আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২১ জুন ২০১৫, রবিবার |

kidarkar

বীমায় প্রশাসক বসানোর চিন্তাভাবনা

IDRA___শেয়ারবাজার রিপোর্ট: আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে না পারা বীমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ  হচ্ছে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা  বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।এ অবস্থায় ওই কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে আনতে প্রশাসক বসানোর চিন্তাভাবনা করছে সংস্থাটি।

তবে অভিযোগ রয়েছে আইডিআর এর অভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার জন্য গত চার বছর ধরে সংস্থাটি কোন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেনি। এর জন্য সংস্থাটি বিদ্যমান জনবল সঙ্কটকেই দায়ী করেছে। যদিও এই সঙ্কট আইডিআরএ এর জন্মলগ্ন থেকেই চলছে।

আজ ২১ জুন রোববার আইডিআরএ’র কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও প্রশাসন বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য মো: কুদ্দুস খান পুঁজিবাজার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন।

এসময় আইডিআরএ’র সদস্য মো: সুলতান-উল-আবেদিন মোল্লা এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা তানিয়া আফরিন উপস্থিত ছিলেন।

১৯৫৮ সালের বীমা বিধিমালা অনুযায়ী, ব্যবসায়িক নিবন্ধনের পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে বীমা কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর এ নিয়ম পালনে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোকে শাস্তি স্বরুপ প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে জরিমানা গুণতে হবে। পরবর্তীতে আইডিআরএ গঠনের পর এই জরিমানার হার বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা করা হয়। তালিকাভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানিগুলোকে প্রতিদিন এইভাবে জরিমানা গুণতে হবে।

এ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে সদস্য মো: কুদ্দুস খান বলেন, শুধুমাত্র জরিমানা করাই সঙ্কটের সমাধান নয়। অথচ ১৯৫৮ সালের আইনটিতে ব্যর্থদের শাস্তি হিসেবে শুধু জরিমানার কথাই বলা হয়েছে। তাই আইডিআরএ তালিকাভুক্তি বিষয়ক এই সঙ্কটের সুষ্ঠু সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

২০১০ সালের বীমা আইনের মাধ্যমে এই সঙ্কটের সমাধান করা যায় কিনা জানতে চাওয়া হলে আইডিআরএ’র আরেক সদস্য মো: সুলতান-উল-আবেদিন মোল্লা বলেন, ২০১০ সালের আইনটিতেও এই বিষয়ের সমাধানে সরাসরি কিছু বলা নেই। তবে এই আইনের মাধ্যমে আমরা তালিকাভুক্তিতে ব্যর্থ বীমা কোম্পানিগুলোতে প্রশাসক বসাতে পারি। যাতে প্রশাসক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। তাছাড়া আমরা লিস্টিং রেগুলেশন পরিপালনে ব্যর্থ বীমা কোম্পানিগুলোকে একিভূত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু এর জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। আর এই বিষয়ে আমরা কাজ করছি।

নীতিমালা প্রণয়ন প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আগেই নতুন কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির জন্য নির্ধারিত সময়সীমা বাড়িয়েছি। এই সময়সীমা আইন অনুযায়ী আরো বাড়ানো যেতে পারে। তবে এর জন্য কোম্পানিগুলোকে সুষ্ঠু কারণ দর্শাতে হবে। তাছাড়া সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালা, নুন্যতম মূলধন অর্জনে প্রয়োজনীয় নীতিমালা ইত্যাদি প্রণয়ন সম্ভব হলে বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্তি সহজ হবে। তবে আমাদের জনবলের সঙ্কটের কারণে আমরা চাইলেও অনেক কাজ সময়মতো করতে পারি না। আর এর জন্যই এমন সঙ্কট চলছে।

বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারে ৪৬টি লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানি তালিকাভুক্তি রয়েছে। তবে দেশে এখন নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে মোট ৭৮টি বীমা কোম্পানি রয়েছে।

নতুন বীমা কোম্পানিগুলো হলো— আলফা ইসলামী লাইফ, স্বদেশ লাইফ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ, যমুনা লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, বেস্ট লাইফ, গার্ডিয়ান লাইফ, তাইয়ো সামিট লাইফ, জেনিথ ইসলামী লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, প্রটেক্টিভ লাইফ, সোনালী লাইফ, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ, মার্কেন্টাইল লাইফ, সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

এদিকে নতুন কোম্পানিগুলো ছাড়াও পুরনো কয়েকটি বীমা কোম্পানি রয়েছে, যেগুলোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও ব্যবসা ভালো না হওয়ায় তারা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারছে না। ফলে বছরের পর বছর ধরে তালিকাভুক্ত হতে না পারার জরিমানা হিসেবে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে গুনতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হলে কোনো কোম্পানিকে পূর্ববর্তী তিন বছর টানা মুনাফায় থাকতে হয়। কিন্তু তালিকার বাইরে থাকা পূরনো কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই সে শর্ত পূরণ করতে পারছে না।

আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হলেও বাধ্যবাধকতার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চারটি পুরনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার আবেদন জানায়। এর মধ্যে চার বছর আগে বাজারে শেয়ার ছাড়ার আবেদন জানালেও শর্ত পূরণ না করায় তালিকাভুক্তির অনুমোদন পায়নি ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। এছাড়া ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারে ২৫ টাকা প্রিমিয়াম দাবি করে ২০১১ সালের অক্টোবরে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের আবেদন জানায় সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। পরবর্তীতে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সও তালিকাভুক্তির আবেদন জানায়। তবে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) যাচাই-বাছাইয়ে সন্তোষজনক প্রতীয়মান না হওয়ায় তালিকাভুক্তির অনুমোদন মিলছে না তাদের।

তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে।

এছাড়া পুরনো কোম্পানিগুলোর মধ্যে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সানফ্লাওয়ার লাইফ, বায়রা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স ও দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স এখনো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির আবেদনই জানাতে পারেনি। ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ও টানা মুনাফার শর্ত পূরণে ব্যর্থ প্রতিটি পুরনো কোম্পানিকে এখন প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা হারে জরিমানা গুনতে হচ্ছে।

স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকার বাইরে থাকা এসব কোম্পানির বেশির ভাগই ১৫-২০ বছর ধরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে এখনো তাদের আর্থিক ভিত শক্তিশালী হয়নি।

আইডিআরএ সূত্র জানায়, আর্থিকভাবে লাভজনক হতে হলে বছরে অন্তত ১০ কোটি টাকার প্রিমিয়াম আয় করতে হয়। এসব কোম্পানি গত বছর গড়ে ৩ থেকে ৬ কোটি টাকা আয় করেছে। আয়ের তুলনায় তাদের ব্যয় হয়েছে বেশি। এ অবস্থায় তাদের শেয়ারবাজারে আনা হলে শেয়ারহোল্ডারদের ঝুঁকি বাড়বে।

খাতসংশ্লিষ্টরাও বলছেন, তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে বেশির ভাগ নতুন বীমা কোম্পানি দুরবস্থায় রয়েছে। কম আয় ও বেশি ব্যয়ের জেরে টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে চলছে তারা। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে লাভজনক হওয়া তো দূরের কথা, টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে কোম্পানিগুলোর জন্য।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/তু/ও.র/সা

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.