পুঁজিবাজার উন্নয়নে এডিবির আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রদান
শেয়ারবাজার রিপোর্ট : পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকারকে দুই কিস্তিতে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বা ৩০ কোটি মার্কিন ডলার প্রদান করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) দেয়া ২৮টি শর্ত পরিপালনের মাধ্যমে এ অর্থ দেয়া হয়। প্রথম কিস্তির মোট ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বা ১৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা পেতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ১৩টি শর্তপূরণ করতে হয়। বাকি ১২টি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে দ্বিতীয় কিস্তির ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা গত মাসে প্রদান করা হয়।
এডিবির সাউথ এশিয়া বিভাগ,পাবলিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড ডিভিশন,ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরের সিনিয়র ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আলী মুনতাজ এইচ শাহ শেয়ারবাজার নিউজ ডটকমকে অর্থ প্রদানের বিষয়টি জানিয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: সাইফুর রহমান অর্থ প্রাপ্তির বিষয়ে শেয়ারবাজার নিউজ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর ফিলিপাইনের ম্যানিলায় এডিবির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অবকাঠানো উন্নয়নে দ্বিতীয়বারের ঋণ সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মূলত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বা ৩০ কোটি ডলার ঋণ হিসেবে দেয়া হয়েছে। এডিবি সেকেন্ড ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (সিএমডিপি-২) শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় এ ঋণ প্রদান করেছে।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে ব্যাপক ধসে এক প্রকার গতিহীন হয়ে পড়ে পুঁজিবাজার। এ সেক্টরের গতি ফিরিয়ে আনতে ১৯৯৭ সালের নভেম্বর মাসে অর্থাৎ সে সময়ের সংকটাবস্থা কাটিয়ে উঠতে ৮ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেয় এডিবি। এদিকে ২০১০ সালের শেষের থেকে বর্তমান পর্যন্ত পুঁজিবাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এতে মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) কমে আসার পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়ন ব্যাপক বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। তাই বর্তমান পুঁজিবাজারের অস্থিরতা কাটিয়ে উঠার জন্য দ্বিতীয়বারের মতো ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এডিবি।
এডিবি মনে করে, বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরিচালন ও আর্থিক সক্ষমতার উন্নয়ন,অধিকতর নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য যে ছকবাঁধা নিয়মাবলী রয়েছে সেগুলোর সুষ্ঠু প্রয়োগ ও ব্যক্তি কেন্দ্রিক বিনিয়োগের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হলে দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন করা সম্ভব। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) যে পরিমাণ সূচক ছিল বর্তমানে তার অর্ধেকে নেমে এসেছে। শেয়ারমূল্য ৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। দেশের জিডিপির পরিমাণ ২২ শতাংশ কমে গেছে। হাজার হাজার বিনিয়োগকারী তাদের সঞ্চিত পুঁজি হারিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই সংকটাবস্থা কাটানোর জন্য কোনো ফান্ড সহায়ক ভূমিকা পালন করেনি।
২০১৫ অর্থবছরের মধ্যে ৮ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ও ২০২১ অর্থবছরের মধ্যে ১০ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করার জন্য বাংলাদেশের পরিকল্পনা রয়েছে। যদি তা বাস্তবায়িত হয় তাহলে দারিদ্রতার গ্লানি মুছে দিয়ে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিণত হবে। এতে আল্টিমেটলি পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। যা দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে এডিবি। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেছে। সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এডিবির ঋণ সহায়তা করা হবে। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় মেয়াদে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা প্রদান করেছে এডিবি।
এ ব্যাপারে এডিবির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা সৈয়দ আলী মুনতাজ এইচ শাহ শেয়ারবাজার নিউজ ডটকমকে জানান, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে দুই কিস্তিতে এডিবি সেকেন্ড ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (সিএমডিপি-২) শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় এ ঋণ প্রদান করা হয়েছে। ডিসেম্বর,২০১৪ মাসেই আমরা এ অর্থ প্রদানের কার্যক্রম শেষ করেছি।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: সাইফুর রহমান শেয়ারবাজার নিউজ ডটকমকে জানান, এডিবির দেয়া মোট ২৮টি শর্ত পরিপালনের মাধ্যমে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ বাবদ পাওয়া গেছে। এ অর্থের সবটুকুই পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শেয়ারবাজার/সা/মু