মডার্ণ ডাইংয়ের শেয়ার দরে উল্লম্ফন!
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি মডার্ণ ডাইং অ্যান্ড স্ক্রিন প্রিন্টিং লিমিটেডের শেয়ার দরে উল্লম্ফন ঘটেছে। ডিভিডেন্ড ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কোম্পানির শেয়ার দরে বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) কোন সার্কিট ব্রেকার না থাকায় শেয়ারটির দর ৯৮.১০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকার মধ্যে উঠানামা করে। দিনশেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১৬০ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির শেয়ার দর এক দিনে বেড়েছে ৬৮.৬০ টাকা বা ৭৫.০৫ শতাংশ।
এদিকে কোম্পানিটি গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড বেশি দিয়েছে। পাশাপাশি গত বছরের তুলনায় মুনাফা, ইপিএস এবং শেয়ার প্রতি সম্পদ কমেছে । গত ২ সেপ্টেম্বর ৩০ জুন ২০১৫ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে মডার্ণ ডাইং। সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির কর পরিশোধের পর মুনাফা হয়েছে ১৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা, শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.১৬ টাকা, শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) হয়েছে ১১.৪৯ টাকা এবং শেয়ার প্রতি কার্যকরী নগদ প্রবাহের পরিমাণ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ০.৩৭ টাকা (নেগেটিভ)। যা আগের বছরে (৩০ জুন ২০১৪) একই সময়ে মুনাফা ছিলো ২১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ইপিএস ছিলো ১.৫৬ টাকা, এনএভিপিএস ছিলো ১১.১৩ টাকা এবং এনওসিএফপিএস ছিলো ৩.৮৩ টাকা।
ঘোষিত ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের সম্মতিক্রমে অনুমোদনের জন্য এ কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ১৫ অক্টোবর, স্পেক্টা কনভেনশন হলে সকাল ১১ টায় অনুষ্ঠিত হবে। ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর। এর আগে এ কোম্পানির ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৩ সেপ্টেম্বর।
জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে মডার্ণ ডাইংয়ের উৎপাদন বন্ধ আছে। তাই ২০১৪ সালে শেয়ার হোল্ডারদের ৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিলেও কোম্পানিটিকে জেড ক্যাটাগরিতে রাখে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। মূলত অপরিচালন আয় (মূলত স্থাপনার ভাড়া) থেকেই শেয়ার হোল্ডারদের ২০১২ থেকে ৭ ও ৮ শতাংশহারে ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে কোম্পানিটি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজার কোন দিকে যাচ্ছে বিষয়টি বোঝা বড় মুশকিল হয়ে পড়েছে। কারণ কয়েক সপ্তাহ যাবৎ প্রথম দিকে অধিকাংশ কোম্পানির বড় ধরণের দরপতন ঘটে পাশাপাশি সপ্তাহের শেষভাগে কিছুটা উত্থানে থাকে বাজার। এই টানা-পড়নোর মধ্যে মডার্ণ ডাইংয়ের মতো একটি কোম্পানির ঘোষিত ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের প্রভাবে শেয়ার দর ৬৮.৬০ টাকা বেড়ে যাওয়াটা সত্যিই হতাশ জনক।
এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ শেয়ার নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্নের দেখা দিয়েছে। কেননা ডিভিডেন্ডের সময় যে রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছিলো তা আবার পরিবর্তন করে সময় বাড়ানো হয়েছে। এ রেকর্ড ডেটের দিন পর্যন্ত যাদের হাতে শেয়ার থাকবে কেবল তারাই ডিভেডেন্ড পাবেন। সুতারাং ডিভিডেন্ডর আশায় বিনিয়োগকারীরা রেকর্ড ডেট পর্যন্ত শেয়ার ধরে রাখবেন। এর সুবাদে দুষ্কৃতীকারীরা এ শেয়ার নিয়ে কারসাজির ব্যাপক সময় পাবেন বলে মনে করছেন তারা।
বিনিয়োগকারীরা জানান, মৌলভিত্তি শেয়ার ধরে রেখে যেখানে ২ কিংবা ৫ টাকা মুনাফার মুখ দেখতে পারি না। সেখানে মডার্ণ ডাইংয়ের মতো একটি কোম্পানি যা কিনা গত বছরের চেয়ে মাত্র ২ শতাংশ বেশি ডিভিডেন্ড দিয়েছে। আর এতেই কোম্পানির শেয়ার দর একদিনে প্রায় ৬৯ টাকার কাছাকাছি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এ কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন তারা।
এ বিষয়ে কোম্পানির অফিসে একাধিক বার ফোন করা হলেও কল রিসিভ করার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
১৯৯৮ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া মডার্ণ ডাইংয়ের পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং রিজার্ভ রয়েছে ১৬ লাখ টাকা। এ কোম্পানির মোট ১৩ লাখ ৬৮ হাজার শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৬৮.৬৯ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ৫.১৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ২৬.১৪ শতাংশ শেয়ার।
শেয়াববাজারনিউজ/অ