আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৯ জুন ২০২১, মঙ্গলবার |

kidarkar

শেয়ারবাজারে সুস্থ প্রবণতা তৈরি হয়েছে: বিএসইসি চেয়ারম্যান

শেয়ারবাজার ডেস্ক: শেয়ারবাজারে এখন আর কোনো একক খাতের দাম বাড়ছে না। বরং বিনিয়োগকারীরা সবখাতে মুভ করছে। এভাবে চললে শেয়ারবাজারে একটি সুস্থ প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, তাদের কাজ সুশাসন নিশ্চিত করা। আর সেটি করার চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। সুশাসন নিশ্চিত হলে মানুষ তাদের সঞ্চয় নিয়ে শেয়ারবাজারে ছুটে আসবে বলে আশা করছেন তিনি। তার মতে, তখন আর পেছনে তাকাতে হবে না।

শীর্ষস্থানীয় একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

শেয়ারবাজারের একটি খারাপ সময়ে দায়িত্ব নেয়া এবং বাজার নিয়ে তার কী কী পরিকল্পনা ছিল সে বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো পরিকল্পনা ছিল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন আমাদের কাছে কিছু ডিজায়ার করেন, আমরা তার নেতৃত্বের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল এবং উনাকে মানা করার মতো ক্ষমতা আমাদের নাই। আমাদের কিছু বললে, সেটা যত কঠিন কাজই হোক, সেটা আমরা মেনে নিই। এখন আমি যদি খুবই সহজ, আরামের একটি কাজ উনার কাছ থেকে চেয়ে নিই, তাতে তো উনার কোনো লাভ হবে না; বরং কিছু চ্যালেঞ্জের কিছু থাকলে সেটি যদি আমরা কোনোভাবে ভালো করতে পারি সেটাই উনাকে সাহায্য করার হবে। সেটাই ছিল আমার চিন্তাভাবনা।

তিনি বলেন, আমার স্ত্রী এটিকে খুব মজা করে বলেন। আমি ফাইন্যান্সেরই ছাত্র; শিক্ষক ছিলাম। কিন্তু নিজে কখনো বিনিয়োগ করতাম না এবং আমার বাবার মৃত্যুর পর আমি উনার কাছ থেকে কিছু শেয়ার, আইসিবির সার্টিফিকেট উত্তরাধিকার সূত্রে পাই। ওটাই ছিল আমার অ্যাকাউন্টে। আমি নিজে কখনোই ডে ট্রেডিং বা কোনো রকম কেনাবেচায় যুক্ত ছিলাম না। জাস্ট সাধারণ, খুব অল্প বিনিয়োগ। এটাই ছিল। এটা নিয়েই স্ত্রী এখন আমাকে বলেন যে, তুমি যে জিনিসটি কখনো করোনি, এখনও ওটাই তোমাকে ভালোভাবে দেখতে হচ্ছে।

শেয়ারবাজার নিয়ে দীর্ঘ, মধ্য ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, পরিকল্পনা তো অবশ্যই ছিল। আমার আগে যারা দায়িত্বে ছিল তারা খুবই ভালো একটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও নিয়মনীতি তৈরি করে গেছেন। এখানে তার আাগে কিন্তু তেমন কোনো নিয়ম-নীতিও ছিল না; নীতিমালা ছিল না। আমি ধন্যবাদ দেবো আমার আগের কমিশনকে, যারা সুন্দরভাবে এটি করে দিয়ে গেছেন। আমরা এখন ওটাইকে একটু আপগ্রেড করে গভর্ন্যান্সটাকে (সুশাসন) এনশিউর (নিশ্চিত) করার চেষ্টা করছি।

আশা করব যে, গর্ভন্যান্স এনশিউর হলেই মানুষ তার সঞ্চয় নিয়ে এই খাতের দিকে এগিয়ে আসবে। তখন আর পেছনে তাকাতে হবে না। আর যেহেতু আমাদের সেক্টর এখন সবচেয়ে বেশি রিটার্ন দিচ্ছে এবং এখানে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে, তো এখানে দিনে দিনে বিনিয়োগের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বর্তমান কমিশন বন্ড মার্কেট নিয়ে যে কাজ করছে তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারবে নাকি আলাদা কোনো পরিকল্পনা আছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বন্ডে বিনিয়োগকারীরা সরাসরি বিনিয়োগ করতে পারবে। সব বন্ডেই করা যাবে। তবে আমরা এগুলোকে আরও সহজ করার জন্য এগুলোকে লিস্টিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ব্যাংকের পারপিচুয়াল বন্ডের থেকে সব ব্যাংকেই এখন গ্র্যাজুয়ালি লিস্টিং হবে। লিস্টিং হলে সব বিনিয়োগকারী এগুলো কেনাবেচা করতে পারবে।

এটা কেইস টু কেইস বেসিসে ডিফারেন্ট হবে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের, এমন না। এটা হয়তো কোনো কোম্পানির মিনিমাম স্কিপ থাকবে এক লাখ টাকা। কারও হয়তো ১০ হাজার টাকার; কারও হয়তো ৫০ হাজার টাকার। ওই সাইজের ট্রেড করতে হবে।
এতে আমাদের ট্রানজেকশনও বাড়বে অনেক। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। এর ফলে পুঁজিবাজারের সব পক্ষের উইন উইন অবস্থা তৈরি হবে। এতে ইস্যুয়ার এবং ভেনিফিশারি সবাই লাভবান হবে।

বীমা খাত নিয়ে তিনি বলেন, আমি যখন প্রথম দায়িত্বে আসি তখন এখানে টার্নওভার ছিল ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা। তখন বড় ক্যাপের ক্যাপিটাল মার্কেটে যেসব প্রোডাক্ট আছে সেগুলোতে বিনিয়োগ হতো। কিন্ত এর রিফ্লেকশনটা বড় স্কেলে দেখা যেত না। ইন্স্যুরেন্সের মার্কেট ক্যাপগুলো ছোট ছোট। তো এগুলো কেউ যদি একটু ভালো করে ট্রেড করে তাহলেই এটি ভিজিবল হয়ে যায়।

ব্যাংকের যেহেতু মার্কেট ক্যাপ বড়, সেহেতু বিমার টাকার ডাবল করেও সেভাবে দেখা যায় না। এখন ট্রেড ভলিউম সাউজ সব বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার মানে আমাদের এখানে যত বেশি লিকুইডিটি ইনভেস্টমেন্ট আসবে ততই এখন বিভিন্ন সেক্টরের গ্রোথ দেখা যাবে।

এখন কিন্ত শুধু ব্যাংক ইন্স্যুরেন্স না, ফার্মাসিউটিক্যাল, সিরামিকস, টেক্সটাইল, একেক দিন একেকটা বাড়ে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডও বাড়ে, কমে। এখন আর কেউ বলতে পারবে না, কোনো নির্দিষ্ট সেক্টর বাড়ছে। এখন তো লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। এটা তো কোনো একটি সেক্টর দিয়ে হওয়া সম্ভব না। ফলে বোঝাই যাচ্ছে সব কোম্পানিই মুভিং।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, যাদের মিউচ্যুয়াল ফান্ড তারাই যদি বাইব্যাক করতে চায়, তাহলে সেটি আইনের সঙ্গে অনেকটাই সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। আমাদের এখানে এখনও এমন কোনো আবেদন দেখিনি।

কেপিসিএল তাদের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ওরিয়নেরও এমন কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে, সেগুলোরও মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বোনাস শেয়ার ইস্যু করছে। এসব কোম্পানির ভবিষ্যৎ কী? বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ রাখার জন্য কমিশনের উদ্যোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,

সরকারের সাথে একটু নেগোসিয়েশন পর্যায়ে আছি। ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ এ রকম একটা ব্যবস্থাপনায়। এটা হলে লিস্টেড কোম্পানিগুলো কিছুটা বেনিফিট পাবে। তাদের যতটুকু বিদ্যুৎ সরকার কিনবে ততটুকুর জন্য পেমেন্ট পাবে।

আর নতুন যারা আসছে তাদের অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করেছি, অ্যাসোসিয়েশনকে আমরা বলেছি যে, আপনারা ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিলে এখন মানুষের এখন আর ইক্যুইটিই ফেরত আসে না। উনাদের সঙ্গে আমাদের যে কথা হয়েছে, তারা মিনিমাম ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে এখন থেকে। সেটা দিলে ১০ বছরের একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট চললে তার লাভসহ ফেরত আসবে। আপাতত তাই করব। আর ভবিষ্যতে পাওয়ার প্লান্ট দেয়ার আগে খুব ভালোভাবে অঙ্ক করে নেব, যাতে বিনিয়োগকারীদের কোনো ক্ষতি না হয়।

বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা নিয়ে কাজ চলছে। আমাদের কনসার্নড বিভাগ কাজ করছে। এখন কাজ শুরু হয়েছে, আগামী বছর এর ফলাফল পাওয়া যাবে।

ওয়ালটনের মতো বড় কোম্পানি পুঁজিবাজারে ১ শতাংশ শেয়ার নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করছে। এতে পুঁজিবাজারে ওয়ালটনের শেয়ার নিয়ে কাসরাজি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়টি উত্থাপন করলে চেয়ারম্যান জানান, এ ক্ষেত্রে কারসাজি হতে পারে। আমাদের আসার আগে হয়ে গেছে সবকিছু। এর শেষ পর্যায়ে এসে আমরা পেয়েছি। ওয়ালটনের সচিব কিছুদিন আগে এসেছিলেন। এ ছাড়া ওয়ালটনের অন্যান্য যারা ওনার্স, তাদেরও বলেছি। পর্যায়ক্রমে তারা শেয়ার অফলোড করে ১০ শতাংশে নিয়ে যায়। তারা একমত হয়েছেন। আস্তে আস্তে তারা করে দেবেন।

বন্ধ কোম্পানি চালু করার ক্ষেত্রে আপনি অনেক উদ্যোগ নিচ্ছেন। যেসব কোম্পানির ইতোমধ্যে বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে, সেগুলোর বর্তমানে কী অবস্থা জানতে চাওয়া হয় সাক্ষাৎকারে। কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, রিং সাইন প্রোডাকশনের চলে আসছে। আরও একটি প্রোডাকশনে চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাকিগুলোরও হচ্ছে। আমাদের আসলে ম্যানপাওয়ার কম তো। আমরা এখানে ৮০ জন লোক কাজ করি। এর ফলে এতগুলো কাজ একসঙ্গে করা মুশকিল হয়ে যায়। আমরা একটি করে ধরছি, করছি। নতুন বোর্ড করে দিচ্ছি। তারা প্রোগেস করছে। এখন পর্যন্ত আমরা যে বোর্ড গঠন করে দিয়েছি, তার প্রোগ্রেস রিপোর্ট শিগগিরই চলে আসবে। তখন সব বোঝতে পারব কোথায়, কী হচ্ছে।

ইউনাইটেড এয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আছে। কিন্ত কোম্পানিটির বোর্ড গঠন করা হলেও সেটি লেনদেন হচ্ছে ওটিসি মার্কেটে। এ থেকে উত্তরণের পথ কী তাও জানান তিনি। বলেন, ওটিসিতে দেয়ার কারণ ছিল, কোনা অ্যাসেট নাই, লায়াবিলিটিতে ভরা। এই কোম্পানি ট্রেড করে যদি শেয়ারের প্রাইস বেড়ে যায় তাহলে পবরর্তীতে একটি নতুন ঝামেলা তৈরি হবে। তো আমরা এখানে ঢুকে দেখলাম, এখানে মহাসমস্যা। তারপরও আমরা আমাদের বোর্ড বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি খুঁজে বের করছি। কীভাবে এটাকে আকাশে উড়ানো যায়। আমাদের সিভিল এভিয়েশন যদি একটু সহযোগিতা করে, আমাদের মিনিস্ট্রি যদি একটু সহযোগিতা করেন তাহলেই আমরা পারব।

ওটিসি মার্কেটের উন্নয়নে পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, ওটিসি মার্কেটে এরই মধ্যে চারটি চলে গেছে মেইন বোর্ডে। ১৫টি চলে যাচ্ছে এসএমই প্ল্যাটফর্মে। ৩০টি যাচ্ছে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) প্ল্যাটফর্মে। ১৩টি কোম্পানি তালিকাচ্যুতির আবেদন করেছে। এর মধ্যে চারটির তালিকাচ্যুতির কাজ এগিয়ে চলছে। কোর্টে একটির অর্ডার পেন্ডিং আছে। আর দুটিকে আমরা ডেকে দেখছি কী করা যায়। ওটিসি বলে কিছু রাখা যাবে না। এটা হলে কোম্পানির গভর্ন্যান্স থাকে না। ইচ্ছামতো চালায়, বিক্রি করে দেয়; জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১ টি মতামত “শেয়ারবাজারে সুস্থ প্রবণতা তৈরি হয়েছে: বিএসইসি চেয়ারম্যান”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.