আজ: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ইং, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৫ জুলাই ২০১৫, রবিবার |

kidarkar

মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস করে ফায়দা!

DSEশেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে গুজব রটিয়ে ফায়দা হাসিল স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কোনো কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আগাম ফাঁস করাকে সাধারণত গুজব বলা হয়। আর অধিকাংশ সময় রটে যাওয়া গুজব সত্য হতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এ ব্যাপারে সচেতন হলেও মুনাফার আশায় গুজবনির্ভর হয়ে পড়েন খুব সহজে। আর সে সুযোগে একটি মহল কোনো কোম্পানির শেয়ার দর বাড়া কিংবা কমার আগাম তথ্য ফাঁস করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সিকিউরিটিজ হাউজের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং কতিপয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরকে ব্যবহার করে চক্রগুলো। তারা অর্থের বিনিময়ে হাউজে আগাম তথ্য ফাঁস করে দেয়। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের একটা অংশ হাউজ থেকে তথ্য নিয়ে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করে। এর বিনিময়ে হাউজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নগদ উপহার দাবি করেন। অনেক সময় চুক্তিভিত্তিক তথ্য বিক্রি করা হয়।
সম্প্রতি শেয়ারবাজার নিউজ ডটকমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তথ্য বিক্রি করে ফায়দা লোটার কাহিনী। আর এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী, সিকিউরিটিজ হাউজের কর্মকর্তা-কর্মচারী কোম্পানির লোকজন এমনকি পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে কর্মরতদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিনিয়োগকারীকে জনৈক ব্যক্তি একটি কোম্পানির শেয়ার কিনতে বলেন। কারণ হিসেবে ওই ব্যক্তি ওই কোম্পানির রাইট শেয়ার পাশ হবার তথ্য প্রদান করেন। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী সত্যি সত্যিই নির্দিষ্ট তারিখে ওই কোম্পানির রাইট শেয়ারের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আর এর বিনিময়ে ওই ব্যক্তি সুবিধা আদায় করে নেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে। আবার মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সঙ্গে আঁতাত করেও অনেকে আগাম তথ্য বিক্রি করছে বলে জানা গেছে।
রবিউল ইসলাম নামে এক সাধারণ বিনিয়োগকারী বলেন, কেউ একজন তাকে বলেছে একটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড অমুক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে। তাই ওই কোম্পানির শেয়ার দর বাড়বে। তথ্য পাওয়ার পরদিন থেকেই দেখা গেছে ওই শেয়ারের দর বেড়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুষ্ট চক্রগুলো পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক গতিতে চলার পথে হুমকিস্বরূপ। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়ে তারা দিব্যি মুনাফা লুটে নেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। অনতিবিলম্বে এদের চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বিএসইসির প্রতি আহ্বান জানান তারা। তারা আরো বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড কিংবা মার্চেন্ট ব্যাংক কোন কোম্পানির শেয়ারের বিনিয়োগ করছে এ তথ্য জানে সে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তাদের যোগসাজশ ছাড়া এ ধরনের তথ্য আগাম ফাঁস হওয়া সম্ভব নয়। আবার রাইট শেয়ার পাশের আগাম খবর বিএসইসির কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ জানার কথা নয়। কিন্তু সে অদৃষ্ট চক্র আগাম খবর পায় কি করে?

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ারবাজার নিউজ ডটকমকে জানান, ‘ যদিও ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের (আগাম তথ্য ফাঁস) বিষয়ে বিদ্যমান আইন রয়েছে। কিন্তু এটাকে আরো যুগপোযোগী করতে হবে। কিন্তু সব দেশে এটা প্রমাণ করা কঠিন। অন্যান্য দেশে বিশেষ করে আমেরিকায় ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের প্রমাণ পেলে কঠিন শাস্তি দেয়া হয়। অথচ আমাদের দেশে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের অপরাধে শাস্তির নজির তেমনটা চোখে পড়ে না। বিএসইসিতে সার্ভিলেন্স সফটওয়্যার চালু করার পর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেকটা উন্নতি হয়েছে। এখন প্রয়োজন বিদ্যমান আইনের দুর্বলতাগুলো দূর করে আইনটি যুগপোযোগী করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

 

 

শেয়ারবাজারনিউজ/মু.সা/ও.শি/আ.তু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.