আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, রবিবার |

kidarkar

দেহে অতিরিক্ত ঘাম দূর করতে করণীয়!

gumশেয়ারবাজার ডেস্ক: গরমে ঘামে কারণে অনেকেরই অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে। অতিরিক্ত ঘামে জামা কাপড় এমন ভাবে ভিজে যায় যে দেখলে মনে হয় যেন স্নান করেছেন৷ যাঁর এই ঘামের অভিজ্ঞতা রয়েছে তারাই জানেন এতে কতটা অস্বস্তি৷ শুধু যে জামা কাপড় ভিজে যায় তাই নয় তার সঙ্গে শরীর দূর্বল লাগা, লোকসমাজে ঘামের গন্ধে লজ্জায় পড়া খুবই অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা৷ কিডনি মানব শরীরে ছাঁকনির কাজ করে। শরীরের যাবতীয় দূষিত পদার্থ কিডনির ছাঁকনিতে ছেঁকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়৷

কিন্তু ঘামের সঙ্গে কিডনির সম্পর্ক কী?

ঘামের সঙ্গে শরীরের অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসে। তাই বোধহয় প্রাচীন যুগে কিডনি বিকল হলে ডায়ালাইসিস করার ব্যবস্থা না থাকায়, রোগীকে গোটা কতক কম্বল চাপা দিয়ে রাখা হতো। এর ফলে কিডনি ফেইলিওর রোগীর শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হতো। শরীরের কিছুটা বর্জ্য পদার্থ ঘামের সাহায্যে বেরিয়ে যাওয়ায় রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করত। তাই এ কথা বলাই বাহুল্য, শরীর সুস্থ রাখতে এবং শরীরের মধ্যে থাকা অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে ঘাম অপরিহার্য।

তবে সকলে সমান ঘমেন না৷ কারও শরীরে ঘাম বেশি হয় কারও আবার ঘাম কম হয়৷ দেখে নেওয়া যাক কেন ঘাম বেশি হয়: ঘাম বেশি না কম হবে তা কিছুটা নির্ভর করে বংশগতির ওপর। কিছুটা পরিবেশের ওপর। অনেকটাই শারীরিক পরিশ্রমের ওপর এবং মানসিক অবস্থা অর্থাৎ উৎকণ্ঠা, টেনশন আছে, না মানসিক ধৈর্যের অধিকারী তার ওপর। তবে কম-বেশি যাই হোক না কেন, ঘাম সবারই হয়।

খাদ্যাভ্যাস, ঘাম এবং দুর্গন্ধ:

অ্যাপোক্রিন ঘাম মানুষের শরীরে গন্ধ সৃষ্টি করে। বাহুমূল ও যৌনাঙ্গে এই অ্যাপোক্রিন ঘামের উৎপত্তি। বংশগত কারণে এবং কখনও যথাযথ পরিচ্ছন্নতার অভাবে কারও কারও শরীরে অত্যন্ত বাজে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। এটি দূর করতে একাধিকবার স্নান ও প্রয়োজনীয় অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল লোশন ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া সুগন্ধি, ডিওডোরেন্ট ও পারফিউম লাগানো যেতে পারে। ট্রাইক্লোসামযুক্ত সাবান ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায়। খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে গায়ের গন্ধের একটা সম্পর্ক আছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত ঝাল মসলাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত রসুন এবং মাংস খেলে সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতা যথাযথ না হলে ঘামে প্রচুর দুর্গন্ধ হয়। প্রতিকার হিসেবে জেন্টামাইসিন, ওসিসোমাইসিন জাতীয় লোশন দিনে দুবার লাগাতে হয়। বেশি ঘাম হলে কী খাবেন বেশি ঘাম হলে অনেকেই বেশি করে পানি খান। কিন্তু শুধু জল নয়, নুন, চিনি ও পাতিলেবু মিশিয়ে শরবত করে জল খান। কারণ, ঘামের সঙ্গে কিছু দূষিত পদার্থ ও তার সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে সোডিয়াম ও যৎসামান্য পটাশিয়াম ও বাইকার্বোনেট শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। সোডিয়াম বাইকার্বোনেট ইত্যাদির তারতম্যের জন্য শরীর অত্যন্ত দুর্বল ও অস্থির লাগে। এসব প্রতিরোধ করতে যথাযথ ডায়েটের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ঘাম হলে জল তেষ্টা পায়, তাই বেশির ভাগ মানুষই প্রচুর পরিমাণে জল খান। কিন্তু চিকিৎসকরা বলেন বেশি করে শরবত খেতে। বেশি ঘাম হলে যা খেতে হবে-

১. গরমে দইয়ের ঘোল ও ডাবের জল খেতে পারেন। প্রথমত ঘোল ভালো লাগে, দ্বিতীয়ত দইয়ে থাকা র‌্যাকটিক এসিড চটজলদি হজম করাতে সাহায্য করে। ডাবে থাকা পটাশিয়ামও শরীর তরতাজা রাখতে পারে।

২. কাঁচা আমপোড়ার শরবতও শরীর ঠাণ্ডা রাখে।

৩. বয়স্ক মানুষদের ঘাম বেশি হলে অবিলম্বে নুন লেবুর শরবত খাওয়ানো দরকার, না হলে হঠাৎ জ্ঞান হারাতে পারেন।

৪. গরমে ঘাম বেশি হয় বলে এ সময়ে সাড়ে তিন থেকে চার লিটার জল, শরবত ও পাতলা চা খেলে শরীরের পক্ষে ভালো হয়।

৫. যাদের সারাক্ষণ রোদে ঘোরাঘুরি করতে হয় তারা সঙ্গে নুন, লেবু, চিনি সম্ভব হলে ছাতু মিশিয়ে শরবত করে সঙ্গে রাখুন। শরীর দুর্বল লাগলে ও ঘাম বেশি হলে দু-তিন ঢোঁক করে খেতে পারেন। কাজে এনার্জি পাবেন। তবে গরমকালে তেষ্টা পাক আর না পাক দু-তিন লিটার জল খেতে হবে তা কিন্তু নয়, শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী জলের তেষ্টা পায়, সেই অনুযায়ী জল খেতে হবে।

৬. জল ঢালা ঠাণ্ডা ভাত (পান্তা ভাত) খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে, ঘুমও ভালো হয়।

৭. গরমে ফল বেশি করে খেলে জলের তেষ্টা অনেকটাই কমে। তার সঙ্গে ফলে থাকা ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর তরতাজা রাখতে সাহায্য করে। জামরুল, তরমুজ, লিচু, শসা, পাকা পেঁপে, পাকা আম যথেষ্ট পরিমাণে খাবেন। পাকা আমের ভিটামিন ‘এ’ ভবিষ্যতের জন্য শরীরে স্টোর করা যায়।

৮. কোল্ড ড্রিংসের বদলে টেট্রা প্যাকের জুস ভালো, তবে সবচেয়ে ভালো বাড়িতে তৈরি ফ্রেশ ফ্রুট জুস ও টাটকা ফল।

৯. গরমের সময়ে বেশি তেলমসলা দেয়া মাটন, চিকেন, মাছ না খেয়ে মুরগির স্টু, মাছের পাতলা ঝোল- এই ধরনের খাবার খেলে ভালো হয়। তবে প্রত্যেকের খাবারের রুচি ও সহ্য ক্ষমতা আলাদা আলাদা হওয়ায় গাইডলাইন অনুযায়ী শরীর বুঝে খাওয়াই বাঞ্ছনীয়।

শেয়ারবাজারনিউজ/আর/কে

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.