২ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার বিনিয়োগ কোথায়?
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জীবন বীমা কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহায়ক তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায় না। কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড প্রদানের হারের ওপর নির্ভর করেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আর এ বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) কোন সমাধানও বের করতে পারেনি।
তাই অনেকটা অন্ধের মতো এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা লোকসান করেছে।
অন্যদিকে, অর্থবছর শেষে ঘোষিত স্টক ডিভিডেন্ড জনিত থিওরিটিক্যাল এডজাস্টমেন্টকে আমলে নিয়েও শেয়ার দরের এমন পতনকে কিছুতেই স্বাভাবিক বলা যায়না।
অথচ দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে সব সময় বলা হচ্ছে পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মেয়াদে এবং বুঝে বিনিয়োগ করার জন্য। কিন্তু জীবন বীমা কোম্পানির শেয়ার দরের এমন নিম্নমুখীতা ও তথ্য উপাত্তের অভাবের সাথে এমন বক্তব্য একেবারেই বেমানান।
নিচে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হলো:
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স: ২০১৩ সালে তালিকাভুক্ত জীবন বীমা কোম্পানিটির শেয়ার দর ২০১৪ সালের ফেব্রয়ারি মাসে ছিল ৮০ টাকা। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর হয়েছে ২৮.৫০ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যাবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৬৫ শতাংশ। আর এ কোম্পানিটির ১১.৮১ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। আর এ হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক বছরে ১৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। এদিকে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ করে স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
সন্ধানি লাইফ ইন্স্যুরেন্স: এ কোম্পানির শেয়ার দর ২০১৪ সালের ফেব্রয়ারি মাসে ছিল ৯৯.৪০ টাকা। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর হয়েছে ৪১.০০ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যাবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৫৯ শতাংশ। আর এ কোম্পানিটির ৩৬.৬২ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। আর এ হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক বছরে ১০৫ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এদিকে কোম্পানিটি ২০১৩ ও ২০১৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের যথাক্রমে ২৫.৫০ শতাংশ ও ২২ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
রূপালি লাইফ: এ কোম্পানির শেয়ার দর ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ছিল ১৩৪.৪০ টাকা। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর হয়েছে ৩১.৫০ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যাবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৭৭ শতাংশ। আর এ কোম্পানিটির ৪৬.১০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। আর এ হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক বছরে ১৩১ কোটি ৩০ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। এদিকে কোম্পানিটি ২০১৩ ও ২০১৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের যথাক্রমে ৫ শতাংশ ও ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
প্রগ্রেসিভ লাইফ: এ কোম্পানির শেয়ার দর ২০১৪ সালের ফেব্রয়ারি মাসে ছিল ১৫৭.৯ টাকা। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর হয়েছে ৬০.১০ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যাবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৬২ শতাংশ। আর এ কোম্পানিটির ৩৩.৫৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। আর এ হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক বছরে ৪১ কোটি ৫২ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। এদিকে কোম্পানিটি ২০১৩ ও ২০১৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের কোন ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি।
প্রাইম ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স: এ কোম্পানির শেয়ার দর ২০১৪ সালের ফেব্রয়ারি মাসে ছিল ১২৯.৬০ টাকা। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর হয়েছে ৩৭.২০ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যাবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৭২ শতাংশ। আর এ কোম্পানিটির ৬৫.৫৪ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। আর এ হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক বছরে প্রায় ১৫৯ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এদিকে কোম্পানিটি ২০১৩ ও ২০১৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের যথাক্রমে ১০ শতাংশ ক্যাশ ও ১৫ শতাংশ স্টক এবং ১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
প্রগতি লাইফ: এ কোম্পানির শেয়ার দর ২০১৪ সালের ফেব্রয়ারি মাসে ছিল ২৪০.৭০ টাকা। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর হয়েছে ৯৮.১০ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যাবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৫৯ শতাংশ। আর এ কোম্পানিটির ৩৭.১৩ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। আর এ হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক বছরে ৫২ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এদিকে কোম্পানিটি ২০১৩ সালে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতে না পারলেও ২০১৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ১৭ শতাংশ ক্যাশ এবং ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
পপুলার লাইফ: এ কোম্পানির শেয়ার দর ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ছিল ২৯৭.৯ টাকা। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর হয়েছে ৮০.৫০ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যাবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৭৩ শতাংশ। আর এ কোম্পানিটির ৬১.১৪ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। আর এ হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক বছরে ৮০২ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এদিকে ২০১৩ ও ২০১৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ৪০ শতাংশ করে স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
পদ্মা ইসলামি লাইফ: এ কোম্পানির শেয়ার দর ২০১৪ সালের ফেব্রয়ারি মাসে ছিল ৯৭.৩০ টাকা। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর হয়েছে ২৯.৫০ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যাবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৭০ শতাংশ। আর এ কোম্পানিটির ৩০.৩৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। আর এ হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক বছরে ৬৬ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এদিকে কোম্পানিটি ২০১৩ ও ২০১৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের কোন ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি।
ন্যাশনাল লাইফ: এ কোম্পানির শেয়ার দর ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ছিল ৩৬৯ টাকা। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর হয়েছে ১৮৭.৪ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যাবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৪৯ শতাংশ। আর এ কোম্পানিটির ১৩.১১ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। আর এ হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক বছরে ১৬১ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এদিকে কোম্পানিটি ২০১৩ ও ২০১৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের যথাক্রমে ২০ শতাংশ ক্যাশ ও ৩৮ শতাংশ স্টক এবং ৪৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
মেঘনা লাইফ: এ কোম্পানির শেয়ার দর ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ছিল ১৫৭ টাকা। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর হয়েছে ৫৮.৭ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যাবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৬৩ শতাংশ। আর এ কোম্পানিটির ৪২.০৮ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। আর এ হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক বছরে ১০৫ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এদিকে কোম্পানিটি ২০১৩ ও ২০১৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের যথাক্রমে ২০ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ শতাংশ স্টক এবং ১৩ শতাংশ ক্যাশ ও ২০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
ফারইস্ট ইসলামি লাইফ: এ কোম্পানির শেয়ার দর ২০১৪ সালের ফেব্রয়ারি মাসে ছিল ১১৮ টাকা। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর হয়েছে ৬৩.৮০ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যাবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৪৬ শতাংশ। আর এ কোম্পানিটির ৩৩ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। আর এ হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক বছরে ১১২ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এদিকে কোম্পানিটি ২০১৩ ও ২০১৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের যথাক্রমে ৪০ শতাংশ ক্যাশ এবং ৩৫৪ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
ডেল্টা লাইফ: এ কোম্পানির শেয়ার দর ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ছিল ২৩০ টাকা। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর হয়েছে ১১৩.১ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যাবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৫১ শতাংশ। আর এ কোম্পানিটির ৪৩.৫৭ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। আর এ হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক বছরে ৬২২ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এদিকে কোম্পানিটি ২০১৩ ও ২০১৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের যথাক্রমে ১১ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ স্টক এবং ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
এমন চিত্র দেখেও আমরা বাজারকে কিভাবে স্থিতিশীল বলবো। আর দায়িত্বশীলরাও বাজার স্থিতিশীল এমন দাবি কিভাবে করছে?
শেয়ারবাজারনিউজ/তু/ম.সা