আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার |

kidarkar

পুঁজিবাজার অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে: বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট

রাসেল মাহমুদ: বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলেছেন, ২০১০ সালে ২৪৪টা কোম্পানি নিয়ে সূচক ৮ হাজার ২৯০ হয়েছিলো। এখন ৩৯৩ কোম্পানি নিয়ে সূচক মাত্র ৭ হাজার ২৫৮ হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০১০ সালের শেষদিকে বাজার মূলধন ৩ লাখ ৫ হাজার কোটি ছিলো, এখন তা ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে সূচক ৭ হাজার ক্রস করা আতঙ্কের নয়। অনেক মৌলভিত্তির শেয়ারের দাম এখনো অনেক কম। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সূচকের দিকে না তাকিয়ে মৌলভিত্তির কোম্পানি যাদের ডিভিডেন্ট হার ভালো সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা উচিত।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজার আরও অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। পরিশোধিত মূলধন পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেকগুন বেড়েছে। ফলে আতঙ্কের কিছু নেই।

শেয়ারবাজারনিউজের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

জানা গেছে, ২০১০ সালের মহাধসের পর ঘুমিয়ে যাওয়া পুঁজিবাজারে গত এক বছরে প্রাণ ফিরেছে। শেয়ারমূল্য বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের লোকসানি বিও হিসাবগুলো মুনাফায় চলে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার থেকে দূরে সরে যাওয়া বিনিয়োগকারীরাও ফিরতে শুরু করেছেন। গত বছরের ২ জুলাই সূচক যেখানে ছিল তিন হাজার ৯৮৬ পয়েন্টে, সর্বশেষ কার্যদিবস গত বৃহস্পতিবার তা দাঁড়ায় সাত হাজার ২৫৮ পয়েন্টে। গত ৩১ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সূচক বেড়েছে ৪৩৫ পয়েন্ট। গত সপ্তাহেই বেড়েছে ২০৬ পয়েন্ট।

শুধু সূচক নয়, অতিসম্প্রতি শেয়ারবাজারে লেনদেনও বেড়েছে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গেল সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২২ কোটি ৬০৩ কোটি টাকা।

প্রতিনিয়ত সূচক ও লেনদেন বাড়ায় শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন বাজার দিন দিন ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। ২০১০ সালের মহাধসের ইঙ্গিতও দিচ্ছেন কেউ কেউ। তবে পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ বছরে বাজারে যে পরিমান কোম্পানি বেড়েছে এবং এসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন যে পরিমান তা পর্যালোচনা করলে পুঁজিবাজারে সূচক অনেক বেশি বাড়েনি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইট, লাইব্রেরি ডাটা এবং ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের মহাধসের পর গত ১১ বছরে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ইকুইটি মার্কেটে যুক্ত হয়েছে ১৪৯টি কোম্পানি। যার ফলে আলোচ্য সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জটির ইকুইটি মার্কেটের আকার বেড়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।

সূত্র ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মার্কেট বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পেয়েছে।

সূত্রমতে, ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ডিএসইর ইকুইটি মার্কেটে মোট তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ছিলো ২৪৪টি। বর্তমানে এই মার্কেটে কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯৩ টিতে। অর্থাৎ গত ১১ বছরে ১৪৯টি কোম্পানি বেড়েছে।

২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ইকুইটি মার্কেটের আকার ছিলো ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। বর্তমানে ইকুইটি মার্কেটের আকার ৫ লাখ ২৬ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। গত ১১ বছরে বেড়েছে মাত্র ২ লাখ ২৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।

বর্তমানে ডিএসইর মোট বাজার মূলধন রয়েছে ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। যা ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ছিলো ৩ লাখ ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জটির মোট বাজার মূলধনের সবচেয়ে বড় অংশ ৫ লাখ ২৬ হাজার ৫৯ কোটি টাকাই রয়েছে ইকুইটি মার্কেটের দখলে। বাকি মূলধন মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও বন্ড মার্কেটের দখলে।

১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিএসইর মিউচ্যুয়াল ফান্ড মার্কেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯২৯ কোটি টাকায়। যা ১১ বছর আগে ছিলো ৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে মোট মার্কেট বেড়েছে ৬২৬ কোটি টাকা।

এছাড়া বর্তমানে ডিএসইর বন্ড মার্কেট দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। যা ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ছিলো ৪৮ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। সে হিসেবে প্রায় ১১ বছরে এই সেক্টরের বাজার মূলধন বেড়েছে ৭ হাজার ৭৭ কোটি টাকা।

২০১০ সালে মাত্র ২৪৪টি কোম্পানি নিয়ে লেনদেন করা প্রধান শেয়ারবাজারের ইনডেক্স ছিলো ৮ হাজার ২৯০ পয়েন্ট। বর্তমানে ৩৯৩টি কোম্পানি বাজারে লেনদেন করছে। বর্তমানে প্রধান সূচক দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ২৫৮ পয়েন্টে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১০ সালের সাথে তুলনা করলে বাজার অনেক বেড়েছে সেটা বলা যাবে না। তবে তারা স্বীকার করেছেন এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশের পুঁজিবাজার আরো অনেক দূর যাবে।

বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান শেয়ারবাজারনিউজকে বলেন, যারা ২০১০ সালের সাথে বর্তমান পুঁজিবাজারকে তুলনা করছেন তারা ঠিক তুলনা করছেন না। তখন মার্কেটে যে পরিমান কোম্পানি তালিকাভুক্ত ছিলো এবং কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন যা ছিলো এখন তা নেই। গত ১১ বছরের তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেড়েছে। বাজার মূলধনও বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে ভালো ভালো অনেক কোম্পানি বাজারে এসেছে। ফলে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। এতে সূচক ও লেনদেন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সম্প্রতি বলেছেন, গত এক বছরে শেয়ারবাজারের মূল্য সূচক প্রায় দ্বিগুণ হলেও সামগ্রিকভাবে বাজার অতি মূল্যায়িত হয়ে যায়নি।

তিনি বলেন, বাজার অতি মূল্যায়িত কি না, এর কিছু পরিমাপক আছে, যার মূল হচ্ছে পিই রেশিও। পিই রেশিও বিনিয়োগ উপযোগী থাকলে শেয়ারবাজারকে অতি মূল্যায়িত বলা যায় না।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেয়ারের সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ২০ এর কম হওয়া ভালো। পিই রেশিও যত কম হয়, বিনিয়োগ ঝুঁকিও তত কম হয়। পিই রেশিও হচ্ছে একটি কোম্পানির শেয়ার তার আয়ের কতগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে তার একটি পরিমাপ। কোনো কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় যদি ৫ টাকা হয়, আর বাজারে শেয়ারটির দাম থাকে ৫০ টাকা, তাহলে শেয়ারটির মূল্য-আয় অনুপাত হবে ১০।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দাঁড়ায় ২১.১৬ পয়েন্ট। অর্থাৎ পিই রেশিও এখনো ঝুঁকি অতিক্রম করেনি।

১ টি মতামত “পুঁজিবাজার অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে: বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.