আজ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৯ জুলাই ২০১৫, রবিবার |

kidarkar

স্বল্প পুঁজির ডিভিডেন্ড: বঞ্চিত বিনিয়োগকারীরা!

Divedent_sb newsশেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে বড় পুঁজির বিনিয়োগকারীদের চেয়ে স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের সাধারণত এক থেকে একাধিক লটের মধ্যেই মূলত স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ। শেয়ার সংখ্যা অল্প থাকাতে কোম্পানির ঘোষিত ডিভিডেন্ডের প্রতিও তাদের তেমনটা আগ্রহ থাকে না। এদের শেয়ার দরের উঠা-নামার মধ্যে মুনাফা বের করার প্রতিই নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়। আর এই সুযোগগুলো কাজে লাগাচ্ছে কোম্পানি ও সিকিউরিটিজ হাউজগুলো।

সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর নামে ঘোষিত ক্যাশ ডিভিডেন্ড ইস্যু করা হলেও তা ঘুরে ফিরে কোম্পানির অ্যাকাউন্টেই থেকে যাচ্ছে। অন্যদিকে রেকর্ড ডেটের পূর্ব মুর্হূত্বে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ট্রান্সফার করে স্টক ডিভিডেন্ডগুলো অনৈতিকভাবে বেশকিছু সিকিউরিটিজ হাউজ নিজেদের অ্যাকাউন্টে ধরে রাখছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো প্রতিবছর শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে নগদ লভ্যাংশ, বোনাস শেয়ার অথবা রাইট শেয়ার ইস্যু করে থাকে। এর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ ও রিফান্ড ওয়ারেন্ট সাধারণত যে সব কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সরবরাহ বা বিলি করে থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো হয়ে থাকে অপরিচিত। এগুলোর না থাকে ডকুমেন্ট সরবরাহ করার অভিজ্ঞতা, না থাকে সঠিক স্থানে পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করার স্বদিচ্ছা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এরা কয়েকটা ব্রোকারেজ হাউজে ঘুরে যে ক’জনকে হাতের নাগালে পায় তাদের হাতে ডকুমেন্ট পৌঁছে দেয়। বাকিদের ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে তৎপর হয় না। তাই যথাসময়ে ওই বিনিয়োগকারীরা নগদ লভ্যাংশ হাতে পায় না। অন্যদিকে স্বল্প পরিমাণ ডিভিডেন্ডের কারণে বিনিয়োগকারীদেরও সেদিকে আগ্রহ কম থাকে। ধরা যাক,কোনো কোম্পানির ২০০টি শেয়ারে এক লট। কোম্পানিটি ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এক্ষেত্রে প্রতি লটের বিপরীতে বিনিয়োগকারীরা ২০০ টাকা নগদ ডিভিডেন্ড পাবেন।
দেখা যায়, এই দুইশত টাকার ডিভিডেন্ডের জন্য অধিকাংশ বিনিয়োগকারী আগ্রহ দেখায় না। আর সেই সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে কোম্পানিগুলো। অনেকগুলো বিও অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা হচ্ছে। তার তা কোম্পানির কোষাগারেই থাকছে। তবে অনলাইনের মাধ্যমে যারা বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে সরাসরি ক্যাশ ডিভিডেন্ড পৌছে দিচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। এদিকে পুঁজিবাজারের কয়েকটি সিকিউরিটিজ হাউজ রেকর্ড ডেটের পূর্বে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফলিওতে থাকা শেয়ার নিজেদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে স্টক ডিভিডেন্ড লুফে নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এসসিএল সিকিউরিটিজ হাউজের বিনিয়োগকারী মো.শহিদুল্লাহ জানান, ডিভিডেন্ড দিয়ে পূর্বের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার জন্য রেকর্ড ডেটের আগে তিনি বেশকিছু কোম্পানির শেয়ার কেনেন। রেকর্ড ডেটের পর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড তার অ্যাকাউন্টে জমা না হওয়ায় তিনি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তার নামে কোনো ডিভিডেন্ড জমা হয়নি বলে জানিয়ে দেন। পরবর্তীতে তিনি হাউজে যোগাযোগ করলে তারা জানান, রেকর্ড ডেটের পূর্বে তার অ্যাকাউন্টের শেয়ার হাউজের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নিয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারী শহিদুল্লাহর অ্যাকাউন্টে কোনো ডিভিডেন্ড জমা হয়নি।

শহিদুল্লাহ জানান, তিনি তিতাস গ্যাসের ১ হাজার ৫০০ শেয়ার কেনেন। কিন্তু এ কোম্পানির ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের সময় তার অ্যাকাউন্টে কোনো শেয়ার ছিল না। এছাড়া এম আই সিমেন্টের ৪ হাজার ৬০০ শেয়ার, ডেলটা স্পিনার্সের ১৩ হাজার ৬০০ শেয়ার এনভয় টেক্সটাইলের ৭ হাজার শেয়ারের বিপরীতে প্রাপ্য ডিভিডেন্ড থেকে এভাবেই তিনি বঞ্চিত হন।

মো. আনিসুজ্জামান নামে আরেক বিনিয়োগকারী জানান, তার পোর্টফলিওতে আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংকের ৫ হাজার শেয়ার রয়েছে। কোম্পানিটি ২১ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়ায় তার অডলটসহ মোট শেয়ারের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ হাজার ৫০টি। এক্ষেত্রে বোনাস শেয়ারের পরিমাণ ১ হাজার ৫০টি। কিন্তু বোনাস শেয়ার অ্যাকাউন্টে যুক্ত হওয়ার পর তার পোর্টফলিওতে শেয়ারের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৫ হাজার ৫০০টি। অর্থাৎ ৫৫০টি শেয়ারই কম। পরবর্তীতে বিষয়টি হাউজ কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা পোর্টফলিতে প্রাপ্য শেয়ার যোগ করে দেন। এভাবে অনেক কোম্পানির বোনাস শেয়ার ঠিকমতো না দিয়ে নিজেরা শেয়ার আত্মসাৎ করে ফায়দা লুটে যাচ্ছে।

অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না থাকায় দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা জানান, আমরা হাউজে অনেক বিশ্বাস করে টাকা জমা দেই। শেয়ার কেনা-বেচা করি। অধিকাংশ বিনিয়োগকারী নিজেদের পোর্টফলিও নিয়মিত যাচাই-বাছাই না করে হাউজের উপর যাবতীয় ভার ন্যস্ত করে। অথচ এই বিশ্বাসের অসৎ ফায়দা লুটে যাচ্ছে বেশকিছু হাউজ। তাই ক্যাশ ডিভিডেন্ডের ক্ষেত্রে প্রতিটি কোম্পানিকে বাধ্যতামূলকভাবে বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্টে পৌছে দেয়ার পাশাপাাশি হাউজগুলোর এই অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ করা জরুরি। এজন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ভুক্তভোগিরা।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/সা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.