নিশ্চুপ নিয়ন্ত্রক, আশঙ্কায় বিনিয়োগকরীরা
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: বহুল আলোচিত অ্যালায়েন্স সিকিউরিটিজের পরিচালনা পর্ষদ সংক্রান্ত মামলার শুনানি আগামী বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নিশ্চুপ থাকায় এবার কোম্পানিই বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে বিনিয়োগকারীসহ কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ।
অ্যালায়েন্স সিকিউরিটিজের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় চলতি বছরের জুন মাস থেকে। এর আগে ২০১২ সালেও একবার পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করায় ডিএসই’র তৎকালীন ভাইস-প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালি মধ্যস্ততা করে দেন। কিন্তু এবারের দ্বন্দ্ব আদালতে গিয়ে ঠেকে। এত কিছু ঘটে যাবার পরও নিয়ন্ত্রক সংস্থার টনক নড়ছে না। বিএসইসি’র সাথে যোগোযোগ করা হলে তারা সম্পূর্ণ বিষয়টি ডিএসই’র এখতিয়ার বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যান। অন্যদিকে ডিএসই বলছে এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ এখনো তাদের আমলে আসেনি।
পরিচালনা পর্ষদের দু’পক্ষের মধ্যে এখন নাভিঃশ্বাস উঠছে হাউজের সাধারন বিনিয়োগকারী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। জানা যায়, দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে কর্মচারীদের জুলাই মাসের বেতন দেয়াও সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই ভবনের মালিকপক্ষ অফিস ছেড়ে দেয়ার নোটিশও দিয়ে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ আর বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা কিভাবে করা হবে তা নিয়ে তৈরী হয়েছে বড় ধরনের আশঙ্কা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পরিচালনা পর্ষদের দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে চেয়ারম্যান পঙ্কজ রায় ও সদ্য-সাবেক পরিচালক তপন কৃষ্ণ পোদ্দারের দ্বন্দ্ব। পরিচালনা পর্ষদ সভায় উপস্থিতি সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করার কারণে তপন কৃষ্ণ পোদ্দারকে পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর থেকে বাকি দু’জন পরিচালক মাধব চন্দ্র দাশ ও পার্থ প্রতীম দাশ তার সাথে মিলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধচারণ শুরু করেন। এর মধ্যেই তপন কৃষ্ণ পোদ্দারের নামে অভিযোগ উঠেছে বেআইনীভাবে পরিচালকদের প্রভাবিত করার। পরিচালনা পর্ষদের সভায় তার থাকার এখতিয়ার না থাকলেও পরিচালনা পর্ষদের সভায় থেকে তিনি বাকি পরিচালকদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেন। এমনকি বিদ্যমান চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে এবং তাকে না জানিয়ে তপন পোদ্দার পষৃদের অন্য দুই সদস্যকে নিয়ে বোর্ড সভার আয়োজন করে। সভায় আইন লঙ্ঘন করে বিদ্যমান চেয়ারম্যানকে বহিস্কার করে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়।
এর আগে প্রাইম ফাইন্যান্স নামক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময় তপন কৃষ্ণ বিরুদ্ধে এখতিয়ার বহির্ভুতভাবে এবং বে-আইনীভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে নিজ ভাই ও আত্মীয়-স্বজনকেও বে-আইনীভাবে ঋণ দেন তিনি। এসব ঋণের অনেকগুলোই কোনো ধরনের জামানত কিংবা গ্যারান্টি ছাড়াই দেয়া হয়।
তথ্যানুসন্ধানে উঠে আসে, কোম্পানিকে কিছু না জানিয়ে নিজ আত্মীয়ের নামে দেয়া এসব ঋণের অনেকগুলো পরবর্তি সময়ে খেলাপি হয়ে যাওয়ায় পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি তাকে কোম্পানির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এসব অনিয়মের সাথে জড়িত থাকায়, পরবর্তি সময়ে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বও নিতে পারেননি তপন কৃষ্ণ পোদ্দার।
পরিচালনা পর্ষদে নিজের প্রভাব বজায় রাখতে গিয়ে পরিচালকদের এসব দ্বন্দ্বের অবসান চেয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সাধারন বিনিয়োগকারীরা।
শেয়ারবাজারনিউজ/ও.সা/আ