রিভিউর প্রস্তুতি নিতে বলেছেন মুজাহিদ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের প্রস্তুতি নিতে নিজের আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বের হয়ে আসার সময় শনিবার দুপুর ১২টার দিকে কারাফটকে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তার আইনজীবী শিশির মো. মনির।
তিনি বলেন, ‘তিনি (মুজাহিদ) নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তাকে ঠিক কোন অভিযোগে এবং কাকে হত্যার জন্য সর্বোচ্চ আদালত মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন, সেটি তার বোধগম্য নয়।’
এর আগে এ্যাডভোকেট শিশির মো. মনিরের নেতৃত্বে শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে আইনজীবীরা তার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন এ্যাডভোকেট মশিউল আলম, এ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন, এ্যাডভোকেট নাজিবুর রহমান ও এ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী জানান, শনিবার বেলা ১১টা ২০মিনিট থেকে ১১টা ৫০মিনিট পর্যন্ত আইনজীবীরা মুজাহিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এর আগে, ১৬ জুন মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়েও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ মঙ্গলবার সকালে এ রায় ঘোষণা করেন।
তার বিরুদ্ধে আনা ৬ নম্বর অভিযোগটি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আদালতের দেওয়া সংক্ষিপ্ত রায়ে মুজাহিদের বিরুদ্ধে এ দণ্ড ঘোষণা করা হয়।
নিয়মানুযায়ী মুজাহিদের বিরুদ্ধে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ হওয়ার পর তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সুযোগ পাবেন। রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার পর সরকার যে কোনো সময় রায় কার্যকর করতে পারবেন।
২৭ মে উভয়পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষে আদালত ১৬ জুন রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেছিলেন। ওই দিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষে এ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন।
২৬ মে মুজাহিদের পক্ষে এ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান ও খন্দকার মাহবুব হোসেন যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।
১৮ মে রাষ্ট্রপক্ষে আংশিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ২৫ মে আসামিপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।
২৯ এপ্রিল এবং ৪, ৫, ৬, ১৭ ও ১৮ মে আপিলে পেপারবুক পড়া শেষ করেন মুজাহিদের আইনজীবী।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। একই বছরের ১১ আগস্ট খালাস চেয়ে সুপ্রীম কোর্টে আপিল করেন মুজাহিদ।
ট্রাইব্যুনালের পুরো রায়ের বিরুদ্ধে ১১৫টি যুক্তি নিয়ে আপিল করেন মুজাহিদ। ট্রাইব্যুনাল যেসব কারণে সাজা দিয়েছেন তার আইনগত ও ঘটনাগত ভিত্তি নেই বলেও দাবি করেন তিনি। মূল আপিল ৯৫ পৃষ্ঠার, এর সঙ্গে তিন হাজার ৮০০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয়েছে এবং দুটি প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১, ৩, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি। প্রমাণিত ১ নম্বর অভিযোগকে ৬ এর সঙ্গে সংযুক্ত করে এ দুটি অভিযোগে সমন্বিতভাবে এবং ৭ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড, ৫ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন, ৩ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রমাণিত না হওয়া ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে খালাস পান মুজাহিদ।
শেয়ারবাজারনিউজ/অ