শাবিপ্রবি’র শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস শিক্ষামন্ত্রীর
শেয়ারবাজার ডেস্ক: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক উল্লেখ করে তাদের সব দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। তাদের সব দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন করবো। তারা অনশন ভেঙেছেন, এজন্য তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছি।’
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর হেয়ার রোডে নিজ বাসভবনে শাবিপ্রবি ইস্যু নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সরকার সবাই একপক্ষ। এখানে দুই পক্ষ বলে কিছু নেই। আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েছেন। তারা একটু গুছিয়ে উঠুক। কিছুদিন পর আমরা সেখানে যেতে পারি। শিক্ষার্থীরা চাইলে আমরা যে কোনো সময় তাদের সংগে বসবো।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ৭ দিন ধরে চলমান অনশন ভঙ্গ করানোর জন্য অধ্যাপক জাফর ইকবালকে ধন্যবাদ জানান শিক্ষামন্ত্রী।
১৭ জানুয়ারি থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
গত বুধবার থেকে একই স্থানে অনশন শুরু করেন ২৪ শিক্ষার্থী। বাসবভনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ার কারণে ১৭ জানুয়ারি থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
এর আগে বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্টের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলন শুরু হয়। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। এর পর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে।
শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে ঢাকা থেকে বুধবার ভোর চারটায় ক্যাম্পাসে পৌঁছান অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পানি পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি আবেগি মানুষ। চোখের জল আটকাতে পারি না। আমি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী স্মারকে লিখে ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। এটা এখন তোমাদের দিচ্ছি। এখন সিআইডি দেখি আমারে অ্যারেস্ট করে কি না। আমারে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাক।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানো শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক দম্পতি। সাংবাদিকদের ড. জাফর ইকবাল বলেন, শিক্ষার্থীরা আমার কথা মতো অনশন ভঙ্গ করেছে। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এখন তাদের হাসপাতালে নিতে হবে তারা যেন সুন্দরভাবে সুস্থ হয়ে উঠে। আমি অত্যন্ত দুঃখের সংগে বলছি, আন্দোলন থামানোর জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে তা অমানবিক, নিষ্ঠুর ও দানবীয়।
তিনি বলেন, আমি ধরে নিয়েছিলাম এখানে একটি মেডিকেল টিম থাকবে, তারা নিয়মিত তাদের চিকিৎসা দেবে। এখানে মেডিকেল টিম না থাকাতে আমি কষ্ট পেয়েছি।
জাফর ইকবাল বলেন, এখানে আসার আগে সরকারের উচ্চমহল থেকে আমার সংগে কথা বলা হয়েছে। তাদের সংগে কথা বলে আমি এখানে এসেছি। আমাকে যারা যে কথা দিয়ে এখানে পাঠিয়েছেন তা যেন তারা রক্ষা করেন। আমার আর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই। কাজেই আমাকে যে কথা দিয়েছেন তা যদি রক্ষা করা না হয়, তাহলে ছাত্রদের সংগে নয়, আমার ও এদেশের প্রগতিশীল মানুষদের সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে ধরে নেবো। খাবার বন্ধ করার মতো নিষ্ঠুরতা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে করা হবে, অকল্পনীয়।
ড. জাফর ইকবাল আরও বলেন, যদি কথা না রাখা হয় তাহলে অবশ্যই আমার ভূমিকা থাকবে। আমার কাছে তারা এসেছেন, আমি যাইনি। সুতরাং আমি অনশনের হাত থেকে রক্ষা করে কথা রেখেছি, আপনারাও কথা রাখবেন আশা করছি। পুলিশ এদের উপর নিমর্মভাবে হামলা করেছে, তাই তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক দাবি। যে হামলা করেছে তাকে আমি মানুষ বলতে চাই না, সে দানব। তার জন্য শিক্ষার্থীদের মরার কোনো দরকার নেই।
অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বলেন, যখন পুলিশ হামলা করেছে তখন শিক্ষকদের ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ছিলো। বিভিন্ন সময় আন্দোলনে আমরা সামনে ছিলাম, সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলন থামানো হয়েছে। পুলিশের সামনে আমি দাঁড়ালে পুলিশ কিছুই করবে না, কারণ আমি একজন শিক্ষক। ওই ঘটনায় শিক্ষকরা প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি। শিক্ষার্থীরা, তোমরাও একদিন শিক্ষক হবে, তোমরা এমন মেরুদণ্ডহীন হয়ো না।
অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) অনশন থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন।
জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব বলেন, ড. জাফর ইকবাল স্যার আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, তাই অনশন ভেঙেছি। কারণ, উনাদের আমরা বিশ্বাস করি। তবে যতোক্ষণ এই উপাচার্য পদত্যাগ না করবেন, ততোক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে তা আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।