অডিট রিপোর্টে বিবিধ খাত: চলছে অর্থ লোপাটের মহোৎসব
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অডিট রিপোর্ট নিয়ে প্রতিনিয়তই নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো অডিট রিপোর্টের বিবিধ খাত। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোম্পানিগুলো বিবিধ খাতের দোহাই দিয়ে বড় অঙ্কের অর্থ লোপাটের মহোৎসব চালাচ্ছে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অডিট রিপোর্টে বিবিধ খাত নিয়ে কি ধরনের আর্থিক দুর্নীতি করে তা অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা যায়, ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন এমন কোম্পানি রয়েছে, যার আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বিবিধ খাতের খরচ রীতিমতো ভয়ানক! কোম্পানির মোট খরচের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি খরচ দেখানো হয়েছে বিবিধ খাতে। অথচ আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) অনুযায়ী মোট খরচের এক-তৃতীয়াংশ বিবিধ খাতে থাকলেই তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে ধরা হয়।
এ প্রসঙ্গে আইসিবির এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, যার হিসাবগুলোর ভাউচার অর্থাৎ কোনো ডকুমেন্ট দেখানো সম্ভব নয় সেগুলোই বিবিধ খাতে যায়। এখন ধরা যাক, কেউ ২-৪ জন লোক নিয়ে রাস্তার পাশের কোনো চা স্টলে চা খেলো কিংবা আপ্যায়ন করা হলো যার ভাউচার সংশ্লিষ্ট ক্রেতার দেয়ার ক্ষমতা নেই। সে ক্ষেত্রে এ খরচ বিবিধ খাতে যাবে।
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, এ ধরনের খরচ মোট খরচের তুলনায় কত কম হওয়ার কথা। এখন কোনো কোম্পানির যদি মোট খরচ হয় ৩০ কোটি আর বিবিধ খরচ হয় ১৩ কোটি তবে নিঃসন্দেহে তা উদ্বেগজনক। আমার মনে হয়, বিশেষ করে ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের দুর্নীতি বেশি হয়। আর তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ বিষয়ে আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নানা কারণে ব্যাংক তথা অন্য প্রতিষ্ঠানের বিবিধ ব্যয় বেড়ে যায়। বিভিন্ন পার্টিকে বিভিন্ন সময় কনভেন্স করার জন্য নানা উপঢৌকন এবং বেশ বিলাসী আপ্যায়ন করাতে হয়। এসব খরচ অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা যায় না। তখন বাধ্য হয়ে এ খরচগুলো বিবিধ খাতে চলে যায়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ কোম্পানি পরিচালকদের অনৈতিক খরচ আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সম্ভব হয় না বলে তা বিবিধ খাতে দেখানো হয়।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজজন পরিচালক শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, শুধু পরিচালকরাই নয়, এর সঙ্গে জড়িত থাকে কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং একদল আজ্ঞাবহ শেয়ারহোল্ডার। কারণ আর্থিক প্রতিবেদন কিন্তু বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। সে ক্ষেত্রে বিবিধ খাতে যতই পুকুরচুরি হোক না কেন, তা কোম্পানির মদদপুষ্ট শেয়ারহোল্ডারদের চিৎকারে ঠিকই পাস হয়ে যায়।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা সত্যই দুঃখজনক। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা চক্র যেন তাদের অধিকারকে খর্ব করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া জরুরি।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা