স্পট মার্কেটের জঞ্জাল থেকে শাহজিবাজারের মুক্তি
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: দীর্ঘদিন পর স্পট মার্কেটের জঞ্জাল থেকে মুক্তি পেয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতের শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (এসপিসিএল)। মঙ্গলবার ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৫৫১তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিএসইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারকে স্পট মার্কেটে লেনদেনের বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি দিয়ে নিয়মিত বাজারে লেনদেনের অনুমতি প্রদানে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে বিএসইসি। উল্লেখ্য, কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন নন-মার্জিনেবল অবস্থায় অব্যাহত থাকবে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের ৩ আগস্ট সর্বপ্রথম শাহজিবাজার পাওয়ারের শেয়ার দর অস্বাভাবিকহারে বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। কমিটিকে ১৭ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই ১১ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য শাহজিবাজার পাওয়ারের শেয়ার লেনদেন বিএসইসির তদন্তে সহায়তা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে স্থগিত করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ।
ওই সময় দেখা যায়, আগের ১৪ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর বাড়ে ৫৪.২ টাকা বা ১৫৫ শতাংশ । নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় ২১ আগস্ট বিএসইসির গঠিত কমিটি সময় বাড়ানোর আবেদন জানায়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন সময় বাড়িয়ে শাহজিবাজার পাওয়ারের প্রতিবেদন ২৫ আগস্ট দাখিলের নির্দেশ দেয়। ২৫ আগস্ট প্রদত্ত প্রতিবেদনে শাহজিবাজার পাওয়ারের দর অস্বাভাবিকহারে বাড়ার পেছনে কারসাজি পায়নি বিএসইসির তদন্ত কমিটি। কোম্পানির তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনে প্রতি শেয়ারে আয় (ইপিএস) ০.৭১ টাকা বেড়ে যাওয়ার কারণে শেয়ারটির চাহিদা বেড়েছে। যা দর বাড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বলে বিএসইসির তদন্ত কমিটি উল্লেখ করে।
এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর সাবসিডিয়ারি কোম্পানি পেট্রোমেক্স রিফাইনারির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর তথ্য প্রকাশ না করায় শাহজিবাজার পাওয়ারের বিরুদ্ধে ৫২৭তম কমিশন সভায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। আর ৫৩০তম সভায় আর্থিক প্রতিবেদনে অসত্য তথ্য প্রকাশ করায় শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালককে কমিশন ১০ লাখ টাকা করে এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এসময় ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ শেষ হওয়া তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ইপিএস ১.৪৮ টাকার পরিবর্তে ২.৫৪ টাকা দেখায় বলে জানায় বিএসইসি।
বেশ কয়েকদিন লেনদেন বন্ধ রাখার পরও শেয়ারটির দর অস্বাভাবিকহারে বাড়তে থাকায় ফের ৯ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় কমিটি গঠন করে বিএসইসি। পরিচালক রেজাউল করিম ও শামসুর রহমানের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এরপর দর বাড়ার ধারাবাহিকতায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বলে শাহজিবাজার পাওয়ারের শেয়ার স্পট মার্কেটে লেনদেন করার নির্দেশ দেয় বিএসইসি। পাশাপাশি এ সিকিউরিটিজকে নন-মার্জিনেবল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গত বছরের ১৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৫৩২তম জরুরি কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শাহজিবাজার পাওয়ারের শেয়ার দর অস্বাভাবিকহারে বাড়ার পেছনে কতিপয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম পেয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। দর বাড়ার কারণ তদন্তে গঠিত কমিটি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে। এরই অংশ হিসেবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বাংলাদেশ বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়। গত ৯ ডিসেম্বর বিএসইসির ৫৩৩তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরপর গত ২ জুন বিএসইসির্ ৫৪৬তম কমিশন সভায় শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (এসপিসিএল) এর শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় ৯ প্রতিষ্ঠানসহ এর সঙ্গে জড়িত শীর্ষ কর্মকর্তা এবং তাদের বিভিন্ন ক্লায়েন্টকে জরিমানা করা হয়। এছাড়া কারসাজির সঙ্গে জড়িত ৩ ব্যক্তি এবং ১ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
শেয়ারবাজারনিউজ/সা