আজ: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ইং, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৫ জানুয়ারী ২০২২, বুধবার |

kidarkar

কমোডিটি এক্সচেঞ্জের অভিজ্ঞতা অর্জনে ভারত যাবে সিএসই

আতাউর রহমান: দেশে প্রথমবারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার অনুমোদন পেয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। তবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনের বিষয়ে দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় এ বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ (এমসিএক্স) পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএসই।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। একই সঙ্গে চিঠিটি সিএসই চেয়ারম্যান বরাবরও পাঠানো হয়। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু ও পরিচালনায় এবং পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করার আগে ৬টি‌ অবকাঠামো সুবিধা এবং সক্ষমতা নিশ্চিত করতে বলে কমিশন।

সেখানে বলা হয়, অবকাঠামোর মধ্যে পণ্যের গুণমান নিশ্চিতকরণ ব্যবস্থা। পণ্য গুদামজাতকরণ, সংরক্ষণ ও স্থানান্তরের জন্য নিবন্ধিত গুদাম সুবিধা এবং এই ধরনের কার্যক্রমের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন। বাজারে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি, ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

এছাড়া মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে পণ্যের যথাযথ তথ্য সংগ্রহ ও সামগ্রিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত প্রস্তাব রাখার বিষয়ে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুতে উপরের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সিএসই আরও উদ্যোগ নিতে পারে বলে জানানো হয়।

ভারতে প্রস্তাবিত এ সফর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে হতে পারে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রামণ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। ইতোমধ্যে ভরত সফরে অংশগ্রহণের জন্য বিএসইসি, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বানিজ্য মন্ত্রণালয়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সিএসই।

জানা গেছে, বিএসইসি মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পরিদর্শনের জন্য তাদের চারজন প্রতিনিধিকে মনোনয়ন দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন- বিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, পরিচালক মো. মনসুর রহমান, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান রনি। এদিকে এ সফরে সিএসই থেকে পাঁচজন প্রতিনিধিকে মনোনীত করেছে। তারা হলেন- সিএসইসি’র চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, শেয়ারহোল্ডার পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাকসুদুর রহমান এবং উপ-ম্যানেজার ও সিএসই’র প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কমিটির সচিব মো. ফয়সাল হুদা। ইতোমধ্যে বানিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুইজন প্রতিনিধিকে সফরে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এখনও সফরে অংশগ্রহণকারীদের তালিকা পাঠানো হয়নি। আর ভরত সফরে নেতৃত্ব দেবেন বিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

তথ্য মতে, সিএসইর পক্ষ থেকে পাট, তুলা, স্বর্ণ, আলু, পেঁয়াজ, চা ইত্যাদি পণ্যের মধ্য থেকে এক বা একাধিক পণ্য কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কেনাবেচার করা যায় কি না সে বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। একটি কেন্দ্রীভূত বাজারের সঙ্গে পণ্য ব্যবসা ও ভোক্তাদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংগঠিত ও স্বচ্ছ বাজার সিন্ডিকেট ও দামের কারসাজি কমাতে এ ধরনের এক্সচেঞ্জ মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।

সিএসই সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, সিএসই ইতোমধ্যে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী কমোডিটি এক্সচেঞ্জের প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর নতুন প্ল্যাটফর্মে সব ধরনের বিনিয়োগকারীকে পণ্য লেনদেনের সুবিধা দিতে কাজ চলছে। তবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করলে প্রথম পর্যায়ে নন ডেরিভারি ক্যাশ সেটেলমেন্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে চায় সিএসই। ফলে ফিজিক্যাল ডেলিভারি ক্যাশ সেটেমেন্ট পদ্ধতি না থাকার কারণ সাময়িকভাবে ওয়্যার হাউজ ও গোডাউন লাগছে না। তবে পরবর্তীতে ফিজিক্যাল ডেলিভারি ক্যাশ সেটেমেন্ট পদ্ধতি চালু করা হবে। এ জন্য সিএসই শিগগিরই কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। কনসালটেন্টের পরামর্শে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষপটে কি কি পণ্য নিয়ে এ কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে। তবে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি এখন চূড়ান্ত করা হয়নি।

জানা গেছে, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার আগে স্টোরেজ মেকানিজম ও ম্যানেজমেন্ট, ডেলিভারি সিস্টেম, ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট সিস্টেম, হিউম্যান রিসোর্সসহ, বাজার স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করছে সিএসই। এসব বিষয়ে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ সিএসইকে পরামর্শ প্রদান করতে সম্মত হয়েছে। তবে এখনও সিএসই কোনো পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘সিএসই স্বপ্রণোদিত হয়ে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সফরে সিএসই, বিএসইসি, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। তবে কতজন সদস্য এ সফরে যাবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। অনেকের মতে এ ধরনের এক্সচেঞ্জ আরো আগেই হওয়া উচিত ছিল। দেশের কমোডিটি পণ্যকে যদি স্ট্যাবল করতে হয়, তাহলে কমোডিটি এক্সেচেঞ্জের বিকল্প নেই। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করা হলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা উভয়েই আরো বেশি সুবিধা পাবেন।’

১ টি মতামত “কমোডিটি এক্সচেঞ্জের অভিজ্ঞতা অর্জনে ভারত যাবে সিএসই”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.