গেম্বলারদের অশনি সংকেত
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ ছয়টি ওয়েব পোর্টালে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচার আগাম মিথ্যা তথ্য প্রচারকারী মাহাবুব সারোয়ারকে ২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য আসামি এ কাজ করেছেন বলে যে অভিযোগ ছিল, তা প্রমাণিত হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছেন।
বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক (বিশেষ জেলা জজ) হুমায়ুন কবীর বাদী পক্ষ (বিএসইসি) ও বিবাদী পক্ষের (মাহাবুব সারোয়ার) সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা এবং যুক্তিতর্ক শুনে সার্বিক দিক বিবেচনা করে এ রায় দেন। এটাই পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিচারক হুমায়ুন কবির আসামি ও বাদী পক্ষের উপস্থিতিতে রায় পড়ে শোনান। মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে রায় পড়ে শুনিয়ে এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন বিচারক হুমায়ুন কবীর।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুর রহমান শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, এটা ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়। আমার মতে এটা একটা যুগান্তকারী রায়। আর বাজারের শৃঙ্খলা রক্ষায় এই রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া শেয়ার কারসাজিকারীদের জন্য এ রায় একটি সতর্কবার্তা। এ ধরনের ইতিবাচক রায়ে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, আসামি মাহাবুব সারোয়ার শেয়ারবাজারের বিভিন্ন কোম্পোনির আগাম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ফেসবুকসহ অন্যান্য ওয়েব পোর্টালে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচার আগাম মিথ্যা তথ্য প্রচার করে বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা বিশ্বাসযোগ্য। এখানে অবিশ্বাসের কিছুই নেই।
আর বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আসামি মাহাবুব সারোয়ারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশে যে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল তা যথাপোযুক্ত। পাশাপাশি পুলিশের তদন্তেও আসামি দোষী হিসেবে প্রমাণীত হয়েছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনা-বেচার তথ্য দিয়ে সহায়তা করার কাজ বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক বা পোর্টফোলিও ম্যানেজার করে থাকে। কিন্তু আসামি মাহাবুব সারোয়ার রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনা-বেচার আগাম তথ্য ফেসবুকসহ বিভিন্ন ওয়েব পোর্টালে প্রকাশ করেছেন। যা সিকিউরিটিজ আইন পরিপন্থী।
আসামি মাহাবুব সারোয়ার সন্দেহাতিতভাবে দোষী হিসেবে প্রমাণীত হয়েছে। তাই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ১৮ ধারা ও সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ২৪ ধারা অনুযায়ী আসামিকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায় শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, দেড় থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিপরীতে আপিল করা হবে।
জানা গেছে, গত ২১ জুন পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন বিচারক হুমায়ুন কবীর। প্রথম দিনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষে ২০১০ সালে দায়ের করা মামলার (পুরনো মামলা নম্বর ৭২০৭/২০১০, নতুন মামলা নম্বর ১৭/২০১৫) বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ মামলায় বাদী পক্ষে সাক্ষ্য দেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, পরিচালক (আইন) মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, পরিচালক রাজিব আহমেদ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক চিফ টেকনিক্যাল অফিসার (সিটিও) এটিএম খায়রুজ্জামান, নওগাঁ পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিদ্দিকুর রহমান (২০১০ সালে তিনি গুলশান থানার ডিউটি অফিসার ছিলেন) ও গোয়েন্দা সংস্থার (এসবি) পুলিশ পরিদর্শক ক্ষিতিশ চন্দ্র রায় (২০১০ সালে তিনি গুলশান থানা থেকে এ মামলার তদন্ত করেন)।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ/ও/মু