আজ: মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

পুঁজিবাজারে প্রবাসীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে নতুন উদ্যোগ

শেয়ারবাজার ডেস্ক: দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে বেসরকারি এনআরবি ব্যাংকগুলোর প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে প্রবাসীদের জন্য ২৫ শতাংশ শেয়ার বরাদ্দ রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এমনকি ভবিষ্যতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে আইপিওর সিদ্ধান্ত হলে তাতে অভিবাসী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট হারে শেয়ার বরাদ্দ রাখা হবে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। অর্থমন্ত্রী এ সারসংক্ষেপ অনুমোদন করলেই তা বাস্তবায়নে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা গেলে একদিকে দেশের উদ্যোক্তাদের তহবিল সংকটের সমাধান হবে। অন্যদিকে প্রবাসীরাও লাভবান হবেন। এদিকে বিদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। তবে বৈধ পথে আরো বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আনতে চায় সরকার। এজন্য স্বল্প আয়ের প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণ ফি মওকুফ করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে ফি কমানোর প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। এজন্য প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ ডলার কিংবা এর চেয়ে কম রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের প্রচলিত ২ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি অতিরিক্ত আরো ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ প্রস্তাবও অনুমোদনের জন্য একই সারসংক্ষেপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন আইপিওতে সুনির্দিষ্ট শেয়ার বরাদ্দ রাখতে হবে। এক্ষেত্রে এনআরবি, এনআরবি কমার্শিয়াল ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের (বর্তমানে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক) আইপিওতে প্রবাসীদের জন্য অন্তত ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে। একইভাবে ভবিষ্যতে সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে আইপিওর সিদ্ধান্ত নিলে তাতেও প্রবাসীদের জন্য নির্দিষ্ট হারে শেয়ার বরাদ্দ রাখার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। ওই সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়, স্বল্প রেমিট্যান্স পাঠানো অভিবাসী কর্মীদের হুন্ডির পথ থেকে নিরুৎসাহিত করতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ফি মওকুফ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে উচ্চ-আয়ের প্রবাসীদের প্রদত্ত সুযোগের সঙ্গে তা সমন্বয় করতে হবে।

জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের মতামত নিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ব্যাংকের আইপিওতে শেয়ার বরাদ্দ রাখার বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, লাইসেন্স পাওয়া এনআরবি ব্যাংকগুলোর আইপিওতে অন্তত ২৫ শতাংশ শেয়ার প্রবাসীদের জন্য প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। তবে গণপ্রস্তাবে আবেদন করার জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্দিষ্টসংখ্যক শেয়ারের জন্য প্রবাসীদের আবেদন পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে করণীয় কী হবে, তা নীতিমালায় থাকা আবশ্যক বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিএসইসির বলছে, প্রাথমিক শেয়ারে প্রবাসীদের জন্য শেয়ার সংরক্ষণের বিষয়টি যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের আওতাধীন। তবে এ বিষয়ে সংস্থাটি তাদের মতামত দিয়েছে। তারা বলছে, কোম্পানি আইনে অভিবাসী কর্মীদের জন্য ২৫ শতাংশ প্রাথমিক শেয়ার বরাদ্দ রাখার বিষয়ে কোনো বিধিবিধান নেই। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেটিংকৃত সংঘস্মারক ও সংঘবিধিতে বর্ণিত উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার পরিবর্তন বা পরিবর্ধনক্রমে নিবন্ধনের কোনো সুযোগ নেই। কোম্পানির নিবন্ধনকালীন উদ্যোক্তা শেয়ার কিংবা পরবর্তী সময়ে যেকোনো শেয়ার বরাদ্দের বিষয়টি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ও প্রযোজ্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত হয়ে আইনানুগভাবে এ দপ্তরে দাখিল করলে তা রেকর্ডভুক্ত করা হয় মাত্র। যেহেতু এনআরবি, এনআরবি কমার্শিয়াল ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ২০১৩ সালে নিবন্ধিত, সেহেতু ২০১৯ সালের ২৫ আগস্টের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এসব ব্যাংকের আইপিওতে প্রবাসীদের জন্য ২৫ শতাংশ শেয়ার বরাদ্দ রাখা হলে তাদের কোনো আপত্তি নেই।

জানা গেছে, বর্তমানে প্রবাসীদের বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে শুধু ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ইনভেস্টমেন্ট ডলার বন্ড ও ইউএস প্রিমিয়ার বন্ড আছে। এখন পর্যন্ত এসব বন্ডে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে। সুদহার তুলনামূলক বেশি বলে এর ৯৫ শতাংশই এসেছে ওয়েজ আর্নার বন্ডে।

তবে সম্প্রতি বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা সীমিত করেছে সরকার। বর্তমানে ১ কোটি টাকার বেশি একজন প্রবাসী বাংলাদেশী বিনিয়োগ করতে পারেন না। এছাড়া প্রবাসী হিসেবে অ্যাকাউন্ট খুলে শেয়ারবাজারে প্রবাসীদের বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও সেখানে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ হচ্ছে না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। এগুলো বাস্তবায়নে অর্থ মন্ত্রণালয় বর্তমানে কাজ করছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো আমাদের হতে আসেনি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এলেই তা বাস্তবায়নে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সূত্র: বণিক বার্তা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.