আজ: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ইং, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৪ অক্টোবর ২০২১, সোমবার |

kidarkar

ই-কমার্সে বিনিয়োগ করে বিপদে হাজারো গ্রাহক

রাসেল মাহমুদ: নারায়ণগঞ্জের চাষারার তরুণ আকাশ ইসলাম। একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কর্মরত আকাশ বাড়তি আয়ের আশায় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে। আরও দু’একটি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প কিছু বিনিয়োগ ছিলো তার। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণায় ভীষণ ঝুঁকিতে পড়েছেন তিনি।

আয়েশা আক্তার অনলাইনে মেয়েদের বিভিন্ন প্রসাধনী বিক্রি করতেন। ব্যবসা ভালোই ছিলো। সেই ব্যবসার লাভের একটি অংশ তিনি বিনিয়োগ করেছিলেন কিউকমে। আজ এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক রিপন মিয়াকে গ্রেফতারের পর চিন্তায় পড়েছেন আয়েশা।

শেয়ারবাজারনিউজকে আয়েশা বলেন, কিছু বাড়তি লাভের আশায় কিউকমে বিনিয়োগ করেছিলাম। বেশ কিছুদিন ধরে তাদের কাছে নির্ধারিত পণ্যের জন্য ধরনা দিয়েও কাজ হয়নি। এখন মালিককে গ্রেফতারের পর বিনিয়োগকৃত টাকা পাওয়া নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হলো।

শুধু আকাশ বা আয়েশা নয়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বিপদে পড়েছেন হাজার হাজার গ্রাহক।

জানা গেছে, সম্প্রতি ইভ্যালি, ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, কিউকম, এসপিসি ওয়ার্ল্ডসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এতে চরম হতাশায় দিন কাটছে বিনিয়াগকারীদের। তারা বিনিয়োগকৃত টাকা কখনো ফিরে পাবেন কিনা- তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে ইভ্যালির ৪০৩ কোটি টাকা দায়ের তথ্য উঠে আসে। এরপর থেকেই সম্ভাবনাময় ই-কমার্স খাতে অস্থিরতা শুরু হয়। একে একে উঠে আসে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা।

আরও পড়ুন

গ্রাহকদের ২৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কিউকম: ডিবি

ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন গ্রেফতারের পর জানায়, প্রতিষ্ঠানটির দায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।

সোমবার (৪ অক্টোবর) ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ২৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার মানি লন্ডারিং মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর আগে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের মোট ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

এদিকে কিউকমের কাছে গ্রাহকদের পাওনা অন্তত ২৫০ কোটি টাকা বলে জানতে পেরেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রিপন মিয়াকে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতারের পর আজ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার।

সিআইডি জানিয়েছে, অন্য একটি প্রতিষ্ঠান এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস বিভিন্ন পেশার মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে এক কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রতারণা করেছে কোম্পানিটির মালিক।

উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এদিকে, দেশে ই-কমার্স খাত বা অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের পণ্য কেনাকাটায় ক্রেতা ও ভোক্তাদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত রোববার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বকশি স্বাক্ষরিত তথ্যবিবরণীতে এ পরামর্শ দেয়া হয়।

‘অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা হতে সাবধান থাকুন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়’ শীর্ষক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিটি ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত অনলাইন কেনাকাটার বিজ্ঞাপনের শেষে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশও দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি একাধিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য কেনাকাটা করে ক্রেতাদের প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ইভ্যালি, ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, বুমবুম, সিরাজগঞ্জ শপসহ ২০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ছয় লাখের বেশি গ্রাহক ও মার্চেন্টের কাছ থেকে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ, তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য পাঠায়নি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ই-কমার্স খাতকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য আগামী দুই মাসের মধ্যে ই-কমার্স নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। একই সময়ের মধ্যে প্রণয়ন করা হবে ই-কমার্স পরিচালন আইনও। তবে আইন প্রণয়ন ও কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার আগে ক্রেতাদের অনলাইন কেনাকাটায় সাবধান হতে হবে।

আরিফুল ইসলাম নামের একজন গ্রাহক শেয়ারবাজারনিউজকে বলেন, ঋণ করে বেশকিছু টাকা বিনিয়োগ করে বিপদে পড়ে গেছি।

আনোয়ার হোসেন নামের একজন গ্রাহক বলেন, এভাবে প্রতারিত হবো কখনো ভাবিনি।

তবে ই-কমার্সে বিনিয়োগ করে লোকসানে থাকাকে গ্রাহকেদের লোভকে দায়ী করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান। শেয়ারবাজারনিউজকে তিনি বলেন, ইভ্যালিসহ অন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের টাকা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। গ্রাহকরা লোভে পড়েই এখানে বিনিয়োগ করেছিলো। বিনিয়োগের আগে চিন্তা করা দরকার ছিলো।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.