আজ: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৬ জুলাই ২০১৫, সোমবার |

kidarkar

লভ্যাংশের টাকা এফডিআরে: বঞ্চিত বিনিয়োগকারীরা

DSE  CSE-sharebazarnewsশেয়ারবাজার রিপোর্ট: অর্থবছর শেষ হয়ে যাওয়ার পাঁচ-ছয় মাস পারও বোর্ড সভায় বিলম্ব করছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানি। অভিযোগ উঠছে, একদিকে এসব কোম্পানি যেমন বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এফডিআর করে নিজেদের পকেট ভারী করছে। অন্যদিকে এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে চলছে ব্যপক কারসাজি।

বেশির ভাগ কোম্পানির অর্থবছর শেষ হয় ডিসেম্বর কিংবা জুন মাসে। কোম্পানিগুলোর অর্থবছর ও হিসাব সম্পন্ন হবার ৫ থেকে ৬ মাস পার হয়ে গেলেও ডিভিডেন্ড দিতে নানা টালবাহানা করছে। ডিসেম্বরে হিসাব শেষ হওয়া কোম্পানিগুলো ৫-৬ মাস পরে বোর্ড সভায় ডিভিডেন্ডের ঘোষণা করলেও বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করছে আরও দেড় থেকে দুই মাস পরে। এতে করে বছরের লাভের টাকা ৭ থেকে ৮ মাস টাকা ব্যাংকে এফডিআর করে রাখা হচ্ছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ বোর্ডে ডিভিডেন্ডের ঘোষণা দেয়া হলেও বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই এ ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের হাতে পৌঁছায় না। এ কারণে দেরি করে এজিএম করলে লাভের পাল্লা ভারি থাকে পরিচালকদের। আর এ দূর্বলতারই সুযোগ নিচ্ছে এজিএমের দালাল চক্র ও পরিচালকদের একটি বিশেষ অংশ।

জানা যায়, ঢাকা বা তার আশেপাশে অনুষ্ঠিত হওয়া কোম্পানিগুলোর বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) নামমাত্র কয়েকটি শেয়ার কিনে শেয়ারহোল্ডার সেজে অংশ নিচ্ছে এজিএম পার্টি দালালরা। এই দালাল চক্রদের জন্য প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা এজিএমে কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন দূর্নীতি বা অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে পারেন না। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার সবচেয়ে বড় সুযোগ বিনিয়োগকারীদের আসে এজিএমের সময়।

বিভিন্ন কোম্পানি থেকে পাওয়া তথ্যমতে, এজিএমের পূর্বে নামে মাত্র কিছু শেয়ার কিনে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে কয়েকটি গ্রুপ। প্রতি গ্রুপে ৫-৬ থাকে। কোম্পানির দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে এজিএমের আগে দালালরা বিভিন্ন কোম্পানিতে যোগায়োগ করে টাকার জন্য। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী কোম্পানি সন্তুষ্ট করতে পারলে এজিএম পাশ করিয়ে দেবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির আর্থিক নিরীক্ষা রিপোর্ট, অডিটর ও ব্যবস্তাপনা ব্যয় ইত্যাদি নিয়ে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ পাবে না বলেও নিশ্চয়তা দেয়। এর বিনিময়ে বেশ মোটা অংকের টাকা খসাতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে। কোম্পানিগুলোর দূর্বলতা এবং বিভিন্নক্ষেত্রে অনিয়ম ঢাকার জন্য অনেক অসাধু উদ্যোক্তা ও কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট এদের প্রস্তাবে সায় দেয়। আবার কেউ কেউ এদেরকে নিজ গরজে ভাড়া করে। এজিএম পার্টি দালালদের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে অনেক সময় এজিএমে নানা অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি হবার নজিরও আছে।

ক্রমাগত অনিয়মের চাপে এজিএমে উপহার ও আপ্যায়নের সুযোগ বন্ধ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সেচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি। এ ক্ষেত্রে এজিএমের খরচের পরিমাণও কমেছে অনেকটাই। যার ফলে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএমের) খরচ বেশি দেখাতে পারছে না কোম্পানিগুলো। তবে এ ক্ষেত্রে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠছে এজিএম পার্টি দালালদের দেওয়া মোটা অংকের টাকা কোন খাতে দেখাচ্ছে কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপকরা।

বেশ কিছু কোম্পানি থেকে পাওয়া তথ্যেমতে, যেখানে আপ্যায়ন করা হচ্ছে না সেখানে খরচের পরিমাণ বেশি হওয়া অসম্ভব। যার ফলে ৬-৭ মাস পর এজিএম করছে কোম্পানিগুলো। আর এই ৬-৭ মাস মুনাফার টাকা এফডিআর করে বাড়তি টাকার যোগান দেওয়া হচ্ছে। যা বাড়তি আয় হিসাবে দেখানো হচ্ছে না এবং এজিএমে দালালদের দেওয়া মোটা অংকের টাকা কোনো প্রকার খরচেও দেখানো হচ্ছেনা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারির অভাবে কোম্পানিগুলোও এ ক্ষেত্রে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সুষ্ঠ কোনো প্রমান না থাকায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দালালদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা নানা আইনী সংস্কার ও নতুন বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা প্রতিষ্ঠার যে চেষ্টা করছে, এজিএম পার্টির উৎপাত বন্ধ করতে না পারলে তার সবই বিফলে যাবে। এতে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন কোম্পানির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/মু/ও

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.