আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার |

kidarkar

অবশেষে বিএসইসির বোধদয়: বাজার রক্ষায় আসছে মার্কেট মেকার

BSECশেয়ারবাজার রিপোর্ট: দীর্ঘদিন পর অবশেষে বাজার রক্ষায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বোধদয় হয়েছে। মার্কেট মেকার ‍রুলস, ২০০০ এর পরিবর্তন বা সংশোধনের লক্ষ্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে কমিশন। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কমিশনের ৫৫৪তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সিদ্ধান্তে বলা হয়, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (বাজার সৃষ্টিকারী) বিধিমালা, ২০০০ (মার্কেট মেকার রুলস,২০০০) এর পরিবর্তন / সংশোধন লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো: মাহবুবুল আলমকে আহবায়ক করে বিএসইসির পরিচালক মো: আবুল কালাম এবং মো: মনসুর আলমসহ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শেয়ারবাজারে স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে বাজার সৃষ্টিকারী বা মার্কেট মেকারের সনদ এখনও কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি আলোচনায় স্থান পেলে সনদ না পাওয়ায় অন্ধকারে রয়েছে। ফলে বাজার রক্ষার দায়িত্বে কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শেয়ারবাজারে বড় ধরণের পতন যেন না হয় সেজন্য বাজার সৃষ্টিকারী রয়েছে। কিন্তু দুভার্গ্যবশত আমাদের দেশে এ সংক্রান্ত আইন থাকলেও বাস্তবে নেই। অথচ শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য বাজার সৃষ্টিকারী বা মার্কেট মেকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বিদ্যমান মন্দা পরিস্থিতির সংকট মোকাবেলা ও স্বাভাবিক শেয়ারবাজার বজায় রাখতে মার্চেন্ট ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্টক ডিলার বা স্টক ব্রোকাদের বাজার সৃষ্টিকারীর সনদ দেয়ার জন্য দীর্ঘদিনই দাবি উঠে আসছিল।

জানা যায়, বাজার সৃষ্টিকারীর মাধ্যমে ভালো মৌলভিত্তির অন্তত ৬০ থেকে ৭০টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে দর ধরে রাখলে পুঁজিবাজারে দরপতন হলেও ১০ থেকে ২০ পয়েন্টের মধ্যে ওঠানামা করবে। যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরির পাশাপাশি পুরো শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। কিন্তু এ সংক্রান্ত বিধিমালা থাকলেও এখন পর্যন্ত বাজার সৃষ্টিকারী তৈরি হয়নি।

জানা গেছে, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন(বাজার সৃষ্টিকারী) বিধিমালা,২০০০ আইনে বাজার সৃষ্টিকারীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো অনুমোদিত সিকিউরিটির তারল্য ও উপযুক্ত মুল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উহার ক্রয় বিক্রয় নিমিত্তে উহার গভীরতাসহ ক্রমাগত উভয় দর উল্লেখ করা। এই আইনের আওতায় কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্টক ডিলার বা স্টক ব্রোকার বিএসইসি থেকে সনদ পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে।

বিএসইসির নিবন্ধন প্রাপ্ত বাজার সৃষ্টিকারীরা সর্বোচ্চ সততা, বিশ্বস্ততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বাজার সৃষ্টিকারীরা কাজকর্ম পরিচালনা করবে। প্রত্যেক বাজার সৃষ্টিকারী এক বছরের জন্য সনদ পাবেন।

তাদের সব ধরনের হিসাব দশ বছরের জন্য সংরক্ষণ করবেন। এছাড়া অনুমোদিত বাজার সৃষ্টিকারী সিকিউরিটির বা শেয়ারের তারল্য ও উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিবে। বাজারের আচরণের প্রেক্ষিতে উহার ভূমিকা নির্ধারণ করিবে।

এছাড়া বাজার সৃষ্টিকারী বিধি মালার  ৮(২)এর ক উপ-ধারায় বলা হয়েছে ‘ক্রয়াদেশ মূল্য এবং বিক্রয় প্রস্তাব মূল্য সন্নিহিত সময়ে একই হইতে পারবে না ।  ঘ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ক্রয়াদেশ ও বিক্রয় আদেশ প্রস্তাব মূল্য পূর্বোক্ত ক্রয়াদেশ মূল্য ও বিক্রয়াদেশ মূল্য এর চাইতে পাঁচ শতাংশের কম বা বেশী হইতে পারিবে না। ঙ ধারায় বলা হয়েছে, কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত টাকার সমপরিমাণ সিকিউরিটি বা শেয়ার প্রতিদিন লেনদেন করিতে হইবে। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সিকিউরিটির লেনদেন করতে পারবে বাজার সৃষ্টিকারীরা আইনে উল্লেখ রয়েছে।

এক্ষেত্রে প্রতিটি লেনদেনের তথ্য তিরিশ মিনিট ট্রেডিং মনিটরে অন্তত তিরিশ মিনিট প্রচার করতে হবে। বাজার সৃষ্টিকারীর মূলধনের পরিমাণ কমিশনের জারী করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। এই মূলধনের ওপর নির্ভর করবে কয়টা সিকিউরিটি বা শেয়ার লেনদেন করতে পারবে। এছাড়া একটি শেয়ারের জন্য কয়টা বাজার সৃষ্টিকারী থাকতে পারবে সেটাও নিধারণ করবে বিএসইসি। স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে নির্ধারিত পৃথক ট্রেডিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বাজার সৃষ্টির জন্য কোনো অনুমোদিত সিকিউরিটি ক্রয় বিক্রয় করতে পারবে। বিএসইসি  স্টক এক্সচেঞ্জ বা বাজার সৃষ্টিকারী নিজ উদ্যোগে প্রনীত তালিকা তৈরি করবে। তবে সেটা অবশ্যই বিএসইসির অনুমোদন লাভ করতে হবে।

এ ব্যাপারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক মো: শাকিল রিজভী শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মার্কেট মেকার রয়েছে এবং তারা বাজার স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে এ সংক্রান্ত আইন থাকলেও মার্কেট মেকার নেই। তবে সংকট মোকাবেলায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মার্কেট মেকার তৈরি করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.