আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২০ জুলাই ২০১৫, সোমবার |

kidarkar

টাকার বিনিময়ে অস্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন পাশ!

Arthik Protibadon Reportশেয়ারবাজার রিপোর্ট: তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে অস্বচ্ছ হওয়ার অভিযোগ কম নয়। সেই অস্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদনই বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) পাশ হচ্ছে হারহামেশা। তাত্ত্বিকতার বিশ্লেষণে শেয়ারহোল্ডারদের বার্ষিক প্রতিবেদন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান না থাকা বা আন্তরিকতা না থাকার কারণে কোম্পানির অস্বচ্ছত আর্থিক প্রতিবেদন পাশ হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু বাস্তবতায় রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্নতা।

কোম্পানির এজিএম শুরু হওয়ার অন্তত ১৫ দিন পূর্বে সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডারদের নিকট বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠানো হয়। বিশেষ করে পুঁজিবাজারকে ঘিরে কয়েকটি দল রয়েছে যারা কোম্পানির এজিএম পাশ করানোর কাজেই নিয়োজিত থাকে। তাদের প্রত্যেকের বেনেফিশিয়ার ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নামেমাত্র শেয়ার থাকে। এদেরকে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পাশ করানোর জন্য মোটা অঙ্কের চাঁদা প্রদান করতে হয়।

কোম্পানির এজিএমে এরাই শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বক্তব্য প্রদান করে। এতে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অস্বচ্ছ হলেও তা ধরার জন্য মূল শেয়ারহোল্ডারদের এজিএমে বক্তব্য করার সুযোগ দেয়া হয়। অন্যদিকে প্রতিবারই কোম্পানির অস্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন পাশ করিয়ে তার ভিডিও চিত্র সিডি আকারে প্রকাশ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা,ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে পাঠানো হচ্ছে।

এতে একদিকে দিনের পর দিন কোম্পানিগুলো দুর্নীতি করে যাচ্ছে অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরা তথা পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই কোম্পানির প্রকৃত শেয়ারহোল্ডার হওয়ার জন্য নূন্যতম শেয়ারসংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া উচিত বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কোম্পানির সচিব শেয়ারবাজার নিউজ ডটকমকে জানান, ‘ক’ আদ্যক্ষরের একটি কোম্পানির এজিএম পাশ করার জন্য এজিএম পার্টিকে ১০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এখন একটি এজিএম পাশের জন্য যদি ১০ লাখ টাকা অনৈতিকভাবে প্রদান করা হয় তাহলে সে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অস্বচ্ছ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ কোম্পানি নিজের স্বার্থ ছাড়া কোনো কাজ করে না।

তিনি আরো জানান, যাদের দিয়ে এজিএম পাশ করানো হচ্ছে দেখা গেছে তাদের অ্যাকাউন্টে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নামেমাত্র শেয়ার রয়েছে। অর্থাৎ একটি শেয়ার ধারণ করেই তারা শেয়ারহোল্ডার। কোম্পানি ও তাদের যোগসাজশে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির প্রকৃত তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা কোম্পানির ভবিষ্যতের জন্য হুমকি স্বরুপ। যদি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হওয়ার নূন্যতম শেয়ার ধারণের নির্দেশনা জারি করা হয় তাহলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে প্রতারণার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি করফাঁকি এবং পুঁজিবাজারে মূল্য কারসাজির পথ তৈরি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নিম্নমানের নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব প্রতিবেদন তৈরি করে কোটি কোটি টাকা করফাঁকি দিচ্ছে অনেক কোম্পানি। পাশাপাশি ফরমায়েশি এসব প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন পুঁজিবাজারের অসংখ্য বিনিয়োগকারী। আর সেই আর্থিক প্রতিবেদন আইনের মধ্যেই পাশ করিয়ে নেয়া হচ্ছে। তাও গুটি কয়েক শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে। যদিও এজিএমে এসব দালালদের দৌরাত্ম কমাতে কোম্পানির গিফট বা আপ্যায়নের সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।

কিন্তু এখন গিফট বা আপ্যায়নের স্থলে ব্যবহৃত হচ্ছে মোটে অঙ্কের অর্থ। এজিএমের আগেই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ দালালদের হাতে তুলে দিচ্ছে এসব অর্থ। আর তা কোম্পানির বিবিধ খাতের হিসাবে লিপিবদ্ধ করে দেখানো হচ্ছে। এতে কোম্পানির হিসাবও ঠিক থাকলো আবার অসৎ উদ্দেশ্যও কায়েম হলো। তাই বিনিয়োগকারী তথা পুঁজিবাজারের ক্ষতির হাত বাঁচাতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/সা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.