আজ: মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ইং, ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৫ মার্চ ২০২১, শুক্রবার |

kidarkar

প্রাথমিক কার্যক্রম চালাতেই তহবিল সংকটে ইউনাইটেড এয়ারের পর্ষদ

আতাউর রহমান: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে নতুন করে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে সাতজন নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে প্রাথমিক কার্যক্রম পরিচালনায় তহবিল সংকটে পড়েছে দায়িত্ব নেওয়া কোম্পানির নতুন পরিচালনা পর্ষদ।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ পাঁচ বছর থকে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কোম্পানিটির দায় ও লোকসান বেড়েছে। নেই কোন কোম্পানি পরিচালনা তহবিল।৮২৮ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিটি প্রাথমিক পর্যায়ের খরচ বহন করতে পারছে না। এছাড়া অফিস স্টাফদের বেতনও দিতে পারছে না কোম্পানিটি। আর নতুন নিয়োগকৃত স্বতন্ত্র পরিচালকদের তহবিল যোগান দেওয়ার সামর্থ নেই। তাই এ পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির কার্যক্রম পরিচালনা করাই ইউনাইটেড এয়ারের পরিচালনা পর্ষদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে বিএসইসির সহায়তা চেয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।

তবে কোম্পানিটির তারল্য সংকট দূর করতে নতুন পরিচালনা পর্ষদকে সার্বিক সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছে বিএসইসি।

বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) বিকালে আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ কমিশনারদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ইউনাইটেড এয়ারের নতুন পরিচালনা পর্ষদ। দুই পক্ষের আলোচনায় কোম্পানিটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ এসব তথ্য তুলে ধরেন বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদ উল আলম শেয়ারবাজার নিউজকে বলেন, ‘এখনও কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পাওয়া যায়নি। আগামী সপ্তাহে কোম্পানিটির কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদ আলোচনায় বসব। পরবর্তীতে আমরা অফিসে যায়ে কোম্পানিটির বুকস অব অ্যাকাউন্টস দেখব। তারপর কোম্পানিটির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে বলা যাবে। আর আমরা বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে কোম্পানিটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করব। আমদের চেষ্টা থাকবে বিনিয়োগকারীদের লগ্নি করা অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’

এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ শেয়ারবাজার নিউজকে বলেন, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে যাদেরকে নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা আমাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে। সাক্ষাতে তাদেরকে সিকিউরিটিজের যেসব আইন-কানুন রয়েছে সেগুলো মেনে কোম্পানিটিকে পুনঃঅবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে। আইন মেনে যতটুকু সহযোগীতা করা সম্ভব, বিএসইসির পক্ষ থেকে সেটা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে সাতজন নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা হলেন- কাজী ওয়াহিদ উল আলম, এম সাদিকুল ইসলাম, মাসকুদুর রহমান সরকার, এটিএম নজরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. বদরুজ্জামান ভূইয়া, মুহাম্মদ ইউনুস ও মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ। পরবর্তীতে সৈয়দ এরশাদ আহমেদ নামে আরো একজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিএসইসি।

প্রসঙ্গত, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ১ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। তালিকাভুক্তির পরের বছর ২০১১ সালে কোম্পানিটি ১০ টাকা ফেসভ্যালুর সঙ্গে অতিরিক্ত ৫ টাকা প্রিমিয়াম নিয়ে ২১ কোটি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩১৫ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করে। ৮২৮ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৮২ কোটি ৮০ লাখ ৯৮ হাজার ৪৮০টি। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৭৬ দশমিক ২২ শতাংশ শেয়ার। প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ৬ দশমিক ৩৮ এবং উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে টানা ৯ বছর শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দেয়নি ইউনাইটেড এয়ার। এ ব্যর্থতার কারণে ২০১৬ সাল থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.