আজ: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ইং, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৭ জানুয়ারী ২০২২, সোমবার |

kidarkar

বড় ঋণ বিতরণে কঠোর বিধিনিষেধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বড় ঋণ বিতরণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে একক কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে দেওয়া ঋণসুবিধা কোনোভাবেই ব্যাংকের মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি হবে না। আগে দেওয়া যেত ৩৫ শতাংশ। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ বেশি থাকলে বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণের ক্ষমতা কমানো হয়েছে।

রোববার (১৬ জানুয়ারি ) বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ’ এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে। সার্কুলারের এ নির্দেশনা আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।

এর আগে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি বড় অঙ্কের ঋণ নীতিমালার ওপর সার্কুলার জারি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর আর্থিক ঝুঁকি কমাতে বেশ কিছু শর্ত দিয়ে নতুন করে এ বিধিনিষেধ দিয়েছে ব্যাংক খাতের এ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের মোট ঋণের ৩ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ থাকলে ওই ব্যাংক তাদের মোট ঋণের ৫০ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারবে। আগের সার্কুলারে ৩ শতাংশের কমের খেলাপি ঋণের বিষয়টি ছিল না। এবারের সার্কুলারে এটি নতুন যুক্ত করা হয়েছে। কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশের বেশি হলেই আন্তর্জাতিকভাবে ওই ব্যাংককে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বড় অঙ্কের ঋণ নীতিমালায় খেলাপি ঋণের হার ৩ শতাংশ যুক্ত করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরোপিত বিধিনিষেধ যা বলে

>>> কোনো ব্যাংকের ৩ শতাংশের বেশি থেকে ৫ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ থাকলে ওই ব্যাংক তাদের মোট ঋণের ৪৬ শতাংশ বড় ঋণ দিতে পারবে। আগের সার্কুলার অনুযায়ী মোট ঋণের ৫ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ থাকলে ৫৬ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারত। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের ক্ষমতা ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে।

>>> পাঁচ শতাংশের বেশি থেকে ১০ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ থাকলে মোট ঋণের ৪২ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারবে। আগে ৫ শতাংশের বেশি থেকে ১০ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ থাকলে ৫২ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারত।

>>> ১০ শতাংশের বেশি থেকে ১৫ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ থাকলে ৩৮ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারবে। আগের নিয়মে এ ক্ষেত্রে ৪৮ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া যেত।

>>> ১৫ শতাংশের বেশি থেকে ২০ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ থাকলে ৩৪ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া যাবে। আগের নিয়মে একই ক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া যেত।

>>> নতুন নিয়মে ২০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকলে ৩০ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া যাবে। আগের নিয়মে এক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া যেত।

এছাড়া এখন থেকে একক কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে প্রদত্ত ঋণসুবিধা কোনোভাবেই ব্যাংকের মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি হবে না। আগে দেওয়া যেত ৩৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে ঋণ সীমা কমেছে ১০ শতাংশ।

নতুন নির্দেশনায় ব্যাংকের মূলধনের মধ্যে কোনো একক গ্রুপ বা ব্যক্তিকে ১৫ শতাংশ নগদ আকারে দেওয়া যাবে। আগের নিয়মে নগদ ঋণ ১০ শতাংশ দেওয়া যেত। তবে পরোক্ষ ঋণের সীমা কমানো হয়েছে। আগের নিয়মে কোন ব্যাংকের মূলধনের ২০ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া যেত। এখন দেওয়া যাবে ১০ শতাংশ। পরোক্ষ ঋণ বলতে ব্যাংক গ্যারান্টি, এলসি, চেক ইস্যু ইত্যাদি ব্যাংকিং উপকরণকে বুঝাবে। অর্থাৎ যেসব উপকরণের ফলে ব্যাংকের ওপর তাৎক্ষণিকভাবে দায় পড়বে না। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে গ্রাহক তা পরিশোধ না করলে দায় হিসাবে যুক্ত হবে।

তবে এই নীতিমালা বেশ কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর করা যাবে না। এর মধ্যে রয়েছে, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক যেমন- ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইবিআরডি), ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এএফডিবি), ইউরোপিয়ান ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইবিআরডি), ইন্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইএডিবি), ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি), ইউরোপীয় বিনিয়োগ তহবিল (ইআইএফ), নর্ডিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এনআইবি), ক্যারিবিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (সিডিবি), ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) এবং কাউন্সিল অব ইউরোপ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (সিইডিবি)। এছাড়া সরকারি খাতের বড় বড় প্রকল্প এ নীতিমালার আওতার বাইরে থাকবে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.