আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৯ জানুয়ারী ২০১৫, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া সিজিএ অফিস : টিআইবি

tibশেয়ারবাজার রিপোর্ট : ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিজিএ) অফিস। নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, প্রশিক্ষণ ও অডিট আপত্তি হ্রাস-বৃদ্ধিসহ সকল ক্ষেত্রেই অনিয়ম-দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে।

রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে ঘুষ লেনদেন, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রধান্য দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসবের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিজিএর কার্যালয়ে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের তদবির আসে। এমনকি একটি পদের জন্য ৯ মন্ত্রীর সুপারিশেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিরীক্ষক, অধস্তন নিরীক্ষক ও গাড়িচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা, স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট ও বাণিজ্যিক অডিট কাজের জন্য ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা, পছন্দমতো প্রতিষ্ঠান, প্রতিরক্ষা অডিট, স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট, পূর্ত অডিট, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট অডিটে কাজ করার জন্য ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। এমনকি দীর্ঘদিনের পুরনো অডিট আপত্তি নিষ্পত্তিতেও নেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা ঘুষ।

সিএজি কার্যালয়ের নিরীক্ষা দলের বিরুদ্ধে অডিট ইউনিটের নিকট থেকে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে যার পরিমাণ কমপক্ষে ১০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। ঘুষের পরিমাণ নির্ভর করে অডিট ইউনিটের বাজেটের পরিমাণের ওপর। তিন বছর পর বদলি করার নিয়ম থাকলেও ঘুষ ও রাজনৈতিক প্রভাবে একই কার্যালয়ে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকা, অতিরিক্ত অর্থ আয়ের সুযোগ সম্পন্ন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠা যেমন—বন্ডেড ওয়্যার হাউস, ডিফেন্স অডিটের পূর্ত সংক্রান্ত, এমপিওভুক্ত হওয়ার জন্য বিভিন্ন কলেজ ও স্কুল নিরীক্ষা করার জন্য ঘুষ আদায়ের অভিযোগ ইত্যাদি।

সিজিএ কার্যালয়ের সুশাসনের চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করে এবং তা থেকে উত্তরণের জন্য টিআইবি তিন পর্যায়ের ২০ দফা সুপারিশ করে।

স্বল্পমেয়াদী সুপারিশের মধ্যে রয়েছে— আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তাবিত নিরীক্ষা আইন প্রণয়ন, অর্গানোগ্রাম ও নিয়োগের বিধিমালার অনুমোদন দেওয়া; সিএজিকে বাজেট, নিয়োগসহ সকল বিষয়ে সাংবিধানিক স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা; সিএজিসহ সকল নিয়োগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা; সিএজিকে উচ্চ আদালতের বিচারপতির সমমর্যাদা দেওয়াসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা; নিরীক্ষার প্রতিবেদন সম্পন্ন করার ও জমা দেয়ার সুনির্দিষ্ট সময় সীমা নির্ধারণ করা; সিএজি কার্যালয়ের অভিযোগ সেল সম্পর্কে সরকারি কার্যালয়গুলোকে জানানোর জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো ও অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

মধ্য মেয়াদী সুপারিশের মধ্যে রয়েছে— দুর্নীতির তথ্যগুলো সিএজি পিএসিকে দেবে এবং পিএসি অভিযোগ অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য সুপারিশ করবে; ক্যাডার কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধি করে কমপক্ষে ৩০% করা এবং মাঠ পর্যায়ে নিরীক্ষা করার জন্য নিরীক্ষা দল গঠন করা; জরুরি কার্যক্রমের (ক্রাস প্রোগ্রাম) মাধ্যমে দীর্ঘদিনের পুরোনো নিরীক্ষা আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতরকে দুটি আলাদা অধিদফতর ভাগ করা ইত্যাদি।

দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশের মধ্যে রয়েছে— সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যয় ও হিসাবের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়গুলোতে দক্ষ জনবলের সমন্বয়ে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ শাখা খোলা; নিয়মানুবর্তী নিরীক্ষা থেকে পারফর্মেন্স নিরীক্ষার দিকে যাওয়ার কৌশল তৈরি করা এবং এ জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও সক্ষমতা বৃদ্ধি।

গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির রিচার্স এ্যান্ড পলিসির পোগ্রাম ম্যানেজার দিপু রায়।

টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের ও রিসার্চ এ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.