তিন পরিচালকের আপত্তিতেও স্টাইল ক্রাফটকে ঋণ দিতে চায় অগ্রণী ব্যাংক
এ জেড ভূঁইয়া আনাস: ঋণগ্রস্থ ও অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর পোষাক তৈরি প্রতিষ্ঠান স্টাইল ক্রাফটকে ঋণ বিতরণ করতে তিনজন পরিচালক আপত্তি জানালেও তাকে পাত্তা না দিয়েই ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্ত মেনেই প্রতিষ্ঠানটিকে ঋণ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, অগ্রণী ব্যাংকের ৭৪৭তম বোর্ড সভায় স্টাইল ক্রাফট লিমিটেডের অনুকুলে মোট ৩৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দিলে এতে আপত্তি জানান তিনজন পরিচালক। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে অগ্রণী ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবকিছু পর্যালোচনা করে ঋণ বিতরণের পূর্বে পাঁচটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, সম্পত্তির মূল দলিল গ্রহণ, রাজউকের অনাপত্তি, পূবালী ব্যাংকের অনাপত্তি, এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরবর্তী বোর্ড সভায় আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্তগুলো উপস্থাপন করা। কিন্তু পরবর্তী বোর্ড সভায় ওই তিন পরিচালক ছাড়াই স্টাইল ক্রাফটকে ঋণ দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম শেয়ারবাজার নিউজকে বলেন, আমরা সম্পত্তির মূল কাগজপত্র পেয়ে গেছি। তবে এসব সম্পত্তির মালিক ছিলেন বর্তমান মালিকের মা। মালিকানার নাম পরিবর্তনের জন্য পর্ষদের অনুমতিক্রমে দুই মাস সময় দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শর্ত পূর্ণ করে ঋণ বিতরণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান শামস-উল ইসলাম। দুই মাস সময় দেয়ার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এমডি বলেন, এখনো জানানো হয়নি। তবে বিষয়টি অফিসিয়ালি জানিয়ে দেয়া হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়, স্টাইল ক্রাফট বেসরকারি পূবালী ব্যাংকে সম্পত্তির প্রকৃত নথি/দলিল রাখা সত্ত্বেও অগ্রণী ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ঋণ অনুমোদন করেছে। কিন্তু রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) থেকে অনাপত্তি নেয়া ছিল পূর্বশর্ত। মূলত, বিভিন্ন চাপের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ পোশাক তৈরি প্রতিষ্ঠান স্টাইল ক্রাফটকে ঋণ দিতে অনুমতি দিয়েছে ব্যাংটি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তাবিত সম্পত্তির প্রকৃত নথি, বায়া দলিল, সিএস, এসএ, আরএস, মিউটেশন পর্চা, ডিসিআর, সর্বশেষ ভূমি করের রশিদ ও নির্দায় সনদপত্র ছাড়া এই কোম্পানির অনুকূলে ঋণ দেয়া যাবে না। তারপরও ঋণটি অনুমোদন করা হয়েছে, যা গুরুতর আনিয়ম। অনিয়মের মাধ্যমে সম্পত্তি বন্ধক কার্যক্রমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অগ্রণী ব্যাংককে গত ১৩ অক্টোবর চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই পদক্ষেপের আগে তিন পরিচালকের আপত্তি সত্ত্বেও অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ তার ৭৪৭তম সভায় পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ২৫ কোটি টাকার সিসি এবং ১০ কোটি টাকার ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সীমা অনুমোদন করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অগ্রণী ব্যাংকের এক পরিচালক বলেন, স্টাইল ক্রাফটকে ঋণ দেয়ার বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছে সেখানে আমরা অংশগ্রহণ করিনি। আমরা ঋণটা ভালো মনে করিনি বলেই নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলাম। সে কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু শর্ত দিয়েছিল। সেগুলো পরিপালন করে তারা যদি ঋণ আদায় করতে পারে তাহলে তারা বিতরণ করুক। এখানে আমাদের কোনো দ্বায়বদ্ধতা নেই। তারা ঋণ দিয়ে আদায় না করতে পারলে তখন তারা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমাদের করণীয় কিছু নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছয় মাসের বকেয়া মজুরির দাবিতে দীর্ঘ দিন থেকে আন্দোলন করে আসছেন স্টাইল ক্রাফটের শ্রমিকরা। এরই ধারবাহিকতায় টানা দশ দিন শ্রমভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর বকেয়া বেতন ও আইনানুগ পাওনা পরিশোধের দাবিতে গত ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন গাজীপুরের স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড গার্মেন্টসের শ্রমিকরা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, মালিকপক্ষ গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে নানাভাবে বেতন-ভাতা এবং ঈদ বোনাস না দিয়ে শ্রমিকদের বঞ্চিত করেছে। বর্তমানে কারখানার শ্রমিকদের ছয় মাসের এবং কর্মচারীদের নয় মাসের বেতন বকেয়া আছে। মালিকপক্ষ বেআইনিভাবে কারখানা বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিক ও কর্মচারীদের বিপুল অঙ্কের আইনগত পাওনা পরিশোধ করছে না। এ সময়কালে রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে কয়েকবার শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। কিন্তু মালিক কখনোই আমাদের কোনো দাবি মেনে নেয়নি। এজন্য চুক্তি অবিলম্বে বাস্তবায়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধ ও বারবার চুক্তি ভঙ্গ করে শ্রমিকদের সীমাহীন হয়রানি করায় মালিক এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করা হয় স্মারকলিপিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ পরিশোধের জন্য চলতি বছরের ১৮ মে অগ্রণী ব্যাংকের কাছে চলতি মূলধন ঋণের জন্য আবেদন করে এবং প্রকৃত চাহিদার যথাযথ মূল্যায়ন না করেই ঋণ অনুমোদন করে। এছাড়া বন্ধকী দলিল সম্পাদন করা হয়েছে গুলশান সাবরেজিস্ট্রি অফিসে। বন্ধকদাতা ডা. আলমাস বেগমের স্বাক্ষরের পরিবর্তে টিপসই প্রদান করা হয়। এতে সার্বিক প্রক্রিয়াটি সন্দেহজনক বলে প্রতীয়মান হয়। আবার মূল দলিল না থাকার কারণে আইনগত প্রক্রিয়ায় ঋণ আদায় করতে হলে সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থ আদায় সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি পূবালী ব্যাংক স্টাইল ক্রাফটকে ২০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সময়মতো সম্পত্তি বন্ধক রাখতে না পারায় ব্যাংকটি পাঁচ কোটি টাকা দেয়। প্রতিষ্ঠানটি গত কয়েক বছরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও মুনাফা কমে যাওয়ায় কোম্পানিটিকে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ব্যাংক আর বাড়ায়নি। এরপর প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ব্যাংকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোনের জন্য আবেদন করে, যা অনুমোদনও করেছে ব্যাংকটি।
It is a good initiatives of company to start the production.
Future plants style craft