আজ: বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫, শনিবার |

kidarkar

দেশের উন্নয়নে রিজার্ভের টাকা বিনিয়োগ করা হবে:গভর্নর

DSC_0238শেয়ারবাজার রিপোর্ট: দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে রিজার্ভের টাকা বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশ ব্যংক। এটি পদ্মাসেতুসহ যেকোনো বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

তিনি বলেন, ‘সরকার যখন নিজ তহবিলে পদ্মাসেতু তৈরির ঘোষণা দিয়েছে, তখন থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমান ২৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার। যা দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।’

শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘দ্বিতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা ২০১৫-২০১৯’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব তথ্য জানান। রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে এ অনুষ্ঠানটি হয়।

কেউ যদি টেকসই অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ৭ বা ৮ বিলিয়ন মূল্যমানের বড় প্রকল্প নিয়ে আসে সেখানে রিজার্ভ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আর বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘নিয়ম আছে, একটি দেশের আমাদানি ব্যয় মেটানোর জন্য কমপক্ষে তিনমাসের টাকা রিজার্ভে রাখার। আমাদের যে ২৬ বিলিয়ন আছে তা দিয়ে প্রায় ৭ মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব। এতে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জল হচ্ছে। কারণ, আমরা এখন সার্কের মধ্যে রিজার্ভে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে আছি।’

‘আমাদের এ টাকা পদ্মাসেতু তৈরিতে ব্যয়ের একটা প্রস্তুতি আছে। যে পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন হবে তা এখান থেকে দেয়া হবে। পলিসি অনুযায়ী অবকাঠামোগত উন্নয়নে এখান থেকে টাকা ব্যবহার করা হবে। তাই দেশের মধ্যে যারা অবকাঠামোর উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেন তাদের দেড় থেকে ২ শতাংশ সুদে এ টাকা দেয়া হবে।’ বলেন সুর চৌধুরী।

পদ্মাসেতু তৈরির মোট সময়কে ভাগ করে নিয়ে ধাপে ধাপে এ টাকা ছাড় করা হবে বলেও জানান ডেপুটি গভর্নর।

এদিকে, আগামী পাঁচবছরের জন্য তৈরি কর্মপরিকল্পনা কেমন হবে তার বর্ণনা করতে গিয়ে আতিউর রহমান বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিচক্ষণ মুদ্রানীতি গ্রহণ, রেগুলেটরি ও নজরদারি কাঠামো আরো জোরদারকরণ, টেকসই উন্নয়নের জন্য সামাজিক দায়বোধ প্রণোদিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে দ্বিতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা ২০১৫-১৯ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ পরিকল্পনায় মোটাদাগে ১৪টি কৌশল, এসব কৌশল বাস্তবায়নে ১০৫টি উদ্দেশ্য এবং মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে ৩২০টি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছি। কর্মপরিকল্পনা মূল্যায়নে ৩৯৫টি সূচকও নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কৌশলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের সব বিভাগকে নিজ নিজ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।’

যার ফলাফল হিসেবে পাঁচবছর পর পুরোপুরি আমলাতান্ত্রিক জটিলতামুক্ত একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন গভর্নর।

কেমন বাংলাদেশ ব্যাংক দেখতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘বিশ্বমানের একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক গড়তে চাই। যেখানে কোনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকবে না, নিয়ম-নীতি হবে সহজ, কিন্তু প্রয়োগ হবে খুবই কঠিন, যেখানে নিচের দিকের কর্মীরা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেবেন, ওপরের দিকের কর্মীরা নের্তৃত্ব দেবেন, যেখানে নের্তৃত্বের বিকাশ ঘটবে। যার তথ্য সবসময় হালনাগাদ ও সহজলভ্য থাকবে, যার সেবা পেতে সেবা গ্রহণকারীদের কোনো বেগ পেতে হবে না। একটি দূরদর্শী বাংলাদেশ ব্যাংক গড়তে চাই, যেখানে কেউ পুরনোকে আকড়ে ধরে থাকবে না, যেখানে নতুন নতুন ব্যাংকিং ধারণার উদ্ভব হবে, যে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশকে দ্রুত উচ্চ মধ্যম আয়ের কাতারে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’

২০১০-২০১৪ এর কর্মপরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন গভর্নর। এ কর্মপরিকল্পনার কারণেই এ বছর ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা, বর্গাচাষীদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ ঋণ সুবিধা, যার আওতায় ১০ লাখ বর্গাচাষীকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা অর্থায়ন, বছরে ১ লাখ কোটি টাকার এসএমই ঋণ বিতরণ, যেখানে ৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা ঋণসহ মোট আড়াই লাখ উদ্যোক্তাকে ঋণ প্রদান, ৪৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার পরিবেশবান্ধব ঋণসহ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ১০ টাকার হিসেব খোলার মত কাজ করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।

সারাবিশ্বের মুদ্রাবাজারে টালমাতাল অবস্থার মধ্যেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও মুদ্রার মান স্থিতিশীল আছে বলে উল্লেখ করেন আতিউর রহমান। তবে ২০১৫-২০১৯ এর জন্য নেয়া কর্মপরিকল্পনার মধ্য দিয়ে দেশের প্রতিটি মানুষকে ব্যাংকিং চ্যানেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ব্যবস্থাপনা পরামর্শক জাহাংগীর কবিরের সঞ্চলনা ও ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন, আবু হেনা মো. রাজী হাসান, নির্বাহী পরিচালক মো. আহসানউল্লাহ। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/অ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.