আজ: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৬ ডিসেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

বছর না ঘুরতেই উপায়-এর গ্রাহক ত্রিশ লাখে!

নিজস্ব প্রতিবেদক: মূলধারার ব্যাংকিং সেবা থেকে দূরে থাকা জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের লক্ষ্যে ২০১১ সাল থেকে কাজ করছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই মোবাইল ব্যাংকিং মানুষের ধারে ধারে পৌঁছে যায়। বিকাশ, রকেট, নগদ ও উপায়সহ দেশের ডজনেরও বেশি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে গ্রাহকদের। যাদের মধ্যে সবচেয়ে নবীন প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) এর মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘উপায়’। বছর না ঘুরতেই প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

জানা যায়, চলতি বছরের ১৭ মার্চ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘উপায়’, যার বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। সারাদেশে এজেন্ট সংখ্যা প্রায় এক লাখ। উপায় একাউন্ট থেকে সেন্ড মানি ফ্রি এবং ক্যাশ আউট চার্জ হাজারে ১৪ টাকা যা বাজারে সর্বনিন্ম। এছাড়া ইউসিবি ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যবহার করে ক্যাশ আউট করলে খরচ পড়ে হাজারে ৮ টাকা, এটিও বাজারের সর্বনিন্ম। গ্রাহকের খরচ আরও কমিয়ে আনার জন্য উপায় বাজারে এনেছে মাল্টি ওয়ালেট ফিচার।

একজন এমএফএস গ্রাহকের একাউন্টে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ আসতে পারে। একই ওয়ালেটেই হয়তো তিনি বেতন পাচ্ছেন, রেমিট্যান্স আসছে বা কোনো সরকারি ভাতা পাচ্ছেন। মাল্টি ওয়ালেট ফিচারের মাধ্যমে গ্রাহকদের একটি একাউন্টেই চারটি ভিন্ন ভিন্ন যেমন: প্রাইমারি, স্যালারি, ডিজবার্জমেন্ট ও রেমিট্যান্স ওয়ালেট রয়েছে। বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত টাকা নির্দিষ্ট ওয়ালেটে জমা হচ্ছে এবং অনেক কম খরচে তিনি ক্যাশ আউট করতে পারছেন। উদাহরণস্বরুপ, প্রাইমারি ওয়ালেটে আসা যেকোনো টাকার জন্য ক্যাশ আউট চার্জ হবে হাজারে ১৪ টাকা, স্যালারি ও রেমিট্যান্সের জন্য হাজারে ১০ টাকা এবং ডিজবার্জমেন্ট ওয়ালেটের অর্থ ক্যাশ আউট চার্জ হচ্ছে হাজারে ৭ টাকা। এছাড়া ইউসিবি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে প্রাইমারি ওয়ালেটের জন্য হাজারে ৮ টাকা কাটবে এবং অন্যান্য ওয়ালেটের ক্ষেত্রে কোনো চার্জ প্রযোজ্য হবে না।

ইতোমধ্যে উপায় তাদের উদ্ভাবনী সেবা মাল্টি ওয়ালেটের জন্য বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত ফিনটেক ইনোভেশন এওয়ার্ড- ২০২১ অর্জন করেছে।

নেত্রকোনার আনন্দ বাজারের উপায় এজেন্ট সেলিম হোসেন বলেন, গত কয়েকমাস ধরে উপায়ের কাস্টমার পাচ্ছি অনেক বেশি। ক্যাশ আউট চার্জ সবচেয়ে কম দেখেই মানুষ আসছে বেশি।

ঢাকা কলেজের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আমি মূলত নগদের গ্রাহক ছিলাম। কিছুদিন আগে ই-কমার্স নিয়ে নগদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ শুনার পর আমি এখন আর নগদ ব্যবহার করছি না। এখন উপায় ব্যবহার করলেও এদের এজেন্ট সব যায়গায় পাওয়া যায় না। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে উপায় আরও ভালো অবস্থানে যাবে বলে আশা এই শিক্ষার্থীর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোখশেদুর রহমান পলাশ বলেন, এজেন্ট পয়েন্ট ও এটিএম বুথে ক্যাশ আউট চার্জ সর্বনিন্ম হওয়ায় বেশ খরচ কমেছে আমার। উপায়ের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।

উপায়ের আরেকটি উদ্ভাবনী সেবা হচ্ছে বিনা ইন্টারনেট খরচে দেশের প্রধান তিনটি মোবাইল অপারেটরÑ গ্রামীনফোন, রবি-এয়ারটেল ও বাংলালিংক এর গ্রাহকরা উপায় অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন।

উপায়’র কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্লাটফর্ম ডিজাইনে উপায় তার গ্রাহক নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় হ্যাকিং, প্রতারণা ইত্যাদি কারণে একাউন্টে থাকা অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ব্যবহারকারীদেও মাঝে। তাই সর্বাধুনিক বøকচেইন প্রযুক্তিতে তৈরি ‘উপায়’ প্লাটফর্ম এই ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি অনেকটাই কম। এর পাশাপাশি একাউন্ট এর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিভাইস অথেন্টিকেশন ব্যবস্থা রয়েছে এবং মোবাইল হ্যান্ডসেট ও সিম গ্রাহকদের কাছে থাকলে ওটিপি (ওয়ান টাইম পিন) ব্যবহার করে কেউ তার একাউন্টে প্রবেশ করতে পারবে না বলেও জানান তারা।

উপায়ের সেবাগুলো মধ্যে রয়েছে মোবাইলে টাকা লেনদেন, ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট, কেনাকাটার মূল্য পরিশোধ, রেমিট্যান্স গ্রহণ, বেতন প্রদান এবং এয়ারটাইম ক্রয়। এছাড়াও উপায় ব্যবহার করে গ্রাহকরা বেশকিছু এক্সক্লুসিভ সেবা গ্রহণ করতে পারবেন, যেমন: ইন্ডিয়ান ভিসা ফি, ট্রাফিক ফাইন এবং তিতাস গ্যাসের (প্রি-পেইড) বিল পেমেন্ট ইত্যাদি।

উপায়ের বিভিন্ন অফারে ক্যাশ রিওয়ার্ড থাকে। যা উপায়ের রিওয়ার্ড ওয়ালেটে জমা হয়। উপায় অ্যাপের ব্যালেন্স অপশনে চাপ দিলেই মূল ব্যালেন্সের নিচে রিওয়ার্ড ব্যালেন্স দেখা যায়। ক্যাশ রিওয়ার্ড দিয়ে দিয়ে মোবাইল রিচার্জ, কেনাকাটা, বিল পেমেন্ট ইত্যাদি করা যাবে, তবে সেন্ড মানি, ক্যাশ আউট এবং ফান্ড ট্রান্সফার করা যাবে না।

সার্বিক বিষয়ে উপায়ের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশনস এন্ড এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স জাহেদুল ইসলাম কাছে জানাতে চাইলে তিনি শেয়ারবাজার নিউজকে বলেন, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহারকারীরা মূলত সমাজের দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ। তাদেরকে কম খরচে সেবা দিয়ে আর্থিক অন্তর্ভূক্তির জন্য কাজ করছে উপায়। নানা ধরনের উদ্ভাবনী সেবা নিয়ে কাজ করছে উপায়। এছাড়াও গ্রাহক নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে উপায় বøকচেইন এবং ডিভাইস অথেনটিকেশনের মতো প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে গ্রাহকের অর্থের সুরক্ষা দিচ্ছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.