আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫, শনিবার |

kidarkar

ফাইন্যান্সিয়াল রিপোটিং অ্যাক্টের গেজেট প্রকাশ: মিথ্যা তথ্য দিলে ৫ বছরের কারাদন্ড

govশেয়ারবাজার রিপোর্ট: বহুল আলোচিত ফাইন্যান্সিয়াল রিপোটিং অ্যাক্ট ’২০১৫ এর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

কোম্পানিসহ সকল প্রকার সংস্থার হিসাব রক্ষণ ও নিরীক্ষাকাজে সংশ্লিষ্টদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন,২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং  কাউন্সিল নামে একটি নিরপেক্ষ রেগুলেটরি সংস্থা গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এই রেগুলেটরি সংস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার সাথে যৌথ বিনিয়োগ আরো উৎসাহী বলে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।

ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানি আইন, ব্যাংক কোম্পানি আইন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, বীমা আইন এবং বাংলাদেশ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অ্যাক্ট সংশোধন করা হয়েছে। তবে কম্পট্রোলার এবং অডিটর জেনারেল অ্যাক্ট, ১৯৭৪ এর ক্ষেত্রে এই আইনের বিধানাবলি কার্যকর হবে না ।

এদিকে নিরীক্ষক হিসেবে তালিকাভুক্তির বিধান প্রণয়নসহ অসাধু পন্থা বা মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে নিরীক্ষক হিসেবে নিবন্ধন লাভ করলে অথবা এই আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫ বছরের কারাদন্ড বা কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

এছাড়া কাউন্সিল প্রতিষ্ঠান ও গঠন,কাউন্সিলের চেয়ারম্যান,কর্মকর্তাদের কমিটি গঠন,নির্বাহী পরিচালকদের নিয়োগ,যোগ্যতা,কাউন্সিলের কর্মবিভাগ,দায়িত্ব,কোড,নিরীক্ষকদের তালিকাভুক্তি ও নবায়ন, স্ট্যান্ডার্ডস নির্ধারণ,পরীবিক্ষণ,প্রকাশনা,অপরাধ,জরিমানা ও দ্বন্দ্ব,তদন্ত,আপীল,কাউন্সিলের আর্থিক বিষয়াদি, কতিপয় আইনের সংশোধনের বিস্তারিত বর্ননা ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টে তুলে ধরা হয়েছে।

ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাক্টের ৫ ধারায় ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল এর সদস্য নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়েছে,  সরকারের অনুমোদিত একজন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হবেন। অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে কাউন্সিলের সদস্য হবেন। এছাড়া বাংলাদেশ মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক থেকে একজন প্রতিনিধি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে একজন সদস্য, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে একজন কমিশনার কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে থাকবেন। অপরদিকে আইসিএবি ও আিইসিএমএবি এর চেয়ারম্যান অথবা তার দ্বারা মনোনিত একজন পেশাদার অ্যাকাউন্টেন্ট ও প্রতিনিধি সদস্য হিসাবে থাকবেন। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান থেকে একজন অধ্যাপক এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে মনোনীত একজন সদস্য হিসেবে থাকবেন। এছাড়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মনোনীত একজন নির্বাহী পরিচালক থাকবেন। এই নির্বাহী পরিচালক কাউন্সিলের সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করবেন।

অ্যাক্টের ২২ ধারায় বলা হয়েছে, মানদন্ড নির্ধারণী বিভাগ, আর্থিক প্রতিবেদন পরিবীক্ষণ বিভাগ, নিরীক্ষা চর্চা পুনরীক্ষণ বিভাগ ও প্রয়োগকারী বিভাগ এ চার বিভাগের সমন্বয়ে কাউন্সিলের কর্ম বিভাগ হবে।

এফআরসির ১১ সদস্যের কাউন্সিল মূলত হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা পেশার নীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কিত মান ইত্যাদি নির্ধারণ করবে। এছাড়া হিসাব নিরীক্ষা সেবার গুণগত মান উন্নয়ন, কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত নিরীক্ষকদের হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা কাজের সর্বোচ্চমান নিশ্চিতকরণ, আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি, হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষার পেশাগত কার্যক্রমের সততা, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আর্থিক ও অন্যান্য তথ্যের উচ্চ মানসম্পন্ন প্রতিবেদন প্রস্তুতে উদ্বুদ্ধ করবে।

আইনে আরো বলা হয়েছে, এফআরসি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন হিসাব ও নিরীক্ষা মান অনুসরণ করে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। হিসাব ও নিরীক্ষা সেবার ক্ষেত্রে বিভিন্ন চার্জ ও ফিও নির্ধারণ করবে এফআরসি। আইন অনুযায়ী নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এফআরসিতে তালিকাভুক্ত হতে হবে।

আইনে কাউন্সিলকে প্রয়োজনে বিধি ও প্রবিধান প্রণোয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

এই ছাড়া কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বিপরীতে আপিল করার জন্য আলাদা আপিল বিভাগ চালু করার কথা আইনে বলা হয়েছে।

এই বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের মতে, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট গেজেট আকারে বের হওয়ায় আর্থিক হিসাবে স্বচ্ছতা আসবে। মূলত আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীদের চাপে সরকার দীর্ঘদিন পরে হলেও অ্যাক্ট টি প্রণোয়ন করতে পেরেছে। তবে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। তাই সরকারের উচিত অযথা কালক্ষেপন না করে কাউন্সিল গঠনের কাজ দ্রুত করা।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/অ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.