আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

স্বাধীন পরিচালক: বছরেও দ্বন্দ্বের অবসান হয়নি

idra_logoশেয়ারবাজার রিপোর্ট : অর্থমন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হওয়ার পর প্রায় বছর পেরিয়ে গেলেও বীমা কোম্পানিতে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ নিয়ে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বন্দ্বের অবসান ঘটেনি।
জানা যায়, স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ নিয়ে বীমা আইন-২০১০ এবং কর্পোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনে (সিজিজি) বীমা কোম্পানির প্রতি দুই রকমের নির্দেশনা রয়েছে। আর এ নির্দেশনার পরিপালন নিয়ে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর সাথে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাথে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে।
তাই এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য উভয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে।
বীমা আইন, ২০১০-এর ৭৬ ধারার এক উপধারায় বলা হয়েছে বীমাকারী কোম্পানি আইন এর অধীনে নিবন্ধিত হলে, উহার সংঘস্মারক বা সংঘবিধিতে যাই থাকুক না কেন উহার পরিচালকের সংখ্যা ১৫ জনের অধিক হবে না এবং সেইক্ষেত্রে ৬ জন উদ্যোক্তা পরিচালক ও ৬ জন জনগণের অংশের শেয়ার গ্রহীতা পরিচালক এবং ৩ জন স্বাধীন অর্থাৎ নিরপেক্ষ পরিচালক থাকিবেন।
পরবর্তীতে আইডিআরএ বীমা আইন ২০১০ এর ১৪৮ ধারায় প্রাপ্ত ক্ষমতা বলে বীমাকারীর নিবন্ধন প্রবিধানমালা নামে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যার এসআরও নং ৩৯-আইন/২০১৩। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দুজন স্বাধীন, স্বতন্ত্র বা নিরপেক্ষ পরিচালকসহ কোম্পানির পরিচালক ২০ জনে সীমাবদ্ধ থাকবে। এর মধ্যে ১২ জন উদ্যোক্তা-পরিচালক ও চারজন জনগণের অংশের শেয়ারগ্রহীতা পরিচালক এবং দুজন নিরপেক্ষ পরিচালক দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে।
অন্যদিকে ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির জারি করা করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনে বলা হয়, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ন্যূনতম সদস্য হতে হবে পাঁচজন ও সর্বোচ্চ ২০। এছাড়া পরিচালনা পর্ষদে ৫ ভাগের ১ ভাগ স্বাধীন পরিচালক থাকতে হবে। এ নির্দেশনা মোতাবেক তালিকাভুক্ত বীমা কোম্পানিতে প্রতি পাঁচজনে একজন নিরপেক্ষ পরিচালক অর্থাৎ মোট ২০ জনে চারজন নিরপেক্ষ পরিচালক থাকবে।
বিএসইসি বীমা কোম্পানিগুলোর ওপর কর্পোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন অনুযায়ী স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ বিধান পালন নিশ্চিত করতে গেলে আইডিআরএ’র সাথে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে।
এ বিষয়ে আইডিআরএ আইন ও প্রশাসন বিষয়ক সদস্য মো: কুদ্দুস খান শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে বলেন, বীমা আইন ২০১০ হচ্ছে সংসদ থেকে পাশ হওয়া আইন। আর এ আইনেই স্বাধীন পরিচালকের নিয়োগ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। পাশাপাশি মূল আইন থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতা বলেই আইডিআরএ পরবর্তী প্রবিধান জারি করেছে। আর বিএসইসি’র সিজিজি তাদের নিজেদের বানানো প্রবিধান। আর তাদের আইন অনুযায়ী বিএসইসি বীমা কোম্পানিগুলোকে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগে বাধ্য করতে গেলে আমরা আপত্তি জানাই। কিন্তু তারা আমাদের আপত্তিকে চ্যালেঞ্জ জানালে আমরা বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিই। যেহেতু দুটি সংস্থাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে তাই অর্থ মন্ত্রণালয়-ই সিদ্ধান্ত নেবে বীমা কোম্পানিগুলো কোন আইন পালন করবে।
অর্থমন্ত্রণালয় থেকে এখনো সিদ্ধান্ত না আসার সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা এখনো এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে কোন সিদ্ধান্ত পাইনি। তবে বিষয়টি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আর এ সঙ্কটের সমাধানে আমরা প্রতিনিয়ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিচ্ছি।
অপরদিকে জানা যায়, দুই আইনের সাংঘর্ষিক নীতির কারণে বীমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে উঠেছে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক সংখ্যা ১৫, এর মধ্যে নিরপেক্ষ পরিচালক একজন। বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালক সংখ্যা মাত্র ছয়; এর মধ্যে নিরপেক্ষ পরিচালক তিনজন। সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক সংখ্যা ১৫ ও নিরপেক্ষ পরিচালক দুজন। কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক সংখ্যা ১৫ ও নিরপেক্ষ পরিচালক দুজন। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক সংখ্যা ১১; এর মধ্যে একজনও নিরপেক্ষ পরিচালক নেই। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের স্বাধীন পরিচালকের সংখ্যা মাত্র একজন; একজন স্বাধীন পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
দুই নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার আইনে সাংঘর্ষিকতা থাকায় বীমা কোম্পানিগুলো তা পরিপালনে অনীহা দেখাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে অনেকে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/আ.ও/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.