১৩ প্রতিষ্ঠান ও এক ব্যক্তিকে জরিমানা
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ১৩টি প্রতিষ্ঠান ও একজন বিনিয়োগকারীকে মোট সাড়ে ৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। গত জুলাই মাসে কমিশনের এনফোর্সমেন্ট বিভাগ সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের কারণে এ জরিমানা করে।
বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, মিথ্যা ও অসত্য তথ্য প্রদান, মার্জিন রুলসের বিভিন্ন আইন ভঙ্গ, ডিলার হিসেবে শেয়ার ক্রয়, ডিলার হিসেবে শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহক হিসাবের টাকা ব্যবহার এবং বাজারে শাহজিবাজার শেয়ারের কৃত্রিম সংকট তৈরীর জন্য শেয়ার ক্রয় করে সিকিউরিটিজ আইনের বিভিন্ন ধারা ভঙ্গ করার জন্য প্রাইম ইসলামি সিকিউরিটিজকে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, পিএফআই সিকিউরিটিজকে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটালকে ২০ লাখ টাকা, শার্প সিকিউরিটিজকে ২ লাখ টাকা, এআইবিএল সিকিউরিটিজকে এক লাখ টাকা এবং বিএলআই সিকিউরিটিজকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধ করার জন্য গত ১৩ জুলাই প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেয় বিএসইসি। এর পাশাপাশি যেসকল আইনের পরিপালনে প্রতিষ্ঠানটি ব্যর্থ হয়েছে তা তিন মাসের মধ্যে পরিপালনের জন্য নির্দেশ প্রদান করে পুঁজিবাজারের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বিএসইসি।
উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি গেটকো টেলিকমিউনিকেশন এবং লিবরা ট্রেডিং কর্পোরেশন নামক দুটি প্রতিষ্ঠান বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরীর জন্য উল্লেখযোগ্য শাহজিবাজারের শেয়ার ক্রয় ও মজুদ করে। যার প্রমান বিএসইসি পেয়েছে। এ অপরাধের জন্য গেটকো টেলিকমিউনিকেশনকে ৫ লাখ টাকা এবং লিবরা ট্রেডিং কর্পোরেশনকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধ করার জন্য গত ১৩ জুলাই প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেয় বিএসইসি। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠান দুটি প্রাইম ইসলামি সিকিউরিটিজ থাকা অ্যাকাউন্টের মাধ্যেমে এ কারসাজি করে।
এদিকে ব্যাক্তি পর্যায়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় গোলাম মহিউদ্দিনকে। গোলাম মহিউদ্দিন ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্ট, শার্প সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এ সবকটি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক। কমিশন প্রমান পায় যে, উল্লেখযোগ্য পরিমান শেয়ার ক্রয় ও মজুদের মাধ্যেমে গোলাম মহিউদ্দিন বাজারে শাহজিবাজারের শেয়ারের কৃত্রিম সংকট তৈরীতে অবদান রাখে। আর ১৫ দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধ করার জন্য গত ১৩ জুলাই গোলাম মহিউদ্দীনকে চিঠি দেয় বিএসইসি।
পাশাপাশি শাহজিবাজার পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ চার পরিচালক রিভিউ আবেদন করায় বিএসইসি জরিমানার পরিমাণ কমিয়েছে। রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবর্তীত জরিমানার পরিমাণ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ৫ লাখ টাকা থেকে এক লাখ টাকা কমিয়ে ৪ লাখ টাকা এবং চার পরিচালকের ১০ লাখ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা কমিয়ে ৮ লাখ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিবর্তীত জরিমানার ৫০ শতাংশ টাকা আগামি ২৯ আগস্টের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য গত ১৬ জুলাই বিএসইসি চিঠি দিয়েছে।
অন্যদিকে শাহজিবাজারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পেট্রোমেক্স রিফাইনারি সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করে পুঁজি উত্তোলন করে। এছাড়া পেট্রোমেক্স রিফাইনারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণের সুদ যথাযথভাবে আর্থিক হিসাব বিবরণীতে গণণা না করে মুনাফা অতিরিক্ত দেখিয়েছে (প্রফিট ওভারস্টেটেড),যা শাহজীবাজার এর সমন্বিত আর্থিক হিসাব বিবরণীতেও প্রতিফলিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে এসপিসিএল এর শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ওভারস্টেটেড হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হয়েছেন। এ কারণে উল্লেখিত সিকিউরিটিজ আইনসমূহ ভঙ্গের জন্য কমিশন পেট্রোমেক্সের পাঁচজন পরিচালককে ১০ লাখ টাকা করে এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। আর ১৫ দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধ করার জন্য গত ১৩ জুলাই চিঠি দেয় বিএসইসি।
অপরদিকে, সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের কারণে জিকিউ বলপেনের তিন পরিচালককে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে জারিমানা করে বিএসইসি। এ তিন পরিচালক রিভিউ আবেদন করায় বিএসইসি ৫০ হাজার টাকা করে এ তিনজনের জরিমানা মওকুফ করে বাকি ২ লাখ টাকা ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য গত ১ জুলাই চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করায় ইবিএল সিকিউরিটিজকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষিতে বিএসইসি এক লাখ টাকা জরিমানা কমিয়েছে। বাকি এক লাখ টাকা ১৫দিনের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য গত ২৩ জুলাই চিঠি দেয় বিএসইসি। অন্যদিকে মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা ভঙ্গের কারণে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদাভাসি এন্ড কোং-কে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষিতে বিএসইসি ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা কমিয়েছে। বাকি ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ১৫দিনের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য গত ২৮ জুলাই চিঠি দেয় বিএসইসি।