আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৭ জুলাই ২০১৫, শুক্রবার |

kidarkar

অকশনের বাজারে দূরদর্শিতার বিকল্প নেই: শাকিল রিজভী

sakil rizbiশেয়ারবাজার রিপোর্ট: শেয়ারবাজার হচ্ছে অকশনের বাজার। এখানে ফিক্সড প্রাইসের কোনো কথা নেই। এখানে একেক জন একেক রকম দাম হাকাতে পারে। আপনি কিনে লাভ করবেন না ঠকবেন সেখানে স্টক এক্সচেঞ্জের করার কিছু নেই। স্টক এক্সচেঞ্জ বাজার বসানোর দায়িত্বে থাকে। তারা আপনাকে পণ্য সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে।এর বাইরে এর কোনো এখতিয়ার নেই। শেয়ারবাজার নিউজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক মো: শাকিল রিজভী। তার সাক্ষাতকারে আমাদের শেয়ারবাজারে বাইব্যাক, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টের প্রয়োজনীয়তা, দক্ষ না হয়ে ডে-ট্রেডের অপকারিতা, কিভাবে সঠিক ডে-ট্রেডার হওয়া যায় সে বিষয়সহ বিনিয়োগের সঠিক দিক নির্দেশনার অনেক কিছু উঠে এসেছে। নিম্নে সাক্ষাতকারটি চুম্বক অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো:

শেয়ারবাজারনিউজ: বাজার ধসের পর থেকে বাইব্যাক শব্দটা বেশ আলোচিত হয়েছে এবং হচ্ছে। আসলে বাইব্যাক আমাদের দেশের শেয়ারবাজারের জন্য কতটুকু কার্যকর?

শাকিল রিজভী: বাইব্যাক নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আগে আমাদের বুঝতে হবে কিভাবে বাইব্যাক সম্ভব। সাধারন মানুষ বাইব্যাক বলতে যেটা বুঝে সেটা হচ্ছে, যদি কোম্পানির শেয়ার ফেসভ্যালু বা ১০ টাকার নিচে চলে আসে তাহলে অন্য কেউ সেই শেয়ার কিনে নেবে। কথা হচ্ছে সেই কেউটা কে?
হয় কোম্পানির পরিচালক নয়তো কোম্পানি। এখন কোনো পরিচালককে তো আপনি জোর করে শেয়ার কিনাতে পারেন না। তার সামর্থ্যর ব্যাপারও আছে। আর বাকি থাকে কোম্পানি, কোম্পানি তো বিনিয়োগকারীর টাকা নিয়ে কোম্পানির উৎপাদনে যায়, সে আবার কিভাবে শেয়ার কিনে নেবে। এটা তো সম্ভব না। তাই আমার মনে হয় বাইব্যাক নিয়ে যুক্তিহীন কথা না বলাই ভালো। এটা আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্ভব না।

শেয়ারবাজারনিউজ: কিন্তু বাইব্যাকতো অন্যান্য দেশে হয়। আমাদের সমস্যাটা কোথায়?

শাকিল রিজভী: বাইব্যাক যে হয় না তা না। অন্যান্য দেশে বাইব্যাক হয়। সেক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে, কোনো কোম্পানির শেয়ারের দর যদি তার ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে যায়, তাহলে কো্ম্পানি তার রিজার্ভের টাকা দিয়ে শেয়ার কিনে পেইড-আপ ছোট করে। এখন যদি কোম্পানির রিজার্ভে শেয়ার কিনে নেয়ার মত টাকা না থাকে তাহলে সে বাইব্যাক করবে কিভাবে?
আমাদের দেশের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর দিকে দেখুন যাদের বাইব্যাক করার সামর্থ্য আছে তাদের শেয়ারের দর কম না। যেমন: বাটা সু। তাদের রিজার্ভে অনেক টাকা আছে। কিন্তু শেয়ারের দাম তো আর বাইব্যাক করার মত অবস্থায় নেই। আবার যার শেয়ারের দাম কম,খবর নিয়ে দেখেন তার বাইব্যাক করার সামর্থ্যও নেই। তাই অন্তত বর্তমান পরিস্থিতিতে বাইব্যাক সম্ভব না। হয়তো আগামীতে সে রকম পরিস্থিতি আসবে।

শেয়ারবাজারনিউজ: সাম্প্রতিক সময় পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর এক্সপোজারের সময় বাড়ানো নিয়ে তোড়জোড় চলছে। আপনি কি মনে করেন এ সময়সীমা বাড়ানো উচিৎ?

শাকিল রিজভী: হ্যা, তা তো অবশ্যই বাড়ানো উচিৎ। এতে বিনিয়োগকারীদের মনে স্বস্তি ফিরে আসবে। আরও দুই বছর পর্যন্ত এ সময়সীমা বাড়ানো উচিৎ। তাও যদি না হয় অন্তত আর এক বছর তো বাজারের স্বার্থে সরকার দিতেই পারে।

শেয়ারবাজারনিউজ: ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট বাস্তবায়ন হলে বাজারের জন্য কি সুফল বয়ে আনবে?

শাকিল রিজভী: ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টটি এখনও পাস হচ্ছে না। যে সমস্যাগুলো রয়েছে তার সমাধান হওয়া উচিত। আইনটি হয়ে গেলে সবচাইতে ভালো যে বিষয়টি হবে তা হচ্ছে ফাইন্যান্সিয়াল কাউন্সিল গঠন হবে। কোনো আর্থিক প্রতিবেদনের কোনো অংশে যদি কারও আপত্তি থাকে তবে তা জানানোর একটা জায়গা তৈরী হবে। এটা বাইরের কেউ চাক আর না চাক, শেয়ারবাজারের সবাই এ বিষটির পক্ষে থাকবে। এতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা পাবে।

শেয়ারবাজারনিউজ: এখন থেকে কোম্পানির আইপিও আনুমোদনের আগে স্টক এক্সচেঞ্জের অনাপত্তি দেয়ার নিয়ম করা হয়েছে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

শাকিল রিজভী: আগেও এ বিষয়টি ছিল। মাঝে কিছুদিন বন্ধ ছিল, এখন আবার তা চালু হচ্ছে। স্টক এক্সচেঞ্জের অনাপত্তি বাধ্যতামূলক করা হলে যেটা হবে সেটা হলো কোম্পানির লেনদেন বা তালিকাভুক্তি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আর কোনো শঙ্কার মধ্যে থাকতে হবে না।

তবে অনুমোদন দেয়ার এখতিয়ার তো বিএসইসির কাছেই থাকছে। এমনকি স্টক এক্সচেঞ্জ যদি রাজি না থাকে তবেও কমিশন চাইলে অনুমোদনের কারণ ব্যাখ্যা করে কোম্পানিকে অনুমোদন দিতে পারে।

শেয়ারবাজারনিউজ: মাঝে মাঝে কোনো কোম্পানির শেয়ার দর আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হতে দেখা যায়। এ বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

শাকিল রিজভী: দেখুন,এটা রেশন কিংবা ফিক্সড প্রাইসের বাজার না। এটা অকশনের বাজার। এখানে একেক জন একেক রকম দাম হাকাতে পারে। আপনি কিনে লাভ করবেন না ঠকবেন সেখানে স্টক এক্সচেঞ্জের করার কিছু নেই। স্টক এক্সচেঞ্জ বাজার বসানোর দায়িত্বে থাকে। তারা আপনাকে পণ্য সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে।

শেয়ারবাজারনিউজ: অনেক বিনিয়োগকারীদের ডে-ট্রেডারের আচরণ লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে ডে-ট্রেড কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ?

শাকিল রিজভী: ডে ট্রেডিং এ পারদর্শী না হলে পুঁজি হারানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কোনো কিছু না বুঝে নতুন বিনিয়োগকারীদের Day Trading এ অংশগ্রহণ করা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। আগে Day Trading এর বিষয় বুঝে, রপ্ত করে বেচা-কেনা করা উচিত। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে একদিকে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন অন্যদিকে শেয়ারবাজারেও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।

শেয়ারবাজারনিউজ: বাজারে কি কি ধরণের বিনিয়োগকারী দেখা যায়? এক্ষেত্রে তাহলে বিনিয়োগের পূর্বশর্ত কি?

শাকিল রিজভী: বিনিয়োগের পূর্বে ঠিক করতে হবে আপনি কোন ধরনের বিনিয়োগকারী হতে চান। সেভাবেই আপনার Port folio ঠিক করতে হবে। সাধারণত বাজারে তিন ধরনের বিনিয়োগকারী ও Day Traders দেখা যায়। ০১. Growth Investors 02.Balance Investors 03. Income Investors I Day Traders / Speculator| একজন বিনিয়োগকারীকে বিনিয়োগের পূর্বে সংক্ষেপে যে সমস্ত কোম্পানির শেয়ার আপনার Port folio তে রাখতে চান সে সমস্ত কোম্পানির EPS, NAV, P/E কোম্পানির অতীত ট্রেক রেকর্ড এবং ভবিষ্যতে কোম্পানির Growth আছে কিনা Dividend Pay Out Ratio অতীতে কেমন ছিল বাজারে অন্যান্য শেয়ারের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে বর্তমানে যে দামে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন তা যুক্তিযুক্ত কিনা বিচার করে শেয়ার ক্রয় করতে হবে।

শেয়ারবাজারনিউজ: এক্ষেত্রে আপনার বাস্তবিক অভিজ্ঞতা যদি শেয়ার করতেন….

শাকিল রিজভী: আমি দেখেছি অনেক বিনিয়োগকারীর Port folio হয় Over Diversification অথবা Under Diversification করে সাজানো। অনেক বিনিয়োগকারীকে দেখা যায় ৪০ থেকে ৫০ অথবা তারও বেশি কোম্পানির শেয়ার তার Port folio তে আছে যা মোটেও ভালো নয়।

আপনার বিনিয়োগকৃত কোম্পানিগুলোর Performance মূল্যায়ন এবং পরিচর্যা করতে হবে। আপনার Port folio যদি মেয়াদি বিনিয়োগের জন্য সাজানো হয় তাহলে আপনার Port folio তে কোম্পানিগুলো থেকে যে Dividend এবং Stock Dividend আসবে তাতে ক্রয়কৃত শেয়ারের মূল্য অনেক কমে আসবে।

একটি মেয়াদি সময় পরে দেখা যাবে অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের চেয়ে আপনার এ বিনিয়োগ অনেক লাভজনক। সত্যিকার বিনিয়োগকারী সাধারণত চায় স্বল্প পরিমাণ ঝুঁকি নিয়ে যৌক্তিক Rate of Return। কিন্তু Day Traders/Speculator চায় High Rate of Return। মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে তারা এটা করে থাকেন।

শেয়ারবাজারনিউজ: অনেকেতো ডে-ট্রেডিং করে ভালো মুনাফা করছে। এক্ষেত্রে সঠিক ডে-ট্রেডার কিভাবে হওয়া যায়?

শাকিল রিজভী: যদি আপনি Day Traders/Speculator হতে চান তাহলে Technical Analysis সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। সহজ কথায় যারা Technical Analysis করে শেয়ার ট্রেডিং করে তারা কোম্পানির Fundamental/Company Health, EPS, NAV এর দিকে তাকায় না।

মার্কেট ট্রেন্ডকে তারা বন্ধু হিসেবে নেয়। যে কোম্পানির শেয়ারে আপনি Day Trading করতে আগ্রহী সে কোম্পানির Trade Volume এর দিকে লক্ষ রাখা উচিত। যদি অনেক Volume এ ট্রেডিং হয় এবং শেয়ারের দাম কমতে থাকে তখন ঐ কোম্পানির শেয়ার না কেনাই ভালো।

শেয়ারবাজারনিউজ: বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু বলুন।

শাকিল রিজভী: বিনিয়োগকারীদের সবসময়ই বলে আসছি আপনারা কোম্পানির গ্রোথ,পিই রেশিও,ইপিএস,এনএভি,পরিচালনা পর্ষদের কারা রয়েছেন এগুলো দেখে বিনিয়োগ করুন। পুঁজি আপনার তাই সিদ্ধান্তও আপনার। বেশি বেশি করে প্রশিক্ষণ নিন। স্টক এক্সচেঞ্জ বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রায়ই বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। আসছে পবিত্র-উল-ফিতর। পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই আনন্দে ঈদ উযযাপন করুক সেটাই কামনা করি।

শেয়ারবাজারনিউজ/মু/সা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.