪০ শতাংশ উন্মুক্ত থাকবে জনসাধারণের জন্য।
নির্দেশনা বিশ্লেষন করে দেখা যায় যে, লাইফ ও নন-লাইফ উভয় কোম্পানির বিমা আইন- ২০১০ পূর্বের নির্দেশনা। নির্দেশনাটি কোনো নতুন আইন নয়। উপরিউক্ত নির্দেশনাটি পূর্ব থেকেই পরিপালনের জন্য আইন অনুযায়ী বলা হয়েছে। এবং কোম্পানিগুলো আইন অনুযায়ী নির্দেশনা পরিপালনে বাধ্য। তবে বেশিরভাগ কোম্পানিগুলো এতদিন পরিপালন করে আসছিল না। বিষয়টি আইডিআরএর নজরে এসেছে এবং সম্প্রতি নির্দেশনার মাধ্যমে পরিপালনের জন্য সময় বেঁধে দিয়ে বাধ্য করে দিচ্ছে।
এবং নির্দেশনাটি পুরানো এবং নতুন ও তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত সকল কোম্পানিকেই পালন করতে হবে। যদি কোন বিশেষ কোম্পানির ক্ষেত্রে বলা হতো তবে তা নির্দেশনায় উল্লেখ থাকতো।
এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, করোনার কারণে পুরো বিমা খাতই সমস্যায় আছে। এখন এই চিঠি পরিপালন করা দুরূহ। তবে নতুন কোম্পানিগুলোর শেয়ার ধারণের হার কার্যকর করা যায়। আগেরগুলোকে আগের হারেই চলতে দিতে হবে।
অপরদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান শেয়ারবাজারে নিউজকে বলেন, নির্দেশনায় পুরানো বা নতুন কোম্পানিকে নির্দিষ্ট করে বলা নেই। আইনে বলা আছে তাই সকল কোম্পানিকেই পালন করতে হবে। আইনটি পালন হলে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীগুলো কাঠামোগত আরো মজবুত হবে ও পরিপূর্ণতা পাবে।
এ বিষয়ে এনসিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজের চীফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মনজুরুল আলম শেয়ারবাজার নিউজকে বলেন, এতদিন ধরে আইনটি পরিপালন করা হয়নি, কিন্তু এখন পরিপালন করা যেতে পারে। সবার স্বার্থে এটি পরিপালন করা দরকার। যেহেতু এটি একটি নিয়ম, তাই নিয়মের ব্যত্যয় হওয়া ঠিক নয়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে বর্তমানে ৪৯টি বিমা কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে নন-লাইফ ৩৭টি এবং লাইফ ১২টি। এর মধ্যে নন-লাইফের মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকার নিচে রয়েছে মাত্র ৪টির। তবে লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম রয়েছে মাত্র দুটির।
ডিএসই সূত্রে আরও জানা গেছে, তালিকাভুক্ত ৪৯ বিমা কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৫টির উদ্যোক্তাদের শেয়ার রয়েছে ৬০ শতাংশ বা তার বেশি। এ ছাড়া ৬০ শতাংশের নিচে রয়েছে ৪৪টি কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার।
শেয়ারবাজার নিউজ/এন